ঔষধে করোনা যোদ্ধা এবং আমাদের ভাবনা

মনোজিৎ কুমার রায়

0

করোনা শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘মুকুট’।মুলত এর আকৃতির উপর ভিত্তি করেই এই নাম করন করা হয়েছে।নামটা যতটা না সুন্দর তার চেয়ে ভয়ানক হচ্ছে তার কার্যক্রম।কুরোনা নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছুই নেই।রাষ্ট্র আর সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে করোনার উৎস,রোগেরলক্ষন,সচেতনতা,প্রতিকার আর প্রতিরোধের উপায় আমরা অনেকটাই জেনে গেছি।

প্রসঙ্গ-১ 

করোনা চিকিৎসায় সচেতনতার পাশাপাশি ঔষধের বিকল্প নেই।যেকোন রোগেরই উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা হচ্ছে ঔষধ।আর সেই ঔষধ উৎপাদনে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন ঔষধশিল্প প্রতিষ্ঠান।দেশের প্রায় সিংহ ভাগ ঔষধের যোগান দিচ্ছে দেশীয় সকলঔষধশিল্প প্রতিষ্ঠান।করোনার মত দুর্যোগে ঔষধের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে।সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, কিছু কিছু ফার্মেসিতে অনেক চড়া দামে ঔষধের দাম নিতে যা কি না নির্ধারিত মূল্যর চেয়ে অনেক বেশি।প্রশ্ন করলে জানা যায় যে,সাপ্লাই নেই তাই দাম বেশি।কোন ঔষধকোম্পানিই ঔষধের দাম বাড়ায় নি তাহলে কিভাবে এইদাম বাড়ছে তা অজানা।ক্রেতামহল অনেকেই ঔষধকোম্পানি কে দুষছে যা কিনা সম্পূর্ণ ভুল।

একটু অন্যভাবে বিষয়টা ভেঙ্গে বলি।আমরা যারা ঔষধ কিনছি,অনেকেই হয়তো জানি না যে এর পিছনে কত মানুষের মেধাসত্ব আর শ্রম রয়েছে।এই যে এখন করোনার মহামারী চলছে, লকডাউন চলছিল-চলছে।এইঔষধশিল্প প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন শত শত ফার্মাসিস্ট-মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট-কেমিষ্ট সহ অনেক নিবেদিত প্রাণ।স্বাস্থ্যকর্মী,প্রশাসন,ব্যাংকার,সাংবাদিকদের মত এদেরকেও করোনা যোদ্ধা হিসেবে আখ্যায়িত না করলে অনেকটা অপরাধের মতোই হয়ে যাবে।জীবনকে বাজী  রেখে জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।করোনার এইমহামারীতেও কোথাও কোন ঔষধের সংকট হয়নি।কোন কোন ক্ষেত্রে এক কোম্পানির ঔষধ না পাওয়া গেলেও অন্য কোন কোম্পানিরঔষধ অবশ্যই পাওয়া যাচ্ছে।শুধুমাত্র চাকুরি করার জন্যই নয়, মানবতার টানেও কাজ করে যাচ্ছে তারা।সীমিত পরিসরে অফিস বা লক ডাউন তাদের কাছে অচেনা।

জরুরি সেবায় আড়ালে দিন -রাত ঔষধ উৎপাদন, বিপণন আর গবেষণায় কাজ করে যাচ্ছে। লক্ষ্য একটাই – দেশের মানুষ যেন কোন ভাবেই ঔষধের অভাব অনুভব না করে, উদ্দেশ্য একটাই – দেশ আর মানুষের জরুরি সেবা দেওয়া।শুধু মাত্র করোনা মহামারী তে নয়, সেই কবে থেকেই তো উনারা হরতাল, ধর্মঘট সহ বিভিন্ন প্রতিকুল পরিস্থিতিতে দিন – রাত কাজ করে যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত ঔষধ এর ঘাটতি বাজারে তারা পড়তে দেয়নি আর জীবন থাকতে দিবেও না।বর্তমানে করোনায় যে ঔষধ চলছে সেটাও তাদের মাধ্যমেই আসছে। আশা করি, সামনে যে করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন আসবে সেটাও তাঁদের মাধ্যমেই আসবে। তাই এতটুকুই প্রত্যাশা, উনাদেরকে প্রশাসন -স্বাস্থকর্মী -ব্যাংকারদের মতোই করোনা যোদ্ধা হিসেবে সম্মান দিয়ে দয়া করে আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন আর নিজেকে করোনা মুক্ত রাখুন। উনারা ঘরে থাকতে পারবেন না, আপনার জরুরি সেবার জন্য তারা কাজ করছেন, তাকে সুন্দর ভাবে কাজ করতে সহযোগিতা করুন।

