ফার্মাসিস্ট কেন প্রয়োজন ?

ফার্মাসিস্ট কথাটা সবার জানা। কিন্তু সঠিকভাবে ফার্মাসিস্ট কথাটা কেউ জানেনা। সবাই মনে করেন ফার্মাসিস্ট মানে ঔষধের দোকানদার বা বাজারে ঘুরে ঘুরে যারা ঔষধ বিক্রি করেন বা অর্ডার কাটেন। আমাদের দেশে কতিপয় লোক ছাড়া কেউ সত্যিকার অর্থে জানেনা ফার্মাসিস্ট কে এবং তাদের কাজ কি।

আসুন আমরা দেখে নেই ফার্মাসিস্ট এর কাজগুলো এবং আমাদের দেশের মানুষের জন্য ফার্মাসিস্ট কি কি কাজ করে থাকেন এবং ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন কেন।

ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন কেন? 

ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন ততদিন যতদিন

  • ঔষধ গবেষনা এবং প্রস্তুতকরণ প্রয়োজন হবে।
  • ঔষধের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং পরীক্ষাকরণের প্রয়োজন হবে।
  • কোন ঔষধ কোন পরিবেশে(ক্লাস) বানানো হবে তা জানতে হলে।
  • কোন কোন মেডিসিন আলো থেকে দূরে রাখতে হবে বা  কম আলোতে প্রস্তুতকরন করতে হয় কেন তা জানতে হলে।
  • ঔষধের ডিজাইন করার প্রয়োজন হবে।
  • কত তাপমাত্রা ঔষধ সংরক্ষণ করতে হবে তা জানার জন্য প্রয়োজন হবে ।
  • ঔষধের কার্যকারীতা সম্পর্কে জানার জন্য প্রয়োজন হবে ।
  • ঔষধের ফার্মাকোলজি জানার জন্য প্রয়োজন হবে ।
  • ঔষধের থেরাপিউটিকস ক্লাস কি তা জানার জন্য প্রয়োজন হবে ।
  • ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানার জন্য দরকার হবে
  • ঔষধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেবার জন্য প্রয়োজন হবে ।
  • ঔষধের উপাদান ভিত্তিক একটির সাথে অন্য ঔষধের ইন্টারেকশন জানার জন্য প্রয়োজন হবে ।
  • ঔষধের রুট অফ এডমিনিস্ট্রেশন জানার জন্য প্রয়োজন হবে ।
  • প্রেগন্যান্ট ক্যাটাগরি এ বি সি ডি অনুযায়ী কোন ঔষধ খাওয়া যাবে বা যাবেনা জানতে প্রয়োজন হবে ।
  • বয়সভিত্তিক ঔষধের ডোজ জানার জন্য প্রয়োজন হবে ।
  • কোন কোন ঔষধ একসাথে খাওয়া যাবেনা তা জানতে হলে।
  • কোন ঔষধ খাওয়ার পরে কোন খাবার খাওয়া যাবে না তা জানতে হলে।
  • কোন কোন ঔষধ ব্যান্ড করা হয়েছে এবং কেন করা হয়েছে তা জানতে প্রয়োজন হবে ।
  • কোন ঔষধ ওটিসি আর কোন ঔষধ প্রেসক্রিপসনের আওতাধীন তা জানতে হলে।
  • কোন ঔষধ প্রেসক্রিপসন ছাড়া বিক্রয়যোগ্য নয় তা জানতে হলে।
  • কোনটি ভেজাল আর কোনটি আসল ঔষধ তা চিনতে হলে।
  • কোন কোন ঔষধ কখন খেতে হবে বা কোন কোন ঔষধ খাওয়ার মাঝে খেলে ভালো হবে বা কোন কোন ঔষধ খাওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে জানার জন্য প্রয়োজন হলে।
  • কত ডিগ্রি জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট নাকি সাপোসিটরি দিতে হবে তা জানতে হলে ।
  • কোন এন্টিবায়োটিকস এর পর কোন এন্টিআলসারেন্ট খাওয়া যাবেনা বা খেলে কি সমস্যা হবে জানার প্রয়োজন হলে।
  • প্রেগন্যান্ট সময় ক্যাটাগরি অনুযায়ী কোন এন্টিআলসারেন্ট খাবে তা জানার জন্য প্রয়োজন হলে।
  • মেডিসিনের কন্ট্রাইন্ডিকেশন জানতে হলে।
  • ফার্মেসিতে কোন মেডিসিন কত তাপমাত্রাতে সংরক্ষণ করতে হবে তা জানতে হলে ।
  • ইন্সুলিন ফ্রিজ থেকে বের করার পর কত সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যেতে পারে তা জানতে হলে।
  • এক একটা মেডিসিন দেহের কোথায় কাজ করে বা কোন রোগের জন্য কাজ করে সেইটা জানতে হলে ।
  • কোন নতুন মহামারী দেখা দিলে যখন কোন ঔষধ থাকেন সেই মহামারীকে রোধ করার জন্য তখন ফার্মাসিস্ট সেই মহামারী রোধে ঔষধ নিয়ে গবেষণা করেন এবং নতুন ঔষধ আবিস্কার হয়ে থাকে।

এরকম আরও অসংখ্য ঔষধ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকাণ্ড জানার জন্য ফামাসিস্ট প্রয়োজন।

হসপিটালে ফার্মাসিস্ট প্রয়োজন কেন ? 

