করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু বিদ্যমান ও নতুন ড্রাগের ট্রায়াল আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হওয়ার খবর শুনেছি ।যার মধ্যে টোয়ামা ক্যামিকেল ও গিলিয়াড সায়েন্সের ট্রায়াল অন্যতম।সাধারণত বিদ্যমান কোন ঔষধের এমন ট্রায়ালের সময় এটিকে “রিপার্পাসডড্রাগ” বলা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি বিদ্যমান এক ঔষধের একটি খবর আমরা শুনেছি।যেটি কভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহার করার জন্যে ট্রায়াল হয়েছে।এই ট্রায়ালটি করেছে ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা কথা বলছি“ ডেক্সামিথাসন “ নিয়ে।
ডেক্সামিথাসন নামটি আমাদের দেশের মানুষের কাছে খুব বেশি পরিচিত না হলেও বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন কারণে অনেকেই এটি নিয়ে থাকে।যদিও এটি একটি প্রেসক্রিপশন ড্রাগ অর্থাৎ কোন প্রকার পরামর্শ এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া এটি বিক্রয় ও সেবন করা উচিত নয়।কিন্তু আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এটির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
এখন দেখি এইডেক্সামিথাসন আসলে কি।
ডেক্সামিথাসন একটি সংশ্লেষিক স্টেরয়েড।মুলতঃএটি একটি গ্লুকোকর্টিকয়েডধর্মী কর্টিকোস্টেরয়েড।১৯৬১সালে এটি ব্যবহারের অনুমোদন পায়।ডেক্সামিথাসন আবিস্কারের পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু ক্লিনিক্যাল কন্ডিশনের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার হয়েছে ও হচ্ছে।অনেক কারনে এটি কে ব্যবহার করা যেতে পারে।ডেক্সামিথাসন মানব শরীরে দুইটি বিশেষ অর্থে কাজ করে।একটি হলে এন্টিইনফ্লেমেটরি বা বিরোধীপ্রদাহজনক ও ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট।
এটিসকলক্ষেত্রেসাধারণতগ্লুকোকর্টিকয়েডবিশেষএকরিসেপ্টরেরসাথেযুক্তহয়েমানবশরীরেকাজকরেথাকে।যারনামগ্লুকোকর্টিকয়েডরিসেপ্টর।এইরিসেপ্টরেরসাথেযুক্তহয়েপ্রদাহ-উদ্দিপকপ্রোটিনওরোগ-প্রতিরোধক্ষমতারসাথেসংশ্লিষ্টকোষেরউপরকাজকরেথাকে।
ডেক্সামিথাসন সেবনের বেশ খারাপ রকমের কিছু পার্শ্বপতিক্রিয়া আছে।উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল মাত্রা, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া, রক্তে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া, অস্থি ক্ষয়, অস্থির ঘনত্ব কমে যাওয়া অন্যতম।এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবহারে এটি বার বার নেওয়ার একটি প্রবনতা (ডিপেন্ডেন্সি) তৈরি হতে পারে।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড (University of Oxford) তাদের এ ট্রায়ালের (COVID -19 রোগীর উপর) ফলাফল দিয়েছে RECOVERY (RANDOMISED EVALUATION OF COVID-19 THERAPY) ট্রায়ালে।যেখানে বলা হয়েছে ডেক্সামিথাসন দেওয়ার ফলে অক্সিজেন সাপোর্ট ও ভেন্টিলেটর সাপোর্টে আছে এমন রোগীর মৃত্যুর হার কমছে। এবং এই ট্রায়ালে যে সকল রোগীর উপর এই ড্রাগের প্রয়োগ করা হয়েছে তারা আরও কয়েক রকমের ড্রাগের মধ্যে ছিলো অর্থাৎট্রায়ালের অংশ হিসেবে ডেক্সামিথাসন একদম স্বল্পমাত্রার ডোজে অন্যান্য কয়েকটি ড্রাগের সাথে শুধু তাদেরকেই দেওয়া হয়েছিল যারা অক্সিজেন সাপোর্ট এবং ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিল।
ট্রায়ালের এই খরবটি BBC প্রকাশ করে এবং স্বাভাবিকভাবে আমাদের দেশে ছড়িয়ে যায়।আমরাও আসলে এমন খবর শুনে খুশি হয়ে যায়।ঔষধ সে যাই হোক আমরা নাম শুনলে ঔষধ ক্রয়ের একটা যুদ্ধ লেগে যায়।সঙ্গত কারনে এমন খবর আমাদের দেশের জন্য মারাত্মক হতে পারে, কারণ আমরা ঔষধ খেতে পছন্দ করি!তাছাড়া প্রেসক্রিপশন শেয়ার করার একটি মারাত্মক রকমের প্রবণতা আমাদের মধ্যে আছে।যা প্রতিনিয়ত আমাদের এক ঔষধ যুদ্ধের দিকে ধাবিত করছে।
আমাদের দেশে এখন সামান্য সর্দি-জ্বরেও ডেক্সামিথাসনের ব্যবহার হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে অথচ যে ট্রায়ালের কথা শুনে ডেক্সামিথাসন ব্যবহার করছি সেই ট্রায়ালে রোগীর ধরনের কথা উল্লেখ ছিল (অক্সিজেন সাপোর্ট ও ভেন্টিলেটর সাপোর্টে আছে এমন)।
এখন কথা হলো, কি হবে যদি অন্যরা এটি নিয়ে থাকে ?
শুরুতেবলেছি, এটি একটি ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট।সহজ কথায় এটি আপনার ইমিউনিটির ডিফেন্স প্রক্রিয়া কে কমিয়ে দেবে।অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের শরীরের ইমিউনিটি অতিমাত্রায় সক্রিয় বা ওভারএক্টিভ হয়ে যায়।এমন অবস্থায় সামান্য ইনভেশন বা অনুপ্রবেশের চেষ্টাকে খুব ভালোভাবে বিবেচনা করে সক্রিয় হয়ে যায় এবং এলার্জি সংশ্লিষ্ট উপসর্গ দেখায়।সাধারনত সঠিক প্রমাণের ভিত্তিতে তখন স্টেরয়েড চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।তবে পরামর্শ ছাড়া বা অধিকমাত্রার ব্যবহারের কারণে যে কেও ইনফেকশনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।আর এইবিষয়টা এমন করোনা মহামারীতে হতে পারে ভয়ানক।কারন, আমদের এখন ইমিউনিটির সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বলছে, এমুহূর্তে ইমিউনিটি হতে পারে এমন একটি ব্যবস্থা যা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
তাই ডেক্সামিথাসনের ভুলও অপ্রয়োজনীয় প্রয়োগ আপনার অজান্তেই আপনারই ইমিউনিটিকে কমিয়ে দিবে।অর্থাৎএমন করোনার সময়ে যখন আপনি লেবু, কমলা, ডিম এইসব খাচ্ছেন নিজের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ডেক্সামিথাসন ঠিক উল্টোটা করেদেবে।
তাইনা-বুঝে, সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখে আর খবর পড়ে ঔষধ সেবন নয়।এতে আপনার জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ফার্মাসিস্ট বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াঔষধ সেবন নয়। ট্রায়াল অংশের বিস্তারিত দেখতে পারেন www.recoverytrial.net থেকে
লেখক: ফার্মাসিস্ট, মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ,পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।