বাংলাদেশ এখন বহির্বিশ্বে উন্নয়নের এক রোল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া ছোট্ট এই দেশটি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হতে ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যবিত্ত দেশের কাতারে পৌছে গেছে এবং অচিরেই ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে পৌছে যাব।
আর এই অগ্রগতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশের শিল্পখাত।এখন বাংলাদেশের শিল্পখাত বলতে অনেকেই আমরা তৈরি পোশাক শিল্পকেই বুঝি। তবে তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশিও দেশের ঔষধ শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশে ঔষধ শিল্প যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান আমলে ’৫০ এর দশকে। মূলত ’৮০ র দশক থেকেই দেশে ঔষধ শিল্পের উত্থান শুরু হয়। বর্তমানে দেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্বাবধানে ২৬৫ টিরও ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের ফার্মাসিস্টরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। ঔষধ শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহ দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী খাত। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, দেশে ঔষধ শিল্পের বাজার প্রায় ২০৫.১২ বিলিয়ন টাকা (IQVIA Report). বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনু্যায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঔষধ শিল্প দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১.৮৩% অবদান রেখেছে যা ফার্মাসিস্ট এবং এই শিল্প সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই গর্বের বিষয়।
২০১৬-২০২১ এই ছয়টি বছর বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের জন্য স্মরণীয় কেননা ঐ সময়ে এই শিল্পখাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৪.৬% এবং ২০১৯-২০ সালে যখন পুরো বিশ্ব করোনা মহামারীতে আক্রান্ত তখনও প্রবৃদ্ধির হার যথেষ্ট উর্ধবমুখী ছিল আর পেছনে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এমতবস্থায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশকে জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকরনের হাব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ঔষধ শিল্পের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তিগত স্বল্পতা এবং দক্ষতার অভাবে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি পাশাপাশি অতিমাত্রায় কাঁচামাল আমদানি নির্ভরতাও এর অন্যতম কারণ। উন্নত বিশ্বে টিকে থাকতে দেশের ফার্মাসিস্টদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিংবা বায়োফার্মার মত প্রযুক্তি সমূহ আয়ত্ত্ব করা অতীব জরুরি তবেই উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
লেখক: ফার্মেসি বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ।
আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশের ঔষধশিল্পে করোনার প্রভাব