হসপিটালে ফার্মাসিস্ট যে কাজগুলো করে থাকেন

  • ডাক্তারের সাথে ফার্মাসিস্ট মিলে একটা টিম ওয়ার্ক করে থাকেন।
  • ওয়ার্ডে রোগীদের ভর্তি ও রিলিজ থেকে শুরু করে ডিপোতে ঔষধ ম্যানেজমেন্ট ফার্মাসিস্ট করে থাকেন।
  • রোগীদের সাথে অনবরত ঔষধ নিয়ে কাউন্সিল করে থাকেন ।
  • প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী ঔষধের ডোজ বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন ।
  • সেবিকা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে তথ্য ও মেডিসিন বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের উপদেশ প্রদান করে থাকেন।
  • কোন ঔষধ রোগী কখন খাবেন কতটুকু খাবেন সব বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন ।
  • ডাক্তার ঔষধের জেনারিক ফর্ম ব্যবহার করলে ফার্মাসিস্ট রোগীদের কোন ব্র্যান্ড খাবে সেইটা লিখে দিয়ে থাকেন।
  • কোন ঔষধের সাইড ইফেক্ট দেখা দিলে ফার্মাসিস্ট ডাক্তারের সাথে কথা বলে সেই বিষয় হ্যান্ডেল করে থাকেন।
  • কোন ঔষধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে থাকেন।
  • রোগীদের ভর্তি থেকে শুরু করে ডিসচার্য পর্যন্ত ফার্মাসিস্ট ঔষধ বিষয়ে কাউন্সিলিং করে থাকেন।
  • কোন ঔষধ কখন খেতে হবে কিভাবে নিতে হবে সকল বিষয়ে সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করেন রোগীদেরকে।
  • কোন ঔষধের সাথে প্রেসক্রিপসনে উল্লেখিত অন্য কোন ঔষধের ইন্টারেকশন থাকলে ডাক্তারের সাথে ফার্মাসিস্ট আলোচনা করে ঔষধ পরিবর্তন করে দেন।

আরও অসংখ্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন।

তাই মনে রাখতে হবে ফার্মাসিস্ট কোন ঔষধের দোকানদার নয় বা সেলসম্যান নয় বা ঔষষধের দোকানে দোকানে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘুরে ঘুরে সেলস করা ব্যাক্তি নয়।ফার্মাসিস্ট মানেটা বুঝুন। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিষয়ে সম্মান ডিগ্রী লাভ করে যারা ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে এ-গ্রেড রেজিস্ট্রেষন সার্টিফিকেট অর্জন করেন তারাই বাংলাদেশের এক একজন ফার্মাসিস্ট বা প্রথম শ্রেণীর ঔষধ গবেষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

ফার্মাসিস্টদের সঠিক জায়গাগুলো যেমন ফার্মাসিউটিক্যালস্, হসপিটাল, কমিউনিটি বেসড, ক্লিনিক্যাল, ল্যাবরেটরি বা গবেষণা তৈরি করে দিলে দেশের ঔষধ এবং চিকিৎসা দুটি পৃথিবীতে সমাদৃত হবে এবং দেশ লাভবান হবে । সবার আগে দেশ আর দেশ সেবাতে ফার্মাসিস্ট একটা নিঃস্বার্থ সেবাদাতার নাম।

বিশেষ করে দেশের এই চরম সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফার্মাসিস্টগন ফার্মাসিউটিক্যালস্ এ দিনরাত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে যাতে দেশে ঔষধের ঘাটতি দেখা না দেয়। অনেকেই ফার্মেসিতে বসে রোগীদের সাথে অনবরত ঔষধ নিয়ে কাউন্সিল করে যাচ্ছে। ফার্মাসিস্টদের কাজের একটা বড় অংশ হসপিটালে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করা। হসপিটালে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সবাই মিলে একটা পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা রোগীদের দিয়ে থাকেন। প্রত্যেকের কাজ আলাদা। এদের মধ্যে একজন অনুপস্থিত থাকা মানে রোগীদের পরিপূর্ণ সেবাদান হবে না।

তাই আজ করোনা মোকাবিলার জন্য দেশের মানুষের জন্য পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হসপিটালে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ জরুরী।

লেখক: প্রাক্তন ডেপুটি ম্যানেজার , এমএসটি হেলথকেয়ার এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *