বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট কাউন্সিল অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারীরাই শুধু ‘ফার্মাসিস্ট’ পদবি লিখতে পারবেন। পাশাপাশি জীববিদ্যাসহ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসিসহ কাউন্সিল অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে তিন বছর মেয়াদি ‘ডিপ্লোমা-ইন-ফার্মেসি’ কোর্সে উত্তীর্ণ হলে লিখতে হবে ‘ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট’। আর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণসহ কাউন্সিলের অধীনে ‘ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন’ কোর্সে উত্তীর্ণদের ‘ফার্মেসি টেকনিশিয়ান’ লিখতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে কমপক্ষে দুই বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। এসব বিধান রেখে ‘ফার্মেসি আইন, ২০২৩’-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি খসড়াটি চূড়ান্ত করেছে। ওই খসড়া নিয়ে এরই মধ্যে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। আরও দু-একটি বৈঠকের পরই অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আইন) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনের খসড়া নিয়ে গত ৭ জুন আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। এরপর গত ৩ জুলাই সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি। এখন তা অনুমোদনের জন্য শিগগির মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।’
তবে খসড়াটির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে চিঠি দিয়েছে ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট কল্যাণ পরিষদ। তাদের দাবি, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ওষুধ বিতরণ ও সংরক্ষণের কাজটি করে আসছেন ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা। কিন্তু নতুন আইন কার্যকর হলে গ্র্যাজুয়েট বা ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ ফার্মাসিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন না। এতে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাড়ে ৪ হাজারসহ মোট ১২ হাজার ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট বেকায়দায় পড়বেন। পেনশনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দেবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট আছেন ১২ হাজারের মতো। এর মধ্যে নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি বিশেষায়িত, টারশিয়ারিসহ ৫১৭টি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন সাড়ে ৪ হাজারের মতো। প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের পেনশন ও পদবি-সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে সামরিক শাসনামলে ফার্মেসি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। সে সময় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ছিল না। তাই তিন বছরের কোর্স করা ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টদের হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিদ্যমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক, তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা এবং ফার্মেসি সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন কোর্স সম্পন্নকারী সবাইকে ফার্মাসিস্ট বলা হয়। ফার্মাসিস্টদের নিবন্ধন দেওয়া ও দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসনামলের সব অধ্যাদেশ বিলুপ্ত করা হয়।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ফার্মাসিস্ট কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া কেউ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্সসহ ফার্মেসি শিক্ষা কোর্স পরিচালনা করলে কমপক্ষে দুই বছরের জেল বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। কেউ একই অপরাধ অব্যাহতভাবে করতে থাকলে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সরকার অনুমোদিত ও নিবন্ধিত ফার্মাসিস্টদের কাজে বাধা দিলে কমপক্ষে তিন বছরের জেল বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হবে।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট কল্যাণ পরিষদের সদস্যসচিব মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মূল দাবি, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে তিন বছরের কোর্স সম্পন্নকারীদের ফার্মাসিস্ট লেখার সুযোগ দিতে হবে।’