গতকাল ০১ ই মার্চ ২০২২ ইং তারিখ দেশের সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১৫টি ইউনিভার্সিটির প্রায় ৩০ জনের মত ছাত্রছাত্রী নিয়ে “ড্রাগ ডিসকভারি রিসার্চ গ্রুপ” স্প্রিং-২০২২ ২য় ব্যাচের উদ্ভোধন করা হয়।
তরুণ বিজ্ঞান গবেষকদের দেশ ও বিদেশে শীর্ষ স্থানীয় ক্যারিয়ার গড়তে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে (এই রিসার্চ গ্রুপ গঠনের উদ্যোগ গ্রহন করেন বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স & টেকনোলজি; এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, আবুল হাসান রনি ও ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক,অজয় কুমার) ধারাবাহিক গবেষণা কার্যক্রমের নতুন গ্রুপে (স্প্রিং ২০২২) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাইকৃত ৩০ জন মেধাবীদেরকে ২য় ব্যাচের সুযোগ দেওয়া হয়। মজ্ঞলবার(০১ ই মার্চ) ড্রাগ ডিসকভারি রিসার্চ গ্রুপের সদস্যদেরকে উৎসাহী করতে, আলোচনায় সিক্ত করতে, এবং তাদেরকে গবেষণার সঠিক পথ প্রদর্শন করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় দিয়েছেন এবং গবেষণা যাত্রার অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন । এসময় বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি থেকে অংশগ্রহণকারী তরুন গবেষকদের দিকনির্দেশনামুলক বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রফেসর ড.আলাউদ্দিন বলেন যে, রিসার্চ করতে হলে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। একবার ব্যর্থ হলে বার বার সেটা চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে। গবেষণা করা ছাড়া কোন ভাবেই টেকসই উন্নয়ন কোন ভাবেই অর্জন করা যাবে না। সুতরাং তোমাদের মত (রনি ও অজয়) তরুন শিক্ষক ও গবেষক দের এগিয়ে আসতে হবে এই সব তরুণ গবেষকদের দায়িত্ব নিতে। আমি আজ শিক্ষক হিসাবে সব চেয়ে বেশি গর্বিত বোধ করছি যে তোমাদের মত ছাত্র (রনি ও অজয়) আমি বের করতে পেরেছি যারা কোন কিছু না চেয়ে বা পেয়ে দেশ এর জন্য কাজ করছ। তোমাদের মঙ্গল কামনা করছি এবং মার্চের মাসে আর চেয়ে মহৎ উদ্যোগ আর কিছু হতে পারেন সুতরাং এর সফলতা কামনা করছি।
সেমিনারটির কি নোট স্পিকার হিসেবে ড্রাগ ডিসকভারি বিষয়ে আলোচনা করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি-সম্পন্ন গবেষক, বিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট মেডিসিনাল কেমিস্ট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক বিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক, অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবুল মতিন। যিনি ৯৫ টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ, মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি সহ একাধিক পুস্তকের প্রনেতা এই গুনী অধ্যাপক তত্বাবধান করেছেন বহু এমএস, এমফিল ও পিএইচডি গবেষনা। পেয়েছেন বহু সম্মাননা ও গবেষণা ফান্ড। এছাড়াও সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ড্রাগ ডিসকভারি রিসার্চ গ্রুপটির উদ্যোক্তা বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স & টেকনোলজি, এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর আবুল হাসান রনি ও ইউরোপীয়ন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র শিক্ষক ও গবেষক অজয় কুমার।
আবুল হাসান রনি বলেন, গবেষনার পরিসর আরো বড় হবে, দেশের অসংখ্য স্বপ্নময় তরুণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সারা দেশ হতে বাছাইকৃত এই ড্রাগ ডিসকভারি রিসার্চ গ্রুপ কোলাবরেশনের মাধ্যমে বড় কাজের পরিসর তৈরীতে আশাবাদী। বিজ্ঞ গবেষক, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক ও পেট্রোনাইজারদের সহযোগিতায় তরুণরা স্বপ্ন ছোয়ার পথ পাবে এটাই কাম্য।
