রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন ফার্মাসিস্টদের সেবা থেকে!

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস,২৫ সেপ্টেম্বর :ওষুধের বিশ্বে একটি দিন। ২০১০ সাল থেকে দিবসটি পালন শুরু হলেও বাংলাদেশে এই দিবস পালন শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে।“Pharmacy strengthening health systems”প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও ২৫ সেপ্টেম্বর পালন করা হচ্ছে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস।

এতো আয়োজনের আড়ালে অপূরনীয় ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে আজ! চিকিৎসা ব্যবস্থার এই তথ্য সম্পর্কে আমরা অবগত যে, ডাক্তার রোগীকে দেখে প্রেসক্রিপশন করেন, ফার্মাসিস্ট ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মূল্যায়নের মাধ্যমে রোগীকে ওষুধ সম্পর্কে অবহিত করেন এবং নার্স ফার্মাসিস্টদের নির্দেশিত পন্থায় রোগীকে সেবা করেন।

বলা যেতে পারে বিদেশে আদর্শ চিকিৎসাব্যবস্থা প্রণালী মেনে চলা হয় কিন্তু আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট বেশ ভিন্ন প্রকৃতির! রোগী প্রথমেই আসে ডাক্তারের কাছে, ডাক্তার বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষা দেন, তারপর ল্যাব টেকনিশিয়ানদের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। রোগী প্রাপ্ত রিপোর্ট ডাক্তারকে দেখান। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন করেন। নার্স ডাক্তারের প্রদানকৃত প্রেসক্রিপশনের ওষুধ রোগীকে সেবন করান।আমাদের দেশে হসপিটাল ফার্মাসিস্টদের কাজটা মূলত নার্সরাই সম্পন্ন করে ফেলে! এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিভাবে স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি কল্পনা করতে পারি!কিভাবে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারি! উন্নত দেশগুলোতে রোগীদের হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করা একটা অন্যতম কাজ ফার্মাসিস্টদের। কোন রোগী কখন রিলিজ হবে, রিলিজ সামারি পর্যালোচনা করা যাতে প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী সঠিক ওষুধ রোগীকে দেয়া হয়েছে কিনা, রোগীর কোন সাইড এফেক্ট আছে কিনা, ওষুধের কারণে কোন নতুন সাইড এফেক্ট দেখা দিয়েছে কিনা সব বিষয়ে পর্যালোচনা করার পর রোগীর রিলিজ নিশ্চিত করে থাকেন ফার্মাসিস্ট।ডোজেজ ফর্ম কিভাবে কতটুকু করে কোন রুটে রোগী নিবেন সব বিষয়ে রোগীকে বুঝিয়ে দেন একজন হসপিটাল ফার্মাসিস্ট।

হাসপাতলে নকল ভেজাল ওষুধ সরবরাহের ব্যাপারে তদারকির দায়িত্ব একজন ফার্মাসিস্টের। একটি হাসপাতালে হসপিটাল ফার্মাসিস্টের গুরুত্ব এত থাকা সত্তেও আমাদের দেশে কেন হসপিটাল ফার্মাসিস্টদের ব্যবস্থা চালু করা হয়না? সরকারি হাসপাতালগুলোতেও যদি ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে আমাদের দেশের সর্বস্তরের রোগীদের জন্য পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার এক বিশেষ দিক উন্মোচিত হবে। কেননা ফার্মাসিস্টরা তাদের ফার্মাকোলজিক্যাল, টক্সিকোলোজিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি, বায়োফার্মাসিটিকস্ সমৃদ্ধ জ্ঞান তাদের বি ফার্ম/এম ফার্ম ক্লাসে শিখে আসেন এবং পরবর্তী সময়ে ইন্টার্নি/ইনপ্যাল্ট ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে রোগীর স্বাস্থ্যসেবায় নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। রোগীর ওষুধবিষয়ক জিজ্ঞাসা যেমন ডোজ বা মাত্রা, মাত্রার সমন্বয়, ওষুধ সেবনের নিয়মাবলি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ ওষুধের যাবতীয় নির্দেশাবলি রোগীকে দিয়ে থাকেন।

আশা করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্যবিষয়ক নীতিনির্ধারকরা হাসপাতালে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেবেন কেননা হসপিটাল ফার্মাসিস্টবিহীন হাসপাতালের সেবার মান নাজুকই থেকে যাবে! স্বাস্থ্যসেবার প্রটোকলে ফার্মাসিস্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারলে রোগীরা সবসময় বিশ্বমানের সেবা থেকে বঞ্চিত থাকবে লেখক

লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ।.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *