গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা ওষুধ বিজ্ঞানী,টেকনোলজিস্ট নয়..

তানভীর আহমেদ রাসেল

0

প্রতি বছর প্রায় তের থেকে চোদ্দ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। এর মধ্যে মাত্র ৬৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি যুদ্ধে সফল হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যেই প্রথম সারির র‍্যাংকিংয়ে থাকা বেশিরভাগ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রথম চয়েজ থাকে ফার্মেসী বিভাগ। আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও অন্য বিভাগের চেয়ে অনেক মোটা অংকের টিউশন ফি দেওয়ার পাশাপাশি মেধার জানান দিয়ে জায়গা করে নিতে হয় ফার্মেসী বিভাগে ।

তাহলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় ফার্মেসী বিভাগই কেন? কারণ ফার্মেসী স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। ফার্মেসীতে চার কিংবা পাঁচ বছর মেয়াদি কোর্স করা গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের বলা হয় ওষুধ বিজ্ঞানী। শুধু ওষুধ বিশেষজ্ঞই নয়, ফার্মাসিস্টদের কাজের মধ্যে রয়েছে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা প্রেসক্রিপশন পুনঃপরীক্ষণ,
ওষুধ কোন রোগের জন্য, কী কী উপাদান কী পরিমাণে মিশিয়ে ওষুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ, ওষুধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য বিতরণ এবং এর সঠিক ব্যবহার ও প্রভাব নিশ্চিতকরণ, চিকিৎসাগত প্রয়োগ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও রোগীকে পরামর্শ প্রদান।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মতে, উন্নত স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করার জন্য ফার্মাসিস্টদের ৫৫ শতাংশ কমিউনিটি ফার্মেসি, ৩০ শতাংশ হসপিটাল ফার্মেসি, ৫ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং, ৫ শতাংশ সরকারি সংস্থায় এবং ৫ শতাংশ অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের কাজের পরিধি অত্যন্ত সীমিত। কমিউনিটি কিংবা হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের কাজের ক্ষেত্র এখনো তৈরী হয়ে উঠেনি। ফলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও চলমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতেও হিমশিলা খাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমতবস্থায় দেশের সবমহল থেকে গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের জোর দাবি উঠেছে।

সম্প্রতি একটি টকশোতে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ প্রসঙ্গে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ফার্মাসিস্টরা ফার্মেসীতে কাজ করে এবং তাঁরা মেডিকেল টেকনোলজিস্টের মতই। মাননীয় মন্ত্রীর ফার্মাসিস্টদের প্রতি এমন দৃষ্টিভঙ্গিতে ফুঁসে উঠেছে ফার্মেসী বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থী, নিবন্ধিত গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ও দেশের সচেতন জনসাধারণ। তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকের দেশের অন্যতম মেধাবী সন্তান গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের মেধা, প্রজ্ঞা ও সক্ষমতাকে গভীর ভাবে অনুধাবন করে অতি দ্রুত হাসপাতাল ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োগের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি। তা নিশ্চিত করতে পারলেই হাতের নাগালে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চয়তা পাবে দেশের জনসাধারণ। নতুন সূর্য উদিত হবে স্বাস্থ্যখাতে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

মতামত দিন
Loading...