ফার্মেসী ব্যবস্থাপনা

ষধ মানুষের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে৷ রোগথেকে মুক্তির ক্ষেত্রে এই ঔষধ এক অন্যতম মাধ্যম। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের অধীন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশে ঔষধ সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ফার্মেসী ব্যবস্থাপনা বা ফার্মেসী ম্যানেজম্যান্ট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা রয়েছে। গুণগত মান সম্পন্ন বৈধ ঔষধ ক্রয়, বিক্রয়, সংরক্ষণ, ডিসপেন্সিং এবং ঔষধ সম্পর্কে পরামর্শ প্রদানের জন্য ফার্মেসীতে কেমন ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে? চলুন জেনে নেয়া যাক

১. ড্রাগ লাইসেন্স

ড্রাগ লাইসেন্স হচ্ছে ঔষধ ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ন ডকুমেন্ট৷যা ঔষধ সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের অনুমতি প্রদান করে থাকে৷ দেশে প্রচলিত ঔষধ আইন অনুযায়ী ফার্মেসীর অনুকুলে একটি বৈধ মেয়াদের ড্রাগ লাইসেন্স থাকতে হবে। মূলত ড্রাগ লাইসেন্সের মেয়াদ থাকে ২ বছর। মেয়াদ শেষ হলে তা আবার নবায়ন করে নিতে হবে৷ ফার্মেসীর সুস্পষ্ট জায়গায় ড্রাগ লাইসেন্সটি প্রদর্শিত অবস্থায় থাকতে হবে। সবসময় দেখা যায় এমন দোকানের এমন স্থানে লাইসেন্সটি রাখতে হবে যেন সহজেই দেখা যায়।

২. ফার্মাসিস্ট

ফার্মাসিস্টরা ফার্মেসীর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ৷ তারা ঔষধ ক্ষেত্রে পেশাদার বা প্রফেশনাল। তাদের নিদিষ্ট নীতিমালা, আইন- কানুন মেনে রয়েছে এবং তা মেনে চলতে হয়৷ বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল থেকে তাদেরকে পেশাগত সনদপত্র প্রদান করা হয়ে থাকে৷ ঔষধ সম্পর্কিত যাবতীয় কাজে ফার্মাসিস্টদের প্রয়োজন।
ক. ফার্মেসী তত্ত্বাবধানের জন্য একজন। রেজিস্ট্রার্ড ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে।
খ. ফার্মাসিস্টের অনুপস্থিতিতে ঔষধ ডিসপেন্স বা বিক্রয় করা যাবে না।
গ. ফার্মাসিস্টের রেজিষ্ট্রেশন সনদ ফার্মেসীতে প্রদর্শন করতে হবে।
ঘ. মেডিসিন শপে যেকোনো গ্রেডের ফার্মাসিস্ট ( এ/ বি/ সি) এবং ফার্মাসীতে এ গ্রেড রেজিষ্ট্রেশনধারী ফার্মাসিস্ট নিয়জিত থাকতে হবে।
ঙ. ফার্মাসিস্ট পরিবর্তন করলে অবশ্যই ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট অফিসকে অবহিত করতে হবে।

৩. ট্রেড লাইসেন্স

ফার্মেসীতে বৈধ মেয়াদের ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে।

৪. ঔষধ সংরক্ষণ ব্যবস্থা

ঔষধ সংরক্ষন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একারনে ফার্মেসীতে ভালো ঔষধ সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকতে হবে। সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতির অভাবে খুব সহজেই ঔষধের গুনাগুন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঔষধ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা হচ্ছে
ক. ঔষধের মোড়কে নির্দেশিত তাপমাত্রায় ঔষধ সংরক্ষণ করতে হবে। তাপ সংবেদনশীল (থার্মো ল্যাবাইল /হিট সেনসিটিভ) ঔষধসমূহ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হবে।রেফ্রিজারেটর ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
খ. ওটিসি ঔষধ ও পেসক্রিপসন মেডিসিন পৃথকে সেলফে সংরক্ষণ করতে হবে।
গ.ঔষধ ব্যতীত অন্যান্য হেলথ রিলেটেড প্রডাক্ট পৃথক সেলফে সংরক্ষণ করতে হবে।
ঘ. ঔষধ সংরক্ষণের বিভিন্ন সেলফে স্ট্যাটাস লেবেল সংযোজন করতে হবে।
ঙ. ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হার্বাল ঔষধ পৃথক পৃথক সেলফে রাখতে হবে।

৫. অবৈধ ঔষধ- অবৈধ ঔষধের ক্ষেত্রে নির্দেশনা হচ্ছে :

