মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মহামারির উপস্থিতি দেখা গেছে। কখনো কলেরা আবার কখনো বা প্লেগ নামে আমরা মহামারিকে চিহ্নিত করেছি। তবে যে নামেই মহামারি পরিচিতি পেয়েছে না কেনো প্রতিবারই কেড়ে নিয়েছে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ।
ইতিহাসে মহামারির কালো ছোয়া লেগেছে অনেকবার। এর কোনো কোনোটা সম্পর্কে আমরা হয়তো জানি আবার কোনোটা এখন কালের বিবর্তনে হারিয়েও গেছে। মহামারির কারণে বহু নগর সভ্যতা হারিয়েছে, অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
কয়েক হাজার বছর আগের পৃথিবী শাসন করা মিসরের ফারাওয়দের অবিকৃত মমির গায়েও গুটিবসন্তের চিহ্ন মিলেছে। গোটা পৃথিবী শাসন করা এসব শাসকদেরও হার মানতে হয়েছিল মহামারির কাছে। সেসব এখন ইতিহাস।
সহজ করে বলতে গেলে, মানব সভ্যতার ইতিহাসের শুরু থেকেই রয়েছে মহামারির প্রাদুর্ভাব। অনেক গল্প, উপন্যাস, সিনেমাও তৈরি হয়েছে এ নিয়ে।
তাছাড়া মহামারির বিস্তার রোধে নির্দিষ্ট এলাকার মানুষকে অন্য এলাকায় ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে অনেক ধর্মে।
এখানে সময়ের সাথে সংঘটিত কয়েকটি বড় মহামারীর তথ্য দেয়া হল
নাম |
সময় কাল (সাল) |
টাইপ / প্রাক-মানব হোস্ট |
মৃত্যুর হার |
অ্যান্টোনিন প্লেগ | 165-180 | বসন্ত বা হাম | ৫ মিলিয়ন |
জাপানিজ গুটি বসন্ত মহামারী | 735-737 | ভারিওলা মেজর ভাইরাস | ১মিলিয়ন |
জাস্টিনিয়ান প্লেগ | 541-542 | ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটিরিয়া / ইঁদুর,মাছি | ৩০-৫০ মিলিয়ন |
কৃষ্ণ মৃত্যু | 1347-1351 | ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটিরিয়া / ইঁদুর, মাছি | ২০০ মিলিয়ন |
নিউ ওয়ার্ল্ড স্মলপক্সের প্রাদুর্ভাব | 1520 – এর পরে | ভারিওলা মেজর ভাইরাস | ৫৬ মিলিয়ন |
লন্ডনের দুর্দান্ত প্লেগ | 1665 | ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটিরিয়া / ইঁদুর, মাছি | ১০০০০০ |
ইতালিয়ান প্লেগ | 1629-1631 | ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটিরিয়া / ইঁদুর, মাছি | ১ মিলিয়ন |
কলেরা মহামারী | 1817-1923 | ভি কলেরা ব্যাকটিরিয়া | ১ মিলিয়নের বেশি |
তৃতীয় প্লেগ | 1885 | ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটিরিয়া / ইঁদুর, মাছি | ১২ মিলিয়ন (চীন এবং ভারত) |
হলুদ জ্বর | 1800 এর শেষ দিকে | ভাইরাস / মশা | ১০০০০০-১৫০০০০ (মার্কিন) |
রাশিয়ান ফ্লু | 1889-1890 | H2N2 (এভিয়ান ) | ১মিলিয়ন |
স্প্যানিশ ফ্লু | 1918-1919 | এইচ 1 এন 1 ভাইরাস / শূকর | ৪০-৫০ মিলিয়ন |
এশিয়ান ফ্লু | 1957-1958 | এইচ 2 এন 2 ভাইরাস | ১.১ মিলিয়ন |
হংকং ফ্লু | 1968-1970 | এইচ 3 এন 2 ভাইরাস | ১মিলিয়ন |
এইচআইভি / এইডস | 1981-বর্তমান | ভাইরাস / শিম্পাঞ্জি | ২৫-৩৫ মিলিয়ন |
সোয়াইন ফ্লু | 2009-2010 | এইচ 1 এন 1 ভাইরাস / শূকর | ২০০০০০ |
সার্স | 2002-2003 | করোনভাইরাস / বাদুড়, খাটাশ | ৭৭০ |
ইবোলা | 2014-2016 | ইবোলাভাইরাস / বন্য প্রাণী | ১১০০০ |
মার্স | 2015-বর্তমান | করোনভাইরাস / বাদুড়, উট | ৮৫০ |
COVID-19 | 2019-বর্তমান | করোনাভাইরাস – অজানা (সম্ভবত প্যাঙ্গোলিনস) | ২৪৮২০০ (জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের, মে 4, 2020 এ হিসাবে) |
দ্রষ্টব্য: উপরে তালিকাভুক্ত অনেক মৃতের সংখ্যা উপলব্ধ গবেষণার ভিত্তিতে সন্নিবেশিত
মানুষ যেমন এখন মহামারি সংক্রান্ত দুর্যোগ সামলাতে ইতিহাসের যেকোনও সময়ের তুলনায় বেশি সক্ষম, তেমনি যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু মানুষের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও বেশি। অথচ, মহামারি ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সব দেশ সমানভাবে প্রস্তুত নয়। আজকের যুগে কেবল মহামারির কারণ ও এর প্রতিরোধের রাস্তা আবিষ্কারই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মহামারি ব্যবস্থাপনাও অত্যন্ত জরুরি।