জাপানের মেক্সট (MEXT) বৃত্তি কথন : পর্ব ২

নূর-আল-আহাদ

চলুন ২য় পর্ব শুরু করা যাক

জাপানের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন :
মেক্সট এ আবেদনের যে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করে তা হচ্ছে ভার্সিটি নির্বাচনের উপর।
জাপানে প্রায় ৭০০ এর মতো ভার্সিটি রয়েছে। আবার এখানের ভার্সিটিগুলো ৩ ধরণের – National University, Prefectural Universityএবং Private University।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিগুলো (national university) হচ্ছে সাধারণত অনেক বড় এবং এগুলোতে গবেষণাও হয় অনেক বেশি।
জাপানে প্রায় ৮৬টি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রয়েছে উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্য অনুযায়ী।
তাই আমি বলবো যদি জাপানে আসতেই চান তাহলে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিগুলোতে আসাই ভালো।
কিন্তু তার মানে এই না যে বাকি ইউনিভার্সিটিগুলোর মান খারাপ। জাপানে কিন্তু প্রতিটা ভার্সিটিই একটি মান বজায় রাখে যা আমাদের দেশের ভার্সিটিগুলোর থেকে অনেক বেশি।

জাপানে সুযোগ কেমন ?
আর একটি জিনিস হচ্ছে জাপানে সাধারণত এমবিএ কিংবা ব্যবসায় সংক্রান্ত ডিগ্রীগুলো খুব কমই কারণ জাপানে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে প্রচুর গবেষণা হয়।
তবে ব্যবসায় নিয়ে যারা পড়তে চান তাদের জন্য পরামর্শ হলো অর্থনীতি নিয়ে পড়া।
তবে মেক্সট পেয়ে যারা পড়াশোনা করতে আসেন জাপানে তাদের ৯৮ পার্সেন্টই বিজ্ঞান কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিষয়গুলোতে পড়াশোনার জন্য আসেন।
এই বিষয়টি আন্ডারগ্রাজুয়েট, মাস্টার কিংবা পিএইচডি যে কোনো পর্যায়ের জন্য প্রযোজ্য।

মেক্সট বৃত্তির আবেদন নিয়ে প্রশ্নোত্তর : 
মেক্সট স্কলারশিপ নিয়ে আমাদের অনেকেরই অনেক রকমের প্রশ্ন রয়েছে। মোটামুটি যাবতীয় কমন প্রশ্নগুলোর উত্তর নিচের পয়েন্টগুলোর মাধ্যমে পেয়ে যাবেন-

১। মেক্সট এ আবেদনের ক্ষেত্রে এসএসসি এবং এইচএসসির এর রেজাল্ট দরকার পরে। এই ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়ম হলো যাদের এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫ করে আছে তাদেরকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

২। অনেকে আবার লিখাপড়া কি ইংলিশ না জাপানিজ এ হবে তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন। ব্যাচেলর পর্যায়ে লিখাপড়া কেবলমাত্র জাপানিজ ভার্শনে হয়।
আর মাস্টার্স এবং পিএইচডি ইংলিশ ভার্শনে হয়।

৩। মেক্সট বৃত্তিতে আবেদনের যে বয়স সীমা দেয়া আছে তা মেনে আবেদন করতে হবে।

৪। মেক্সট বৃত্তির জন্য প্রার্থী বাছাই করার একটি স্ট্যান্ডার্ড মাধ্যম হচ্ছে পরীক্ষা নেয়া। এই পরীক্ষায় মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রার্থীদের ইংলিশ এবং জাপানিজ ভাষার উপর দক্ষতা যাচাই করা হয়।
এখন আপনার জাপানিজ জানা নাও থাকতে পারে কিন্তু নিয়ম মেনে পরীক্ষা আপনাকে দিতেই হবে।
ব্যাচেলর প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের ইংরেজি, জাপানিজ, বিজ্ঞান এবং গণিতের উপর পরীক্ষা দিতে হবে।
তবে ব্যাচেলর কিংবা আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়াশোনা কেবল জাপানিজ মাধ্যমেই।
বিগত দিনের পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে দেখতে পারেন –
https://www।studyjapan।go।jp/en/toj/toj0302e-32।html#১

৫। মাস্টার্স এবং পিএইচডি আবেদনের জন্য IELTS স্কোর থাকলে ভালো। কিন্তু না থাকলেও আমি বলবো আবেদন করে দেখতে পারেন। হয়তো আপনার কল আসতেও পারে।
আর ব্যাচেলর পর্যায়ে আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো ল্যাংগুয়েজ সার্টিফিকেট লাগবে না।

