নাহিয়ান ফাইরোজ ফাহিম! ইউনিভার্সিটিতে একটা পরিচিত নাম।পরিচিত মুখ হবেই না কেনো বলেন? কারন ওনি যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশুনা শেষে একই বিশ্বিবদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কাজে যোগ দেন। খুব ভাগ্যবান না হলে যেখানে পড়াশুনা করেছে সেখানেই আবার শিক্ষক হিসেবে সুযোগ কতজন আর পায়?সেদিক দিয়ে ফাহিম ম্যাম অনেকটা ভাগ্যবান।
কিছু দিন আগে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরিকার ইন্ডিয়ানা স্টেটের পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি লাভ করেন। ফাহিম ম্যাম ফরিদগঞ্জের শোল্লা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ওনার পিতা চৌরাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। এবং ওনার ভাই আরিফুর রহমান শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
২০১৮ সালে ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছি তখন প্রথম সেমিষ্টারেই ম্যমের ক্লাস পাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো।নাহিয়ান ফাইরোজ ফাহিম ম্যমও সদ্য ওনার পড়াশুনা সম্পন্ন করে ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করেছেন আমিও এডমিশন নিয়েছি ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু প্রথম প্রথম ম্যমকে দেখে খুব অবাক হতাম আর ভাবতাম ওনি তো আমাদের মতই ছোট। ওনি আমাদের ক্লাস নিবেন? আমাদের শিক্ষক! এটা কিভাবে সম্ভব।প্রথম ক্লাস শেষ হওয়ার পর বুঝলাম,হ্যা ওনি আমাদের শিক্ষক। আর অনেক ভালো মানের শিক্ষক।
জানুয়ারি ২০১৮ সাল। ইউনিভার্সিটিতে নাহিয়ান ফাইরুজ ফাহিম ম্যম ১ম সেমিষ্টারে আমাদের এনাটমি ক্লাস নিতেন।প্রথম প্রথম ম্যামের ক্লাস অনেক বিরক্ত লাগতো।কারন ম্যাম প্রতি ক্লাসে হোমওয়ার্ক / এসাইনমেন্ট /স্কুলের বাচ্চাদের মত আমাদেরকে সবসময় শাসনে রাখতেন।প্রত্যেক ক্লাসে পড়া জিজ্ঞেস করতেন সেজন্য। কিন্তু দিন যত যেতে লাগলো ম্যমের ক্লাসটিও অনেক উপভোগ করতে লাগলাম।অনেক ভালো লাগা শুরু করলোআপনার ক্লাসগুলো।
ভালো লাগবেই না কেন বলেন? ম্যামের পড়ানোর স্টাইল অন্যসব টিচার থেকে সম্পুর্ন আলাদা।সত্যি বলছি সম্পুর্ন আলাদা। যখন যে টপিক্স পড়াতেন সম্পুর্ন ক্লিয়ার না হওয়া পর্যন্ত বুঝাতেই থাকতেন।বুঝাতে বুঝাতে ক্লাসের অন্যসব ছাত্রছাত্রী বিরক্ত হয়ে যেতো কিন্তু ম্যম কখনো বিরক্তবোধ করতেন না।এরপর ম্যমের সাথে যদিও আমরা ২ টা কোর্স পেয়েছি তবুও মনে হয়, যদি প্রত্যেকটা সেমিষ্টারে ম্যমের সাথে একটা করে ক্লাস থাকতো।তাহলে কতই না ভালো হতো।সত্যি বলছি আপনি আমার দেখা অসাধারণ একজন শিক্ষক পাশাপাশি একজন ভালো মানুষ।একজন শিক্ষক হওয়ার যতরকম গুণ থাকা প্রয়োজন সবগুলো গুণ আপনার মাঝে আছে।এই লেখাটি ম্যাম যখন পড়বেন আর ভাববেন হয়তো সৌজন্যতার খাতিরে অথবা আপনাকে খুশি করার জন্য এতোসব কথা বলছি।আসলেই না।সত্যি বলছি, আপনি অসাধারণ মনের একজন মানুষ।
১৭ এপ্রিল ২০১৮। ক্লাসের একদিনের ঘটনা। সেদিন ম্যামের জন্মদিন ছিলো। ক্লাসে সবার কাছ থেকে টাকা তুলে ম্যামের জন্য একটা ছোট উপহার কেনা হলো। ছোট থেকেই আমার প্রিয় ব্যাক্তিদেরকে উপহার দিতে আমার কাছে অনেক ভালো লাগতো। তখন আমি ভাবতে লাগলাম আমারও ম্যামকে একটা ছোট উপহার দেওয়া উচিৎ। ভেবে পাচ্ছিলাম না কোন উপহারটা দেবো।তখন হঠাৎ মনে পড়লো বই উপহার দেওয়া যেতে পারে।কিন্তু এখন বই পাবো কোথায়। হঠাৎ মনে পড়লো আমি তো কলেজে একটা বই উপহার পেয়েছিলাম। এই বইটি কলেজে দুই বছর শতভাগ উপস্থিতি থাকার জন্য কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানে পুরস্কার পেয়েছিলাম।বইটি যখন আমি পেয়েছিলাম তখন ই আমি নিয়ত করেছিলাম এই বইটি আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যাক্তিকে উপহার দেবো যাতে ওনার কাছে এটি যত্নসহকারে থাকে।তৎক্ষনাৎ আর কিছু না ভেবে বইটি প্যাকিং করে ম্যামকে জন্মদিনে বইটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম।
লেখাটি লেখার সময় মনের অজান্তেই চোঁখে পানি চলে আসলো।কারন ম্যাম চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদেরও গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়ে যাবে।আর কোনোদিন ম্যামের ক্লাসে বসার সুযোগ হবেনা।কেও বলবেনা স্বপ্নীল পড়া বলো।কেও স্কুলের বাচ্চাদের মত আর হোমওয়ার্ক দিবেনা কিংবা শাসন করবেনা।কোভিড-১৯ এর বন্ধের আগে ম্যামের সাথে আমাদের একটা অসমাপ্ত ল্যাব ছিলো ভেবেছিলাম ম্যাম চলে যাওয়ার আগে একসাথে সব ক্লাসমেইট মিলে একদিন ক্যাম্পাসে সারাটাদিন ম্যামের সাথে আড্ডা দেবো, স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য ছবি তুলবো। কিন্তু সেই সুযোগ আর হলোনা।
ফাহিম ম্যাম সম্প্রতি আমেরিকায় পিএইচডি করার জন্য ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন।আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের সকলের প্রিয় ফাহিম ম্যাম দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে নিয়ে আসবেন ও আমাদের ইউনিভার্সিটির নাম উজ্জল করবেন। দেশকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন এবং আমরা একদিন গর্ব করে বলতে পারবো আমাদের একজন ফাহিম ম্যাম ছিলো। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। আমরা আপনাকে প্রতিনিয়ত প্রিয় ক্যাম্পাসে অনেক অনেক মিস করবো।দোয়া করি যেখানেই থাকুন আল্লাহ আপনাকে সবসময় ভালো রাখুক সুস্থ রাখুক।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।