বিপিডি ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তীব্র রাগ, ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, বিরক্তি অনুভূতি, মানসিক অস্থিরতা, হতাশা, আবেগপূর্ণ আচরণ, উদ্বেগ, অত্যন্ত পরিবর্তনশীল মেজাজ, শূন্যতার দীর্ঘস্থায়ী অনুভূতি ইত্যাদি লক্ষণ থাকে যা কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন অবধি স্থায়ী হতে পারে । বিপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্যের সাথে অনেক তাড়াতাড়ি গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পরে কিন্তুু সেই সম্পর্ক বেশী দিন স্থায়ী হয় না । তারা একদিন যাকে বন্ধু হিসেবে দেখে তাকে পরের দিনই তাকে শত্রু বা বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বিবেচনা করতে পারে । উল্লেখিত লক্ষণগুলো ছাড়াও তাদের সাথে আরও কিছু লক্ষণ জড়িত থাকতে পারে যেমন অন্যদের বিশ্বাস করতে অসুবিধা, নিজে নিজের ক্ষতি করার আচরণ বা আত্মঘাতী আচরণ বা হুমকি ইত্যাদি । সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা আত্মহত্যার প্রয়াস চালায় তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশ মানুষই বিপিডিতে আক্রান্ত । আক্রান্ত রোগীর মধ্যে প্রতি ১০ জনে ১ জন আত্মহত্যা করতে সফল হয় । বিপিডিতে আক্রান্ত রোগীর আত্মহত্যা করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশী থাকে ২০ বছর বয়সে এবং ৩০ বছর বয়সের পরে আত্মহত্যা বেশী হয়ে থাকে । তাদের কোন কিছুর প্রতি আগ্রহ খুব দ্রুতই পরিবর্তন হয়ে যায় । বিপিডি আক্রান্ত প্রত্যেকেরই প্রতিটি লক্ষণই দেখা যায় এমনটা নয় । কারও কারও ক্ষেত্রে কয়েকটি লক্ষণ আবার কারও কারও ক্ষেত্রে সব গুলো লক্ষণই দেখা যায় । লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে যা সাধারণত কৈশোরে থেকে শুরু হয়ে যৌবনেও অব্যাহত থাকতে পারে ।
বিপিডি হওয়ার কারনগুলি এখনও অস্পষ্ট । তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেনেটিক, মস্তিষ্কের গঠন ও পরিবেশকে এর প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে শৈশবকালে ঘটে যাওয়া আঘাতজনিত ঘটনা, পিতামাতার অবহেলা, শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি ।
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার চিকিৎসা করা কঠিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় । প্রশিক্ষিত পেশাদার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা ক্লিনিকাল সমাজকর্মীর মনস্তাত্ত্বিক থেরাপি (সাইকোথেরাপি) অনেক সময় ভাল ফলাফল নিয়ে আসে আর এটিকে বিপিডির প্রথম লাইনের চিকিৎসা বলা হয় । রোগীর সাক্ষাৎকার, মেডিকেল পরিক্ষা এবং পারিবারিক মানসিক অসুস্থতার ইতিহাস ইত্যাদি বিবেচনা করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসার নকশা নির্ধারণ করেন । চিকিৎসকরা বিভিন্নভাবে চেষ্ঠা করেন রোগীর তীব্র আবেগ, স্ব-ধ্বংসাত্মক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে। তার পাশাপাশি চেষ্টা করা হয় পরিবাবের সাথে রোগীর সম্পর্ক উন্নত করতে ।
চিকিৎসকের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও কিছু ভূমিকা পালন করতে হয় যেমন রোগীর সংবেদনশীলতাকে সমর্থন, রোগীকে বোঝতে পারা, পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধারণ করা, রোগীকে উৎসাহ দেয়া, পরিবারের সদস্যদের বিপিডি ব্যাধি সম্পর্কে জানা যাতে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তির কী অভিজ্ঞতা হয় । তবে আশার কথা হচ্ছে বিপিডি বছরের পর বছর ধরে থাকতে পারে, তবে এটি চিরকাল স্থায়ী হয় না এবং জীবনের কোন না কোন সময় রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠেন । সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াটিকে গতিময় করে তোলে সাইকোথেরাপি । বিপিডি থেকে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরুপে বোঝা যায় না, তবে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগের তীব্রতা কমতে থাকে । রোগীরা তাদের খারাপ পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিতে হয় তা শিখে ফেলে । ৭৫ শতাংশ রোগী ৪০ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে । আর ৯০ শতাংশ রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে ।
লেখক: সিনিয়র মাইক্রোবায়োলজিষ্ট, এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেড।
তথ্যসূত্রঃ ১.ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস, ইউকে । ২. ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ, ইউএসএ । ৩. বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার রিভিউ পেপার অফ কানাডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশন জার্নাল (জুন ৭, ২০০৫) ।