৬। আবেদনের ক্ষেত্রে কেবল notarized ফটোকপি দিলে হবে।

৭ । জাপানে মেক্সট এর ক্ষেত্রে ব্যাচেলর ডিগ্রী জাপানীজে এবং মাস্টার্স -পিএইচডি ইংলিশ ভার্সন এ পড়ানো হয়।
তবে এখন আবেদন করার জন্য আপনার জাপানিজ জানার দরকার নেই।
কারণ ব্যাচেলর জাপানিজ এ পড়ানো হয় বলে ওদের আগে ১ বছর জাপানিজ শিখানো হবে জাপানে আসার পর।
আর মাস্টার্স-পিএইচডি প্রার্থীদের এই রকম কোনো ঝামেলা নেই কারণ আপনারা পড়বেন ইংলিশ মিডিয়াম এ ।

৮। মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রার্থীদের জন্য মন্ত্রণালয়ের লিংকে আবেদন করতে হলে proposed research title লিখতে হয়।
এই খানে মূলত আপনি যে বিষয় নিয়ে (সম্ভাব্য) থিসিস এর টাইটেল লিখবেন।
পরে জাপানে আসার পর এই টাইটেল এর পরিবর্তন আপনি চাইলে করতে পারবেন আপনার সুপারভাইজার এর সাথে আলোচনা করে, চিন্তার কোনো কারণ নেই।

৯। ব্যাচেলরস এর শেষ বর্ষে যারা আছেন কিংবা ব্যাচেলর্স শেষ করেছেন কিন্তু ফলাফল হয় নি এবং মাস্টার্স এ জাপানে আবেদন করতে চান তারা আবেদন করতে পারবেন না কারণ আপনার ব্যাচেলর্স এর ফলাফল লাগবে এবং ডকুমেন্ট আবেদন করতে।

যারা মাস্টার্স শেষ বর্ষে আছেন কিংবা মাস্টার্স শেষ করেছেন কিন্তু ফলাফল হয় নি এবং পিএইচডি এর আবেদন করতে চান তারা এই বছর আবেদন করতে পারবেন না কারণ আপনার মাস্টার্স এর ফলাফল লাগবে এবং ডকুমেন্ট আবেদন করতে।

১০ । ফিল্ড অফ স্টাডি (field of study) এর মধ্যে তিনটি অপসন থাকে। সোশ্যাল সাইন্স এবং হুম্যানিটিজ এর মধ্যে ব্যবসায়, অর্থনীতি সহ সমাজবিজ্ঞানের সব বিষয়গুলো রয়েছে। বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিংর বিষয়গুলো আছে ন্যাচারাল সাইন্স এর মধ্যে।

১১। আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার ব্যাচেলর্স এ যে মেজর ছিল মাস্টার্সও সেই মেজর এ আবেদন করতে পারবেন। বাইরের মেজর গ্রহণযোগ্য নয়।
আবার পিএইচডিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ব্যাচেলর্স এবং মাস্টার্স এ যে মেজর ছিল সেই মেজর এ আবেদন করতে হবে।
যাদের ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স মেজর ভিন্ন তারা ব্যাচেলর কিংবা মাস্টার্স যে কোনো একটির মেজর এ আবেদন করতে পারবেন।

১২। আবার যারা মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য আসেন তাদের প্রথম ৬ মাস রিসার্চ স্টুডেন্ট হিসেবে থাকতে হয়। পরে আপনার কাজ এবং পাশাপাশি একটি পরীক্ষা (অনেক সময় এই পরীক্ষাটি দিতে হয় এবং পাসও করতে হয়) পাস করলেই আপনি মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি শুরু করতে পারবেন। আর পাস না করলে আপনাকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

আবার যারা ব্যাচেলর প্রোগ্রামে পড়াশোনার জন্য আসবেন তাদের অবশ্যই জাপান এক বছরের মধ্যে ভাষা শিখে পরীক্ষায় পাস করতে হবে না করলে দেশে ফেরত যেতে হবে।

সবশেষে মেক্সট স্কলারশিপ নিয়ে যারা জাপানে পড়াশোনা করতে আসেন বাংলাদেশ থেকে তাদের প্রায় সবাই দেশে চলে যান কিংবা অন্য দেশে মুভ করেন।

সাধারণত জাপানে চাকরি করার প্রবণতা নেই অনেকেরই কারণ ভাষাগত সমস্যা।আবার মেক্সট বৃত্তির অধীনে আপনি পাস করার পরই আপনাকে দেশে ফেরত যাবার জন্য টিকেট দিয়ে দেয়া হয়।
সবার সাফল্য কামনা করছি। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন। আর অন্যায়কে সর্বদা না বলুন। একে অন্যের সাহায্য করুন।

লেখক: মাস্টার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, জাপান)
ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষক (জাপান)

প্রথম পর্ব পড়ুন
MEXTআন্ডারগ্রাজুয়েটগবেষণাজাপানমেক্সট বৃত্তিস্কলারশিপ
Comments (০)
Add Comment