রিসার্চ গ্রুপের আরেকজন উদ্যোক্তা ও তরুন গবেষক, অজয় কুমার,যিনি গত তিন বছরে বিভিন্ন খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক জার্নালে ৭০ এর অধিক গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন। তিনি নতুন গবেষকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির গবেষণায় আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের কে সহযোগিতা করা এবং যথাযথ দিকনির্দেশনা দেওয়া। যাতে তরুন ছাত্রছাত্রীরা গবেষনায় আগ্রহী হয়। আমরা চেষ্টা করবো আমাদের রিসার্চ গ্রুপের ছাত্রছাত্রীরা যেনো ভবিষ্যতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন ভাল ভাল জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে পারে সেভাবে ট্রেনিং দিয়ে তৈরি করার এবং বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করার সুযোগ পায়, এমনকি উচ্চ শিক্ষা জন্য ভাল ভাল বিশ্ববিদালয় ভর্তি ও scholarship এর সুযোগ তাদের দুয়ারে কড়া নাড়ে। তাছাড়াও তিনি রিসার্চ গ্রুপের সদস্যদের সবধরনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আরো উল্লেখ করার মত বিষয় যে অজয় কুমার ২০১৪ সাল থেকে নিরলস ভাবে নিজ উদ্দেগে, নিজ খরচে সফটওয়্যার গুলো কিনে গবেষণা করে যাচ্ছে, এবং রাষ্ট্র, প্রতিস্তান এমনকি নিজ বিশ্ববিদালয় থেকে ও কোন প্রকার গবেষণা ফান্ড ছাড়া কাজ করে যাচ্ছেন যা বর্তমান সময়ের জন্য এক অনন্য উদারন । তিনি প্রচার বিমুখ এক জন ইয়ং সায়েন্টিস্ট তো বটেই, আমদের মত তরুন গবেষক দের জন্য নতুন এক আনুপ্রেরনা নাম বটে । যার কাছ থেকে শেখা যাই, যে শূন্য থেকে কি ভাবে শুরু করে শুধু মেধা আর ইচ্ছে শাক্তি দিয়ে অনেক দূর যাওয়া যাই আর দুনিয়া জয় করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা যাই। তার প্রকাশিত তিনটি গবেষণাপত্র World Health Organization (WHO) এর ওয়েবপেজ এ COVID-19 ইভেন্ট এ এ স্বতন্ত্র আইডি নিয়ে জায়গা করে নিয়েছে, যা বাংলাদেশি হিসাবে এক অনন্য অর্জন এবং গর্ব । তিনি আর বলেন যে সব রকম সফটওয়্যার সাপোর্ট এবং ব্যবহারের সুযোগ দিতে সর্বদা চেষ্টা করে যাবেন ।
আবুল হাসান রনি আরও উল্লেখ্য করেন, আমাদের প্রথম ব্যাচ স্প্রিং-২০২১ থেকে গত একবছরে প্রায় ১০ এর অধিক গবেষণা পত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার জন্য সাবমিশন করা হয়েছে যা শিগ্রই প্রকাশিত হবে বলে আশাব্যাক্ত করেন।
অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের একজন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মেসী বিভাগের ছাত্র ফাতেহা আরেফীন বলেন,আমার উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা ও গবেষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাই। সেজন্য এই রিসার্চ গ্রুপে জয়েন করেছি। আশাকরি এখান থেকে অনেক টেকনিক্যাল ও রিসার্চ দক্ষতা অর্জন করতে পারবো যা আমার উচ্চ শিক্ষার পথকে সহজ করবে সেজন্য আমাদের সকলের পক্ষ থেকে রনি ও অজয় স্যারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি এমন একটি মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য। উক্ত রিসার্চ গ্রুপে ছাত্রছাত্রীদের মাসব্যাপি কম্পিউটার এইডেড ড্রাগ ডিজাইন ও বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যাবহার, গবেষনাপত্র লেখা, লিটারেচার রিভিউ ইত্যাদি নানা বিষয়ে সম্পুর্ন বিনামূল্যে শেখাচ্ছেন আবুল হাসান রনি এবং অজয় কুমার স্যার।