করোনা ভাইরাস : কর্মক্ষেত্রে আমাদের করনীয়

করোনা ভাইরাসের কারনে সারা পৃথিবী আজ থমকে গিয়েছে। সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে । সাথে সাথে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে কর্মক্ষেত্র সংকোচনের । একজন আক্রান্ত হলে কর্মক্ষেত্রের সকল কে সাথে থাকা সবাই কে আলাদা থাকতে হচ্ছে । কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং তৈরি হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট ।

করোনার বিরুদ্ধে সচেতন হতে আমাদেরকে কর্মক্ষেত্রে কি কি করতে পারি ? কর্মক্ষেত্রকে কিভাবে কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ রাখতে পারি? চলুন জেনে নেয়া যাক

যে সকল কর্মক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েনি সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তাদের নিজ কর্মক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে –
১। কর্মস্থল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর কিনা তা নিশ্চিতকরণঃ জীবাণুনাশক দিয়ে প্রে ও টেবিলের পৃষ্ঠতল এবং নিত্য ব্যবহার্য্য বস্তু (যেমন টেলিফোন, কিবোর্ড) নিয়মিত মুছতে কারণ পৃষ্ঠতলে থাকা জীবাণু দ্বারা সহজে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
২। কর্মচারী ঠিকাদার এবং গ্রাহকদের নিয়মিত যথাযথভবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করানোঃ সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া কেননা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করলে ভাইরাস ধ্বংস এবং কোভিড-১৯ বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে।
৩। কর্মক্ষেত্রের প্রবেশপথে বা আশেপাশে সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা করা।
৪। সঠিকভাবে হাত ধোয়ার নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট পোস্টার দৃষ্টিগোচর স্থানে প্রদর্শন করা এবং স্থানীয় জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিন।
৫। হাত ধোয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য পেশাদার জনস্বাস্থ্য কর্মকতার দিকনির্দেশনা, বিভিন্ন সভায়, বিভিন্ন সভায় প্রদত্ত সচেতনতামূলক বার্তা এবং ইন্টারনেটে ব্যবহৃত গ্রহনযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্যাদি ব্যবহার করা।
৬। কর্মী, ঠিকাদার এবং গ্রাহকদের সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৭। কমক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা- – শ্বাস প্রশ্বাসজনিত পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে পোস্টার প্রদর্শন। কেননা, শ্বাস প্রশ্বাসের পরিচ্ছন্নতা কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ করে। – শ্বাস প্রশ্বাসজনিত পরিচ্ছনতায় উৎসাহিত করার জন্য কর্মক্ষেত্রে পেশাদার জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তার দিকনির্দেশনা, বিভিন্ন সভায় প্রদত্ত সচেতনতামূলক বার্তা এবং ইন্টারনেটে ব্যবহৃত গ্রহনযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্যাদি ব্যবহার করা। – কর্মস্থলে কর্মচারীদের বিশেষ করে যাদের সর্দি বা কাশি আছে তাদের জন্য ফেস মাস্ক/কাগজের টিস্যু/রুমাল সহজলভ্য করা ও তাদের ব্যবহৃত ফেসমাস্ক /কাগজের টিস্যু/রুমালের যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং ধ্বংশ করা নিশ্চিত করা।
৮। জরুরী পেশাদারী কাজে ভ্রমণে যাওয়ার আগে কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের “ভ্রমণ সম্পর্কিত জাতীয় নির্দেশনা” জেনে নেওয়ার পরামর্শ দেয়া।
৯। কর্মচারী, ঠিকাদার এবং সেবা গ্রহণকারীদের এই মর্মে অবহিত করা যে, যদি কোনভাবে কোভিড-১৯ তাদের নিজ নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে (হালকা কাশি বা স্বল্প জ্বর ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার সামান্য বেশি হয়) তাহলে তাদেরকে বাড়িতেই থাকতে হবে বা বাড়িতে থেকেই কাজ করতে হবে। এসময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণ ঔষধ যেমন প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসপিরিন ইত্যাদি ঔষধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
১০। যদি কারো কোভিড-১৯ এর খুব সাধারণ লক্ষণও দেখা দেয় তাহলে তাকে অবশ্যই সার্বক্ষণিক ঘরের মধ্যে থাকতে হবে। একথা দৃঢ়ভাবে প্রচার করতে হবে।
১১। কর্মস্থলে উপরোক্ত বার্তা সম্বলিত পোস্টার প্রদর্শন করুন এবং অন্যান্য মাধ্যমে যেমন স্থানীয় যোগাযোগের চ্যানেলগুলিতে (ক্যাবল অপারেটর/কমিউনিটি রেডিও) প্রচার করুন।
১২। স্থানীয় জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত এবং প্রস্তুতকৃত বার্তা প্রচারের সামগ্রীসমূৃহের ব্যবহার নিশ্চিত করুন। * সংবেদনশীল এই সময়ে, কর্মীদের অসুস্থাতাজনিত ছুটির অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে। উপরে উল্লেখিত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব

কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়লে কর্মক্ষেত্র প্রস্তুতকরণঃ

কর্মক্ষেত্রে কোন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে কি করণীয় তার একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে; কর্মস্থলেঃ
• অসুস্থ ব্যক্তিকে এমন কোন স্থানে রাখতে হবে যেখানে তারা অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন (Isolation) থাকবে: সেই সাথে অসুস্থ ব্যক্তির সাথে যথাসম্ভব কম সংখ্যক মানুষ যেন যোগাযোগ করে নিশ্চিত করতে হবে এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
•  কর্মস্থলে অন্যান্য কুঁকিপর্প ব্যক্তিদের কীভাবে চিহ্নিত করা যায় তা বিবেচনা করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কেউ নিগ্রহ বা বৈষম্যের শিকার না হয়; সম্প্রতি কোতিড-১৯ আক্রান্ত অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন এমন কর্মীদের মধ্যে যারা গুরোতরো অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ এবং বেশি বয়স) তাদেরকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অগ্রাধিকার দিতে হবে। • কোতিড-১৯ প্রতিরোধে আপনার করা পরিকল্পনা সম্পর্কে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং প্রয়োজনে তাদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
• দপ্তর বা সংস্থায় নিয়মিত টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুভাব ঘটলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গণপরিবহন এবং জনসমাগম এড়াতে জনগণকে পরামর্শ দিতে পারে; সেক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যাবসা বা কর্মক্ষেত্রকে সচল রাখতে সহায়তা করবে।
• কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান যে এলাকায় আবস্থিত সেখানে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ঘটলে তার জন্য একটি দুর্যোগকালীন ব্যাবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যা- – প্রণয়নকৃত দুর্যোগকালীন ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সমাজ বা কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়া কোতিড-১৯ মোকাবেলায় সামর্থ করবে। অন্যান্য জরুরী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থার ক্ষেত্রেও এই পরিকল্পনা প্রযোজ্য।

– পরিকল্পননাটি এমন হতে হবে যেন অযথা স্থানীয় চলাচলে প্রতিবন্ধকতার জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী, ঠিকাদার এবং সরবরাহকারীর অনুপস্থিতেও প্রতিষ্ঠানটি সচল থাকে। – পরিকল্পনাটির বিষয়ে আপনার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের জানাতে হবে এবং দুর্যোগকালে তারা কি করবে আর কি করবে না তা তাদেরকে অবহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে মুল বিষয়গুলোর উপরে অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে।

– পরিকল্পনাটিতে যেন কোভিড-১৯ আক্রান্তের মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজর উপর কি প্রভাব পরে সে বিষয়টি আলোচিত হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। কোতিড-১৯ সম্পর্কিত সঠিক তথ্য প্রাপ্তি এবং সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

– যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জরুরীক্ষেত্রে নিজস্ব কর্মীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের বিষয় নিশ্চিত করতে সমর্থ নয় তাদেরকে অগ্রিম স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে যৌথ পারস্পরিক সহযোগীতার পরিকল্পনা করতে হবে;

– এই পরিকল্পনা তৈরির জন্য স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ সহযোগীতা প্রদানেরও প্রস্তাব দিতে পারে। মনে রাখা জরুরী: কোভিড-১৯ এর জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময় এখনই। এক্ষেত্রে সাধারণ সতর্কতা এবং সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ কোতিড-১৯ প্রতিরোধে বড় ভুমিকা রাখতে পারে। অবিলম্বে নেয়া সঠিক পদক্ষেপ আপনার কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবে।

corona viruscorona virus workplace safetycovid 19করোনা ভাইরাসকরোনা ভাইরাস কর্মক্ষেত্রে আমাদের করনীয়করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে করণীয়কর্মক্ষেত্রে করনীয়কোভিড-১৯
Comments (০)
Add Comment