২টাকার প্যারাসিটামল কাব্য!

প্যারাসিটামল কাব্য!

ফার্মেসি তে গিয়ে ওষুধ কিনতে গিয়েছি।পাশে দুজন ভদ্র লোক কথা বলছে।

ভদ্রলোক -১ : কি যে দিন আসলো। কাঁচা বাজারের মত ওষুধের দামেও হাওয়া লাগছে।এতো দাম বাড়ছে। কারও সর্বনাশ , কারও পৌষমাস………।

ভদ্রলোক -২ :  কিচ্ছু করার নাই ভাই।না কিনেও উপায় নাই। আগে তাও ডিস্কাউন্ট পাইতাম,এখন তাও নাই। দেশটা সিন্ডিকেটে ভইরা গেছে………।

কিছু সময়ের জন্য চুপ থেকে অনেক কথা আরও শুনলাম।

আমিঃ ভাই, সবি ঠিক আছে ।কিন্তু বুঝেন ই তো।সব জিনিষের দাম বাড়ছে। তাও তো আমরা দেশের ওষুধ পাচ্ছি,এটাও অনেক দেশ পায়না।দেশে ওষুধের কোন ঘাটতি নেই। তবে আমার জানা মতে এখানে কোন সিন্ডিকেট নাই।

তাদের চাহনি দেখে মনে হল, আমাকে পারলে গিলে খায়।একজন তো বলেই ফেললো , ভাই আপনার কি ওষুধের ব্যাবসা আছে নাকি।এতো ছাপাই গাইছেন যে।

আমিঃ না ভাই, আমি সাধারন নাগরিক।আমিও ওষুধ কিনে খাই।

বুঝলাম,গভীরে গেলে আরও কিছু সহ্য করতে হবে।

জীবাণু শব্দটা খুব ছোট থেকেই শুনে আসছি। ছোটবেলায় জ্বর-ঠান্ডা কিংবা হলে যখন ডাক্তারের কাছে যেতাম, ডাক্তার বলতেন ভাইরাল ফিভার, এই ঔষধগুলো খেলে ঠিক হয়ে যাবে। প্রশ্ন করতাম, ভাইরাল বিষয়টা কি! ডাক্তার কাকু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন, ভাইরাস হচ্ছে ছোট্ট একটি জীবাণু যা কিনা দেখা যায় না, বুঝা যায় না কিন্তু আমাদের শরীরে জ্বর-ঠান্ডা হলে এদের উপস্থিতি বাড়ে। আবার এদের দ্বারাই রোগের টিকা তৈরি করা হয়। ভাইরাসের মত আরো অনেক জীবাণু আছে, তাদের মধ্য ব্যাকটেরিয়া অন্যতম।

ফার্মেসি থেকে যখন ২ টাকা সমমূল্যর প্যারাসিটামল ওষুধ কিনে খাই,ভেবে দেখেছি কি কখনো এর পিছনে কত শত মানুষের শ্রম রয়েছে !কত শত সিগনেচার এর মাধ্যমে একটা ব্যাচ রিলিজ হয় আর তার পরেই সে ওষুধ বাজারে আসে। কেউ কি ভেবে দেখেছি বাজারে সব কিছুর মূল্য হুট হাট করে বাড়লেও জীবন রক্ষা কারি ওষুধের দাম কয় টাকাই বা বেড়েছে। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধ বানানোর কাচামাল,পরিবহন ব্যয় আর ওষুধ টেস্ট করার মেশিনারিজ  কয়েকগুন  বেড়েছে।এসব খবর কেই বা রাখি।

দাম কম বা বেশি এটা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। দামের সাথে যেন  কোন ভাবেই সেই মানুষদের ছোট না করি যারা কিনা ওষুধ তৈরি করছে, ওষুধের গুনগত মান নির্ণয় করছে,গবেষনা করছে আর সেই সাথে বাজারজাতকরন,বন্টন আর বিক্রয় করছে। দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট- মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট কেমিষ্ট সহ অনেক নিবেদিত প্রাণ। দেশের সকল ক্রান্তিকালে এদের ভুমিকা অপরিসীম।

পরিশেষে,প্রায় ১০০ ভাগ যোগান দাতা সেই দেশীয় ওষুধ শিল্পকে আনুগত্য প্রকাশ করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য দরকার অনুপ্রেরনা, উৎসাহ আর মনোবল।

লেখক : দেশীয় ঔষধ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *