বাংলাদেশ ও অন্যান্য এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) আওতাভুক্ত দেশগুলো ডাব্লিউটিও’র (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পেটেন্ট ছাড় পেয়েছে তারপর কি হবে?
২০৩৩ সালের পর ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলি এপিআই (ওষুধের প্রধান কাঁচামাল)আমদানি করতে পারবে না। ইন্টারমিডিয়েটস (এপিআই উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন মধ্যবর্তী রাসায়নিক পদার্থ) থেকে এপিআই(ওষুধের প্রধান কাঁচামাল) তৈরির বিষয়ে চিন্তা করার জন্য এখনই ভাবার সময়। অন্যথায় আমাদের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলি ভবিষ্যতে একটি বড় সমস্যায় পড়বে।
মূলত চীন, ভারত, কোরিয়া, জাপান, জার্মানি, ইতালি থেকে টাকার অঙ্কে প্রায় ৫০-বিলিয়ন টাকার কাঁচামাল আমদানি করা হয়। এপিআইয়ের আন্তর্জাতিক বাজার দাঁড়িয়েছে ১৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যেখানে চীন এবং ভারত সারা বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করছে।
চীনা উৎপাদনকারীরা এপিআই উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ইন্টারমিডিয়েটসকে প্রাধান্য দিয়েছিল এবং এখন পর্যন্ত প্রাধান্য দিয়ে আসছে। চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা বেশিরভাগ ইন্টারমিডিয়েটস/এপিআই জিএমপি এবং ডিএমএফ (ড্রাগ মাষ্টার ফাইল) ছাড়া। আবার ভারতে জনশক্তির ব্যয় চীনের চেয়ে অনেক কম ।তারা সহজেই এপিআই তৈরি করতে পারে এবং আরও ভাল দামের সাথে অন্য দেশগুলিতে বিক্রয় করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান ইত্যাদির মতো নিয়ন্ত্রিত সমস্ত বাজারের জন্য চীনা উৎপাদনকারীরা জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস ) এবং ডিএমএফ মান সম্পন্ন এপিআই এবং ইন্টারমিডিয়েট রফতানি করছে। কারণ ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তারা মানের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। চীন ভাল ও মোটামুটি মানের পণ্য তৈরি করতে পারে সে কারনে তারা রফতানির সুযোগ পাচ্ছে ।
দূষণ সমস্যার কারণে, চীন সরকার বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্প বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে যার ফলস্বরূপ এপিআই তৈরির জন্য ইন্টারমিডিয়েটসের বিশাল সংকট দেখা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্টারমিডিয়েটসের ঘাটতির কারণে Thiopental Sodium বাংলাদেশে যতেষ্ঠ পরিমান পাওয়া যাচ্ছে না এবং Naproxen Sodium ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। সুতরাং ভবিষ্যতে Naproxen চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাবে না।
তবে আমরা (বাংলাদেশি উৎপাদনকারীরা) এ বিষয় নিয়ে বিশেষ কোন চিন্তাই করছি না ! আমরা কেবলমাত্র ইন্টারমিডিয়েটস থেকে কীভাবে এপিআই তৈরি করতে হবে তা নিয়ে ভাবছি। আবার কেউ কিছুই ভাবছে না বিষয়টা তেমনও নয় । কিছু কোম্পানি শুধু এপিআই নিয়ে ভাবছে।
আমি আপনাকে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ফেক্সোফেনাডিন হলো অ্যান্টিহিস্টামিন যা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা যেমন হাঁচি, সর্দি ,চোখ বা নাকে চুলকানি দূর করতে ব্যবহৃত হয়। ফেক্সোফেনাডিন এপিআই আপনি FEX-10 বা FEX-12 থেকে তৈরি করতে পারেন। আপনি যদি FEX-10 থেকে তৈরি করেন তবে আপনার দুটি বিক্রিয়া দরকার। আপনি যদি FEX-12 থেকে তৈরি করেন তবে আপনার একটি বিক্রিয়া দরকার। আমরা কেবল শেষ প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবছি এবং শুরু থেকে চিন্তা করছি না।
তবে আমাদের দেশের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন এ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড (এএফসিএল), গণস্বাস্থ্য বেসিক কেমিক্যালস লিমিটেড, ডায়াবেটিক সায়েন্স লিমিটেড, রেমো কেমিক্যালস লিমিটেড, এনআইপি কেমিক্যালস এবং ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সোডিকাল কেমিক্যালস লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অপসোনিন বাল্ক ড্রাগস লি, গ্লোব ড্রাগস লিমিটেড(এপিআই প্রকল্প), বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (এপিআই প্রকল্প), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড(এপিআই প্রকল্প), ইনসেপটা কেমিক্যালস লিমিটেড, জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (এপিআই প্রকল্প) সহ অন্যান্য কিছু প্রতিষ্ঠান চিন্তা এ বিষয়ে চিন্তা করছে।
এদিকে কিছু সমস্যাও রয়েছে যারা এপিআই উৎপাদন করছে এবং তাদের যেমন মানসম্পন্ন বিজ্ঞানীর অভাব রয়েছে তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলি গবেষণা ও উন্নয়ন (গবেষণা ও উন্নয়ন) বিভাগে বিনিয়োগ করতে অনাগ্রহ রয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয় এবং এপিআই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সম্পর্কও খুব বেশি ভাল নয় যেখান থেকে এ বিষয়ে দক্ষ জনবল পাওয়া যেতে পারে ।
সুতরাং আমরা দেশে এপিআই উৎপাদনের বর্তমান পরিস্থিতিটি সহজেই অনুমান করতে পারছি। আমাদের ঔষধশিল্প তার ৯৫% এপিআই আমদানি করে। স্থানীয় এপিআই উৎপাদনকারীরা ঔষধশিল্পের চাহিদার ৫% এর বেশি পূরণের মত সক্ষমতা নেই।
সুতরাং এখনই এপিআই এবং ইন্টারমিডিয়েটস তৈরিতে মনোযোগ দেয়ার সঠিক সময়।
লেখক: সিনিয়র অফিসার, এমবায়োলজিকস্।