মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম ফার্মাসিস্ট

আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে আল-বায়তার

0

আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে আল-বায়তার ধিয়া আল-দিন আল-মালাকী (সংক্ষেপে ইবনে বাইতর) ছিলেন মুসলিম স্পেনের অন্যতম সেরা মুসলিম বিজ্ঞানী এবং মধ্যযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্ভিদবিদ এবং ফার্মাসিস্ট । তিনি  একধারে একজন  ফার্মাসিস্ট, উদ্ভিদবিদ, চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী।


তিনি দ্বাদশ শতাব্দীর শেষদিকে স্পেনীয় শহর মালাকায় (মালাগা) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আন্দালুসিয়ার উদ্ভিদবিজ্ঞানী আবু আল-আব্বাস আল-নবাতির কাছ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান শিখেছিলেন, যার সাথে সাথে তিনি স্পেনে এবং তার আশেপাশে উদ্ভিদ সংগ্রহ শুরু করেছিলেন।

১২১৯ সালে তিনি একটি উদ্ভিদ সংগ্রহ অভিযানের জন্য স্পেন ত্যাগ করেন । এজন্য তিনি আফ্রিকার উত্তর উপকূল বরাবর এশিয়া মাইনর পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিলেন। তাঁর ভ্রমণের সঠিক পদ্ধতিগুলি (স্থল বা সমুদ্র উভয় পথে ) জানা যায়নি, তবে তিনি যে প্রধান জায়গাগুলিতে ভ্রমন করেছেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে বুগিয়া, কাস্তান্টুনিয় (কনস্ট্যান্টিনোপল – ইস্তাম্বুলের পূর্বনাম ), তিউনিস, ত্রিপোলি, বারকা এবং আদালিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । ১২২৪ সালের পরে তিনি মিশরের গভর্নর আল-কামিলের চাকরিতে প্রবেশ করেন এবং প্রধান ভেষজ বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিযুক্ত হন।

১২২২ খ্রিস্টাব্দে আল-কামিল দামেস্কে তাঁর আধিপত্য বাড়িয়েছিলেন এবং রাজ্য বিস্তার । সেই সুবাদে ইবনে আল-বায়তার সেখানে গিয়ে সিরিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের গাছপালা সংগ্রহের সুযোগ পেয়েছিলেন। এতে করে বাইতর আরব ও প্যালেস্তাইন সহ বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে তার উদ্ভিদ সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনার সুযোগ পান। সেখানে অবস্থিত জায়গা থেকে গাছপালা সংগ্রহ করেন।

ইবনে বায়তরের বিশেষ অবদান হচ্ছে ” কিতাব আল-জামি ফাই আল-আদ্বিয়া আল-মুফরদা ” ( The Book of Medicinal and Nutritional Terms) । যা আরবীতে ওষুধী গাছ সম্পর্কিত সবচেয়ে বড় উদ্ভিদতাত্তিক সংকলন। এটি ষোড়শ শতাব্দী অবধি উদ্ভিদবিদদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিল । বইটিতে প্রায় ১৪০০ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের বিবরণ ছিল, মূলত ওষধি গাছ এবং শাকসব্জী রয়েছে যার মধ্যে প্রায় ২০০ টি উদ্ভিদ সম্পর্কে আগে জানা ছিল না। বইটিতে প্রায় ১৫০ জন লেখকের কাজ তুলে ধরা হয়েছে যার বেশিরভাগ আরবি, এবং এটি প্রায় ২০ জন প্রাথমিক গ্রীক বিজ্ঞানীর বিভিন্ন গবেষণা ও ছিল। বইটির লাতিন ভাষায় অনুবাদ ১৭৫৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।

তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থের নাম ” কিতাব আল-মালুঘনি ফাই আল-আদ্বিয়া আল-মুফরদা ” যা একটি চিকিৎসা বিশ্বকোষ হিসেবে পরিচিত। বইতিতে ওষুধগুলি তাদের চিকিত্সাগত মান অনুসারে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এর ২০ টি বিভিন্ন অধ্যায়ে মাথা, কান, চোখ ইত্যাদির রোগ নিরাময়ে উদ্ভিদের গুরুত্ত তুলে ধরা হয়েছিল এবং অস্ত্রোপচারের বিষয়ে তিনি বিখ্যাত মুসলিম সার্জন আবুল কাসিম জহরবীর বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিলেন।

 

তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল হিন্দিবা নামক উদ্ভিদের ক্যান্সার বিরোধী প্রভাব আবিষ্কার । হিন্দিবা’র ” এন্টি ক্যান্সার ” বৈশিষ্ট্য ছিল এবং এটি টিউমার এবং নিউওপ্লাস্টিক রোগের চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি তার গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ করেছিলেন। পরবর্তীতে বিশদ গবেষণায় তার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে নীল সারি, হানজাদে ডোগান এবং জন কে স্নাইডার নামক তিনজন গবেষককে হিন্দিবা’ র পেটেন্ট করা হয়েছিল। 

এই মহান বিজ্ঞানী ও ফার্মাসিস্ট ১২৪৮ সালে সিরিয়ার দামেস্কে মৃত্যু বরন করেন ।

ইবনে বায়তারের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং শ্রেণিবিন্যাস পূর্ব ও আধুনিক পশ্চিমা উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং চিকিত্সার উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

মতামত দিন
Loading...