ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসা এবং চ্যালেঞ্জ

করোনা নামের একটা ছোট ভাইরাস এই মুহুর্তে পুরো পৃথিবী অচল করে দিয়েছে।যুগে যুগে অনেক কিংবদন্তি জীবানু আমাদের মাঝে এসেছে। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে বর্তমান শতাব্দী তে বহু এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিভাইরাল ড্রাগ আবিষ্কার করছে গবেষকরা।

তাছাড়া এইসব রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে ভ্যাকসিন বা টিকা। একটা বিষয় আমাদের ভেবে দেখতে হবে, কি কারনে ভাইরাল ইনফেকশন এর চিকিৎসা এত জটিল। বাজারে অনেক ধরনের এন্টিবায়োটিক ড্রাগ পাওয়া যাবে যেগুলো খুব সহজে ব্যাক্টেরিয়া জনিত ইনফেকশন থেকে আমাদের সারিয়ে তোলে। কিন্তু এগুলো ভাইরাস এর বিরুদ্ধে কার্যকর নয়।বরং বলতে হবে একটা ভাইরাস এর ঔষধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার অধিক চ্যালেঞ্জিং।

ব্যাকটেরিয়া অতিক্ষুদ্র এককোষী জীব যাদের শক্ত কোষ প্রাচীর আছে। এরা নিজেদের প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম। তীব্র গরম আর ঠান্ডা আবহাওয়াতে টিকে থাকে। জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে ধারণা করা হয় প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর ধরে ব্যাক্টেরিয়া এই পৃথিবীতে আছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে বেশিরভাগ ব্যাক্টেরিয়া ক্ষতিকারক নয় বরং রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর সাথে যুদ্ধ করে। মনে করা হয় মাত্র ১% এর কম ব্যাকটেরিয়া  মানুষের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।

শরীরে যে অংশে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে সেখানে রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়।আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এন্টিবডি ব্যাক্টেরিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে তাদের ধংশ করে। তাছাড়া এন্টিবায়োটিক খুব সহজে ব্যাক্টেরিয়ার কোষ প্রাচীর এবং প্রোটিন সংশ্লেষণ বন্ধ করে দিতে পারে। কিছু এন্টিবায়োটিক জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল তৈরি হতে বাধা দেয়। যদিও বর্তমানে এইসব এজেন্ট এর সঠিক ব্যবহার না করার ফলে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে কিছু ব্যাক্টেরিয়া।

আগেই বলেছি এন্টিবায়োটিক সব ধরনের ভাইরাস এর বিরুদ্ধে অকার্যকর। ভাইরাস এর জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ডিএনএ অথবা আরএনএ থাকে যেটি প্রোটিন দিয়ে আবৃত। এরা পোষক দেহের উপর নির্ভরশীল কারন এদের রাইবোজোম থাকেনা এবং প্রোটিন তৈরি করতে পারে না।ভাইরাস হোস্ট সেলকে কাজে লাগায়। জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল প্রবেশ করায় পোষক দেহে আর পোষক দেহের সাহায্যেই বংশবিস্তার করে। একবার আক্রান্ত হওয়ার পর হোস্ট সেল জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এর নির্দেশ অনুযায়ী শতশত ভাইরাস সৃষ্টি করে।

আমরা বলতে পারি ভাইরাস হচ্ছে জীব দেহের মধ্যে একধরনের চোর। এরা ব্যাক্টেরিয়ার তুলনায় অণুমাত্র। ভাইরাস এর একটা সুপ্তকাল শেষ হলে রোগের উপসর্গ প্রকাশ পায়। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভাইরাস সনাক্ত করার সাথে সাথে কিছু স্পেশাল এন্টিবডি তৈরি করে যারা ভাইরাস এর সাথে যুক্ত হয় আর সংক্রামক হতে বাধা দেয়। হোস্ট সেল এক ধরনের প্রোটিন নিঃসরণ করে যা ভাইরাস এর প্রতিরূপ সৃষ্টি করতে বাধা দেয়। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। ভাইরাস এর সাথে যুদ্ধ করার সৈন্য তৈরি করতে করতে এরা এক দেহ থেকে অন্য দেহে ছড়িয়ে পড়ে।যেহেতু ভাইরাস হোস্ট সেল এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে তাই এন্টিবডি সহজে এদের খুজে বের করতে পারে না।যখন ভাইরাস সংখ্যা বৃদ্ধি করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত কোষের কিছু পরিবর্তন হয়।যখন খুব শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠিত হয় তখন ভাইরাস এর সাথে সাথে পোষক কোষেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।এন্টিবায়োটিক এর ক্ষেত্রে একই উপাদান বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। উদাহরণ হিসেবে পেনিসিলিন এর কথা বলতে পারি। কিন্তু একই উপাদান বিভিন্ন ভাইরাস এর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যে কিভাবে নোভেল করোনা ভাইরাস রুপ বদল করেছে।এমনকি ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কার এর পরও ভাইরাস তার রুপ বদল করতে পারে। ভাইরাস বিস্তার এর সময় পোষক দেহ থেকে কিছু জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল গ্রহন করে। এভাবে এক প্রাণী থেকে অন্য প্রানীতে ছড়ানোর সময় ভয়ংকর হয়ে উঠে। ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে, ভাইরাস প্রোটিন কিছু ক্ষেত্রে দুর্বল ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। যাদের ইমিউনিটি খুব দুর্বল তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কোন মহামারী ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে একটা সমাজের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। হার্ড ইমিউনিটি গঠন করতে হবে ভাইরাস এর বিরুদ্ধে। ছোটখাটো ভাইরাল ইনফেকশন কোন চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যায়।মনে রাখতে হবে কিছু ওষুধ উপসর্গ উপশম করতে পারে। কিন্তু অনেক ভাইরাস আছে যাদের শরীর থেকে পুরোপুরিভাবে দূর করা সহজ কাজ না।উদাহরণ হিসেবে এইচ আইভি ভাইরাস এর কথা বলতে পারি।

তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। কোন ওষুধ মুদিখানার পন্যের মত ব্যবহার করা যাবে না।আমাদের আরো ভেবে দেখতে হবে। ছোট জীবাণু মানুষের ফুসফুস দখল করে নিচ্ছে। আমার মনে হয়ে এই বিষয়ে আমাদের আরো গবেষনা করা উচিৎ। সবাইকে সুযোগ করে দিতে হবে নতুন কিছু করার নতুন ভাবে চিন্তা করার।

ভাইরাস এর ছড়িয়ে পড়া আটকাতে হবে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী , ফার্মেসী বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *