ফার্মাকোভিজিলেন্সের ইতিহাস: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ

ফার্মাকোভিজিলেন্সের ইতিহাস

ফার্মাকোভিজিলেন্সের ইতিহাস ওষুধের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এসেছে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য ফার্মাকোভিজিলেন্স প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে মূলত ১৯৬০-এর দশকের শুরুর দিকে।

ওষুধের নিরাপত্তা সম্পর্কে ধারণা ১৯০০-এর দশকের প্রথম দিকে উন্নত দেশগুলোতে বিকশিত হতে থাকে। তবে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য বা নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা তখনো তেমন গুরুত্ব পায়নি।

ফার্মাকোভিজিলেন্সের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো থ্যালিডোমাইড ট্রাজেডি। ১৯৫০-এর শেষ দিকে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি বেদনানাশক ওষুধ হিসেবে থ্যালিডোমাইড ব্যবহৃত হচ্ছিল, যা জন্মগত ত্রুটির কারণ হয়। এর ফলে হাজার হাজার শিশু অঙ্গহীন বা ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

এই বিপর্যয় ওষুধের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে তোলে। থ্যালিডোমাইড ট্রাজেডির পর ১৯৬৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ফার্মাকোভিজিলেন্স কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করে। তারা “ইন্টারন্যাশনাল ড্রাগ মনিটরিং প্রোগ্রাম” চালু করে যা বৈশ্বিকভাবে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। এই প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিকভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করা।

বর্তমানে বিভিন্ন দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিক ফার্মাকোভিজিলেন্স সেন্টার রয়েছে যা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মনিটর করে এবং রিপোর্ট করে। এর মধ্যে ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (EMA), ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA), এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে, ওষুধের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ফার্মাকোভিজিলেন্সকে আরও কার্যকর করা হচ্ছে। ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ডস, সামাজিক মিডিয়া ডেটা, এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ফার্মাকোভিজিলেন্সের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে​

ফার্মাকোভিজিলেন্সের এই ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে বর্তমান যুগে ওষুধের সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেক বেশি শক্তিশালী এবং কার্যকর হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *