ফার্মাসিস্ট ও চিকিৎসা সেবা

মোঃ শাহীন সরকার
মোঃ শাহীন সরকার
ফার্মেসী সাব্জেক্ট টা হলো ওষুধ নিয়ে পড়াশোনা। ফার্মেসি স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা যা মূলত রসায়নের সাথে জীববিজ্ঞানের একটি যোগসূত্র হিসাবে কাজ করে। মুলত ঔষধ ও কসমেটিকসের প্রস্তুতি, ব্যবহার এবং এদের নিরাপদ ও সঠিক বিতরণ ও পরিবেশন (Dispensing) ইত্যাদি সবই এর আলোচ্য বিষয়। আধুনিক যুগের ফার্মাসিস্টদের কাজ হচ্ছে ঔষধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ,ঔষধ সম্পর্কে সঠিক তথ্যবিতরণ, এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, সঠিক চিকিৎসাগত প্রয়োগ ইত্যাদি। অতঃপর একজন ফার্মাসিস্ট হলেন সেই বেক্তি যে এই সকল বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

ফার্মেসী এর প্রধান শাখা গুলো হলো-

১।হসপিটাল /ক্লিনিকাল ফার্মেসী

২।ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ফার্মেসী

৩।কমিউনিটি ফার্মেসী

৪।নিউক্লিয়ার ফার্মেসী

৫।মডেল ফার্মেসী

৬।অনলাইন ফার্মেসী

৭।ভেটেরিনারি ফার্মেসী

উপরের ১ নং টা এদেশের ডাক্তার রা ব্লক করে রাখছে, ২ নং টা পুরুদমে এদেশে চলছে, ৫ নং টা নতুন চালু হয়েছে এদেশে , ৬ নং টা হালকা- পাতলা চলে আর কি এবং ৭ নং টা যারা ডিভিএম সম্পন্ন করেন তাদের জন্য। উপরের লেখা থেকে যেটা বুঝা যায় সেটা হলো আমাদের দেশের ফার্মাসিস্ট দের মূল কাজ হলো ইন্ডাস্ট্রিতে ওষুধ উৎপাদন করা। আমাদের দেশে প্রায় ৩০০+ অনুমোদিত ওষুধ কোম্পানি আছে। যারা আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বাইরে ওষুধ রপ্তানি করছে। মোট কথা এদেশ ওষুধ এ সয়ংসম্পূর্ণ। এসব কোম্পানির প্রোডাকশন, প্রোডাক্ট ম্যানেজম্যান্ট,প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ট্রেনিংসহ বিভিন্ন বিভাগে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষকতা, গবেষণা এবং দেশের বাইরে কাজ করার সুযোগ তো আছেই।

হসপিটাল ফার্মেসীতে কি কি সেবা পাবেন তা নিয়ে কিছু ধারণা দেওয়া দরকার, সেগুলো হচ্ছে,

• ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা আনুষাঙ্গিক সংগ্রহ, সংরক্ষন, প্রস্তুত এবং ওষুধের প্রয়োগ।

• স্টক নিয়ন্ত্রণ, স্টোরেজ, অর্ডার দেয়া , লেবেল লাগানো এবং আর্থিক বাজেট স্থাপনের দায়িত্ব গ্রহণ এবং ডিসপেন্সারীর হিসাবরক্ষন।

• ওষুধ সরবরাহ এবং ওষুধের প্রয়োগ যথাযথ ফর্ম নিয়ে আলোচনা করার জন্য রোগী, ডাক্তার এবং নার্সদের সাথে স্বমন্বয় করা।

অনেকেরই ধারণা, ফার্মাসি পড়লে শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোতে কাজ করতে হয়। এর বাইরেও তাঁদের জন্য কাজের নানা ক্ষেত্র রয়েছে। ফার্মাসিস্টদের কাজ শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোতে নয়, ওটা তাঁদের কয়েকটি কাজের জায়গার মাত্র একটি। এর বাইরে তাঁদের সরকারি নানা দফতর, সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, কমিউনিটি ফার্মাসি, শিক্ষকতা, গবেষণাসহ অন্যান্য ক্ষেত্র। ফার্মাসিস্ট বা ওষুধ বিশেষজ্ঞ হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি ফার্মেসি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং বিধিবদ্ধ সংস্থা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে ফার্মেসি পেশা চর্চার জন্য নিবন্ধন পেয়েছেন।

দেশের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার,নার্সদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা এ সংস্কৃতিটা চালু করতে পারিনি। উন্নত বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে সম্পাদন করেন ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট ও নার্স। তাই স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এদেশের ফার্মেসি সেবার মান বাড়ানো অতীব জরুরি। তা না হলে স্বাস্থ্যসেবা আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাবে না। এ দেশের হাসপাতালগুলোতে ফার্মেসি সেবা চালু হলে বাজার থেকে ওষুধ সংগ্রহ করা এবং ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রোগীর কাছে হস্তান্তর করা নিয়মতান্ত্রিক হবে। ১৯৯৭ সালে একবার পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে দেশের বড় ৬টি হাসপাতালে ’হসপিটাল ফার্মেসি’ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের মধ্যে দ্বৈত প্রশাসন সৃষ্টি হবার ধুয়া তুলে তৎকালীন কারো কারো বিরোধিতায় সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মত ’হসপিটাল ফার্মেসী’ চালুর উদ্যোগ সফল হলে সার্বিক ওষুধ শিল্প এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।

বিশেষজ্ঞ ফার্মাসিস্টরা চিকিৎসার জন্য ওষুধ ব্যবহার সংক্রান্ত জটিলতার।সমাধান, ওষুধের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নজরদারি ও প্রতিরোধকরণে বিশেষ পারদর্শী। সর্বোপরি রোগীর চাহিদা অনুযায়ী ফার্মেসি সেবা প্রদূ করতে হলে ফার্মাসিস্টের কোনো বিকল্প নেই। আশার বিষয় যে এদেশের বেসরকারি হাসপাতাল, যেমন স্কয়ার, ইউনাইটেড, অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই উন্নত মানের ফার্মেসি সেবা দানের জন্য ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করছে কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়।

তবে অত্যান্ত আনন্দের সংবাদ এইটা যে গত ২০.১২.২০২০ইং তারিখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সরাসরি জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৯ম গ্রেডে ১০টি সরকারি হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন। যেটা আমাদের দেশের সকল ফার্মাসিস্ট এর প্রাণের দাবি। যদিও সংখ্যায় মাত্র ১০জন ফার্মাসিস্ট এর নিয়োগের জন্য আদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কিন্তূ আমি আশা করব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামীতে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আরো অনেক সংখ্যক ফার্মাসিস্ট নিয়োগের আদেশ দিবেন। সেই সাথে দেশের সকল ফার্মাসিস্ট এর দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হবে এবং আমরা ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিক চিকিৎসা সেবা এই দেশের মধ্যে পাবে ইনশাআল্লাহ।

লেখক: প্রভাষক, ফার্মেসি বিভাগ ,যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

ইমেইল: shahin9238@gmail.com

ক্লিনিকাল ফার্মেসীগ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টনিউক্লিয়ার ফার্মেসীফার্মাসিস্টভেটেরিনারি ফার্মেসীমডেল ফার্মেসীহসপিটাল ফার্মাসিস্টহসপিটাল ফার্মেসী
Comments (০)
Add Comment