ক. ফার্মেসীতে আনরেজিস্টার্ড, নকল, কাউন্টারফিক, মিসব্র্যান্ডেড ঔষধ সংরক্ষণ করা যাবে না।
খ. ফার্মেসীতে ফুড সাপ্লিমেন্ট ( ফার্মাসিউটিক্যালস্ ডোসেজ ফর্মে উপস্থিত এবং রোগ নিরাময় করে দাবিকৃত) সংরক্ষণ করা যাবে না।
গ. ফার্মেসীতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ সংরক্ষণ করা যাবে না। কোন ঔষধ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে পৃথক আলমারিতে তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হবে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রয়ের জন্য নয় এ মর্মে লাল কালি দিয়ে আলমারিতে লেবেল সংযোজন করতে হবে। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে যেকোনো ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর ফার্মেসিগুলো তা একটি নির্দিষ্ট কন্টেইনারে মজুদ রাখে এবং সেই কনটেইনারে ‘এ ওষুধ বিক্রয়ের জন্য নয়’ লেখা থাকে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধের একটি রেজিস্ট্রারে রেকর্ড রাখতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর অনধিক ১ মাসের মধ্যে সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দিতে হবে। ফেরত দেওয়া সম্ভব না হলে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ. কোন সরকারি ঔষধ ফার্মেসীতে সংরক্ষণ করা যাবে না।

ঙ.আমদানিকৃত ঔষধের মোড়কে ডিএআর নাম্বার, এমারপি মুদ্রিত না থাকলে অবৈধ ঔষধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের ঔষধ ফার্মেসীতে সংরক্ষণ করা যাবে না।

চ. কোন ঔষধের মোড়কে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের বা নির্দেশক মূল্যের স্টিকার বা ওভারপ্রিন্টিং গ্রহণযোগ্য নয়।

৬. ডকুমেন্টস- ফার্মেসীতে কিছু কাগজপত্র বা ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করতে হবে যেমন :
ক. ঔষধ ক্রয়ের ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করতে হবে।
খ. ঔষধ বিক্রয়ের রেকর্ড রাখতে হবে।
গ. ঔষধ বিক্রয়ের ক্যাশ মেমো প্রদান করতে হবে।

৭. ডিসপেন্সিং ও কাউন্সিলিং
ক. ওটিসি ঔষধ ব্যতীত অন্য কোন ঔষধ ব্যবস্থাপত্র ব্যতিরেকে বিক্রি করা যাবে না।
খ. বিক্রয়কৃত ঔষধের সেবনবিধি সম্পর্কে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
গ. পূর্ণ কোর্সে ব্যবস্থাপত্রে নির্দেশিত নিয়মে এন্টিবায়োটিক সেবনের জন্য পরামর্শ প্রদান করতে হবে।
ঘ. কোন ঔষধের বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ব্যবস্থাপত্র প্রদানকারী চিকিৎসককে অথবা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য পরামর্শ প্রদান করতে হবে।

৮. ফার্মেসী অডিট

প্রতি সপ্তাহে অন্ততঃ একবার ফার্মেসীতে সংরক্ষিত সকল ঔষধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ঔষধ ফার্মেসী সেলফ হতে সরিয়ে নিতে হবে। পরিচালিত অডিট সম্পর্কে রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে।

৯. ঔষধের উৎস

বৈধ উৎস হতে যথাযথ ডকুমেন্টসহ ঔষধ সংগ্রহ করতে হবে। অচেনা, ভাসমান কোন ব্যক্তি অথবা কোন ব্রোকারের নিকট হতে ঔষধ সংগ্রহ করা যাবে না। এরুপ কোন ব্যক্তি ঔষধ বিক্রয়/সরবরাহ করতে আসলে তার নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট অফিসকে অবহিত করতে হবে।

১০. আনরেজিস্টার্ড ঔষধের ব্যবস্থাপত্র

কোন ব্যবস্থাপত্রে আনরেজিস্টার্ড ঔষধ লিখা থাকলে তার কপি সংগ্রহ করতে হবে এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট অফিসে প্রেরণ করতে হবে।

১১. শুদ্ধি অভিযান

ঔষধের বিভিন্ন মার্কেটে বা দোকানগুলোতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, ফার্মেসীর মালিক/ফার্মাসিস্ট, বাংলাদেশ কেমিস্ট ড্রাগিস্ট সমিতির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সকল অভিযানে প্রাপ্ত অবৈধ ঔষধ ধ্বংসের ব্যবস্থা করতে হবে। শুদ্ধি অভিযানের পর কোন ফার্মেসীতে কোন অবৈধ ঔষধ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফার্মেসী ব্যাবস্থাপনার ক্ষেত্রে উপরের বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ।

আমদানিকৃত ঔষধঔষধ সংরক্ষণড্রাগ লাইসেন্সফার্মাসিস্টফার্মেসী ব্যবস্থাপনামেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ
Comments (০)
Add Comment