কোন প্রণোদনার আশা নয়, অন্য কোন পেশার সাথে তুলনা ও নয়, দিন শেষে ওই অসুস্থ মানুষটাকে তাদের শ্রমে তৈরি ঔষধের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলাটাই তাদের বড় প্রণোদনা। কারণ আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে, ফার্মেসি থেকে যে একটা ট্যাবলেট কিনি, তার পিছে হাজারো মানুষের মেধা, শ্রম আর ভালবাসা জড়িত।আর তারা কিনা ঔষধের দাম বাড়াবে, আর সেটা কিভাবে সম্ভব। এমনিতেই মানুষের অর্থ  আয় করার পথ অনেক সরু হয়ে গেছে, এর উপর এভাবে দাম বাড়ালে জরুরি অবস্থায় তাদের অবস্থা কি হবে সেটা শুধু যারা ভুক্তভোগী তারাই বুঝেন।যেসব অসাধু ব্যাবসায়ীরা এসব সঙ্কট তৈরি করছে প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করা দরকার।

প্রসঙ্গ-২

জীবনকে বাজি রেখে জরুরি সবাই নিয়োজিত নিবেদিত প্রাণগুলো প্রতিনিয়ত করোনার ঝুঁকি নিয়ে দিন পাড়ি করছে আর অপরদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে আমরা অনেকেই প্রকৃতি দেখতে প্রতিদিন বাইরে বেরহয়ে আসছি, প্রশাসনের সাথে প্রতিদিন চোর -পুলিশ খেলছি। আরে খেলা তো আমাদের জীবনের সাথে চলছে। প্রশাসন দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আর আমরা উল্টো দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি করোনা ভাইরাস কে ঘরে আনবার। আক্রান্ত আর মৃত্যুর মিছিলে আমাদের যোগদান থামছে না।দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্ত আর মৃত্যু পথযাত্রীদের।এর শেষ কোথায়!

প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের উপসর্গগুলো গোপন করার জন্য। তাদেরও পরিবার আছে, অথচ আমাদের চরম গাফিলতার জন্য তাদেরচরম মূল্য দিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে জরুরি সেবা দেওয়ার মানুষ কি থাকবে ! নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারার মত। আমরা সচেতন বটে !!!

বাজারে গেলে তো মনে হয় না আমরা মহা দুর্যোগে আছি। এমনও দেখা গেছে আমরা প্রতিদিন বাজার করছি যাতে আমার ঘরে কোন কমতি না হয়, বাই চান্স যদি আমার এরিয়া লক ডাউন হয়ে যায়। আরে ভাই, প্রতিদিন যে বাইরে যাচ্ছেন, বাজার না হয় হলো,সাথে আড্ডাও ফ্রি হলো, খেতে পারবো তো !!! কারণ আড্ডা তো আপনার জীবাণুরসাথেও হয়ে গেলো, জীবাণু কি আপনাকে ছেড়ে দিবে? আমরা সচেতন বটে !!!তাই প্রতিদিন বাজার লাগে না, প্রতিদিন ঔষধ কেনাও লাগে না,প্রতিদিন ব্যাংকেও যাওয়া লাগে না ।এমনকি ঔষধ ষ্টক করারও কিছু নেই, একজনের ষ্টক করাতে আরেকজন ভুক্তভোগী হচ্ছে।

জরুরি প্রয়োজন হলেই বাইরে যাব – এভাবেইআজ থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, করোনা যোদ্ধাদের সহযোগিতা করি।

সচেতন হওয়ার পরও যদি আক্রান্ত হয়ে যান, তখন না হয় কপালের দোষ দেন, তার আগে নয়। তাই, সচেতন হওয়ার অভিনয় না করে সত্যিকারের সচেতন মানুষ হওয়ার একটু চেষ্টা করি। তাহলেই হয়তো বেঁচে যাবে আমি, আপনি সহ সকল জরুরি সেবায় নিয়োজিত করোনা যোদ্ধারা।আর সকলের সহযোগিতায়বাংলাদেশ হবে করোনা মুক্ত। রাত শেষে ভোর হবেই, সুন্দর ভোরের অপেক্ষায় সকল করোনা যোদ্ধাদের সহযোগিতা করুন ।

লেখকঃ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার , মাইক্রোবায়োলজি , জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ।  

 

 

মতামত দিন
Loading...