বেশী বেশী জীবাণুনাশক ব্যবহার নতুন কোন বিপদ নিয়ে আসছে না তো?

পৃথিবী এখন সময় পার করছে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে। এক অদৃশ্য জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ছে বিশ্ব।আর এই যুদ্ধ জয়ের একটি হাতিয়ার হিসেবে  কাজ করছে জীবাণুনাশকের ব্যবহার। বিশ্বের সব মানুষই আজ শিখে গেছে কিভাবে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে হাত থেকে শুরু করে বাসা বাড়ি, রাস্তা ঘাট জীবাণুমুক্ত করতে হয়। আর সর্বস্তরের মানুষের জীবাণুনাশকের ব্যবহার জানাতে পারা টা, কিছু কিছু দেশের জন্যে নতুন সংযোজন।

বর্তমানে মানুষ অনেক ধরনের কেমিক্যাল যেমন এলকোহল, ক্লোরিন যৌগিক পদার্থ, কোয়াটারনারি অ্যামোনিয়া, আয়োডিন, পার- অক্সিজেন, ফিনল, বেনজালকোনিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি ভিত্তিক জীবাণুনাশক ব্যবহার করছে। এক একধরনের জীবাণুনাশক এক এক ভাবে যেমন জীবাণুর দেহের লিপিড বা আমিষ কে নষ্ট করে, কোষ পর্দা বা কোষপ্রাচীর কে নষ্ট করে, জীবাণুর উৎসেচক বা এনজাইম উৎপাদন বন্ধ বা নিস্ক্রিয় বা পরিবর্তন করে, কোষ বিভাজন বন্ধ করে, ফ্রি রেডিকেল অক্সিডেশানের মাধ্যমে, আরএন এ অথবা ডিএন এ কে পরিবর্তন করে জীবাণুকে ধংস করে।একটি নিদির্ষ্ট জীবাণুনাশক জীবাণুকে ধংস করার জন্যে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয় যা কে বলা হয় কন্টাক টাইম।আর এই কন্টাক টাইমটা ভিন্ন ভিন্ন জীবাণুনাশকের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন হয়।

নিয়মিত বেশী বেশী জীবাণুনাশকের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্যে ঝুকিপূর্ণ হতে পারে। আমাদের ত্বকে তিনটি স্তর থাকে যা আমাদের দেহে জীবাণুর অনুপ্রবেশকে বাধা প্রধান করে।আর এই জীবাণুনাশকই জীবাণু মেরে ফেলার সাথে সাথে আমাদের ত্বককে শুষ্ক, ত্বকে চুলকানি, ত্বকে জালাপোড়া, ত্বকের ক্ষয়, ত্বক দিয়ে রক্তপড়া থেকে শুরু করে ডার্মাটাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের ত্বকে অনেক উপকারি ব্যাক্টেরিয়া থাকে যারা সবসময় ত্বকের রোগ তৈরি করতে সক্ষম ঐ ধরনের ব্যাক্টেরিয়াকে ত্বকে জন্মাতে দেয় না।কিন্তু জীবাণুনাশক ত্বকের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে ও ধংসকরে। ফলে ত্বকের রোগ তৈরি করতে সক্ষম জীবাণুগুলো সক্রিয় হয়ে বিভিন্ন রকম ত্বকের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্যে, ত্বকে সবসময় উপকারী ব্যাক্টেরিয়াগুলোর উপস্থিতি প্রয়োজন।

অনেক জীবাণুনাশকই  (যেমনঃ সোডিয়াম অথবা ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট ভিত্তিক) উদ্বায়ী পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয় যা বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করতে পারে অন্য ক্যামিকেলের সাথে বিক্রিয়া করে। এই বিষাক্ত গ্যাস নিঃশ্বাসের সাথে গিয়ে মানুষের ফুসফুসে বিভিন্ন ধরনের রোগের কারন হতে পারে। আবার অনেক জীবাণুনাশক (যেমনঃ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভিত্তিক) আছে যা চোখের সংস্পর্শে আসলে চোখ নষ্ট হয়েও যেতে পারে। গ্যাস জাতীয় জীবাণুনাশক(যেমন ফরমালডিহাড, ইথাইলিন অক্সাইড) ত্বকের ক্যান্সার ও স্নায়ুতন্ত্রের রোগ তৈরি করতে সাহায্য করে। কিছু কিছু জীবাণুনাশক শুধু জীবাণুকেই মারেনা, মানুষকে ও মারতে পারে যদি জীবাণুনাশক মানুষের পেটে চলে যায়।

তাই জীবাণুনাশক ক্রয় করার পূর্বে বোতলের গায়ে কিছু তথ্য খেয়াল করে ক্রয় করতে হবে,যা হল জীবাণুনাশকটির প্রস্তুতকারক বা ব্র্যান্ডের নাম টি সুপরিচিত বা বিশ্বস্ত কি না, বোতলের গায়ে সব তথ্য যেমন কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে, ব্যবহারের পূর্বে কি কিসুরক্ষা ব্যবস্থা (পিপিই) গ্রহন করতে হবে, কতক্ষণ কন্টাক টাইম দিতে হবে জীবাণু মুক্ত করার জন্যে।সর্ব পরি দেখতে হবে জীবাণুনাশক টি কোন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যেমন এফডিএ, ডাব্লিওএইচও, ইপিএ, সিডিসি, ডিজিডিএ ইত্যাদি দ্বারা অনুমোদন প্রাপ্ত কিনা।একমাত্র প্রস্তুতকারকের নিয়ম মেনে জীবাণুনাশকের ব্যবহারই পারে আমাদেরকে জীবাণু ও জীবাণুনাশকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে।

লেখক: সিনিয়র মাইক্রোবায়োলজিস্ট, এসিআই হেলথ কেয়ার লিমিটেড । 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *