২৫ সেপ্টেম্বর! বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস ৷ এবারের প্রতিপাদ্য ” স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করছে ফার্মেসী”।
দিবস এলেই আমরা যত আলোড়িত বা আন্দোলিত হই। অথচ এই পেশার মানুষগুলো খুব বেশী সময়, খুব বেশী কিছু বলার সুযোগ পায় না৷ তারা শুধু তাদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত, সবার অলক্ষ্যে। নিরবে কাজ করে চলেছে মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য৷ জন সাধারনের সাথে এই পেশাজীবিদের যোগাযোগ হয়না বললেই চলে। তাই তারা সকলের অলক্ষ্যেই থেকে যায়।
সংখ্যার হিসাব তো আমরা প্রায়ই বলি। দেশের ৯৮ শতাংশ ঔষধ দেশেই উৎপাদন হচ্ছে, পৃথিবীর ১৫০ টিরও বেশী দেশে ঔষধ রপ্তানি করছি আমরা, জিডিপিতে অবদান ২শতাংশ, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের মত এরকম আরো নানা সংখ্যাতাত্বিক বিশ্লেষণ আছে৷ কিন্তু এমন গৌরবান্বিত সংখ্যাতাত্বিক বিশ্লেষণের নেপথ্যে কারা? শুধু কি সংখ্যার গৌরব নিলেই হবে এই সকল অর্জনের পেছনে কারা রয়েছে, তাদের সম্পর্কেও কি জানা উচিৎ নয়?
অন্যান্য পেশাজীবিদের নিয়ে যতটা আলোচনা হয় ততটা আলোচনা আসলে ফার্মাসিস্টদের নিয়ে করা হয় না৷ তারা সবসময়ই প্রচার বিমুখ!
আচ্ছা গ্রামের একজন সাধারণ মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করি যে ঔষধ কারা তৈরী করে জানেন? হয়তো সে বলতেই পারবে না। আর যদি শহরের কোন সাধারণ একজন কে যদি জিজ্ঞেস করি একই প্রশ্ন তার দুই রকম উত্তর হতে পারে কেউ বলবে কেমিস্ট রা অথবা কিছুক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা।
আচ্ছা এই প্রশ্ন না হয় বাদই দিলাম। মানুষকে আপনি বিভিন্ন শিল্প সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন দেখবেন তারা কিছু না কিছু ধারনা রাখে কিন্তু আপনি ফার্মাসিউটিক্যাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন দেখবেন এই বিষয়ে তাদের কোন ধারনা নেই বললেই চলে৷ তারা শুধু জানে ঔষধ তৈরী করা হয়। অথচ ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গুলোতে হাইলি সফিস্টিকেটেড মেশিন, প্রসেস, ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হয় এবং হাইলি কোয়ালিফাইড মানুষজন কাজ করে থাকে৷ কারন এর সাথে মানুষের জীবন সরাসরি জড়িত।
আমার মনে হয় সকলের এই বিষয়ে কিছুটা হলেও জানা থাকা প্রয়োজন এবং জানানোর সুযোগ তৈরী প্রয়োজন । কেন, কিভাবে এই শিল্পে কাজ হচ্ছে৷ কারা করছেন? কিভাবে করছেন? কেন করছেন? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর।
শুধু শিল্প কেন! গবেষণা, স্বাস্থ্যসেবা সকল ক্ষেত্রেই ফার্মাসিস্টদের অবস্থান সারা পৃথিবী জুড়েই সমাদৃত। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট কি? একটু ভাবুন!
পেশাজীবি হিসেবে আমার মনে হয় নিজেদের গৌরবের জায়গা নিজেদেরকেই তুলে ধরতে হবে।
শুধু জীবন রক্ষাকারী ঔষধ পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে শুধু এটুকুই নয়, এর নেপথ্যে কারা, কিভাবে কাজ করছে? একটা ঔষধ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রোপার কোয়ালিটি মেইনটেইন করে রোগী বা চিকিৎসা পেশাজীবিদের হাত পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে এটা নিয়ে আপনার পাশে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। আর এই আলোচনা ফার্মাসিস্ট হিসেবে আপনার আমার থেকেই শুরু করতে হবে৷ সময় এসেছে পেশাজীবি হিসেবে” ফার্মাসিস্ট ” পেশাকে আরো বেশী সমাদৃত করার৷
তাই নিরবে কেন! সগৌরবে বলুন আমি ফার্মাসিস্ট! আমি আপনার জন্য নিরাপদ ও কার্যকর ঔষধ পৌঁছে দিতে নিরন্তর কাজ করে চলেছি৷
লেখক: ফার্মাসিস্ট, দেশীয় ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।