জাপানের মেক্সট (MEXT) বৃত্তি কথন : পর্ব ১

নূর-আল-আহাদ

0

এশিয়ার প্রথম উন্নত দেশ হচ্ছে জাপান। জাপানে অনেকেই পড়াশোনার জন্য আসতে চান। তবে সবারই একটা অভিপ্রায় থাকে বৃত্তি নিয়ে জাপানে পড়াশোনা করার কারণ জাপানের জীবনযাত্রা মোটামুটি অনেকটাই ব্যয়বহুল।আমাদের দেশ থেকে জাপানে পড়াশোনা করতে আসতে চাইলে মূলত দুই ধরণের বৃত্তি রয়েছে – সরকারি বৃত্তি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি।

 মেক্সট বৃত্তিতে আবেদনের ধরণ :
জাপানে পড়াশোনার জাপান সরকারের বৃত্তি মেক্সট নামে পরিচিত। এটি একটি ২০০ % বৃত্তি প্রোগ্রাম যার অধীনে আপনার বিমান ভাড়া, পড়াশোনার ফুল টিউশন ফিস এবং লিভিং স্টাইপেন্ড দেয়া হয়।
মেক্সট বৃত্তির জন্য দুইভাবে আবেদন করা যায় –
> সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে/এম্বেসীর মাধ্যমে (through embassy/ministry)
> এবং সরাসরি ভার্সিটির মাধ্যমে (through university)।

মিনিস্ট্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আবেদনের পার্থক্য : 
এই দুই পদ্ধতির আবেদনের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে যেমন –

১। এম্বেসী কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মূলত তিনটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করা যায় –
<> Research Student (মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি)
<> Undergraduate Student
<> College of technology student

২। আবার সরাসরি ভার্সিটির মাধ্যমে করলে কেবল মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়। তবে বেশিরভাগ আবেদন করেন মিনিস্ট্রি কিংবা এম্বাসির মাধ্যমেই।

৩। এক নজরে মেক্সট বৃত্তির পরিসংখ্যান দেখে নেয়া যাক –
মাস্টার্স এবং পিএইচডি (১৯৫৫-২০১৮) – ৩৭৫৩ জন মোট বৃত্তিপ্রাপ্ত
আন্ডারগ্রাজুয়েট (১৯৮৮- ২০১৮) – ৫১ জন মোট বৃত্তিপ্রাপ্ত
কলেজ অফ টেকনোলজি (১৯৮৮- ২০১৮) – ৯৭ জন মোট বৃত্তিপ্রাপ্ত
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে মেক্সট বৃত্তি কত বেশি চ্যালেঞ্জিং বিশেষ ব্যাচেলর কিংবা আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে মেক্সট প্রাপ্তদের সংখ্যা খুবই কম।
আবার মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়েও যথেষ্ট প্রতিযোগিতা থাকে। এই ক্ষেত্রে তারাই ঠিক থাকবে যাদের সিজিপিএ ভালো (৩.৫০ এবং তার উপরে ) এবং যাদের গবেষণার কিছুটা হলেও ধারণা আছে থিসিস কিংবা আর্টিকেল প্রকাশনার মাধ্যমে।

৪। সাধারণত ভার্সিটির মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়ার অনেক আগেই শেষ হয়। কিন্তু আপনি যেই ভাবেই আবেদন করেন প্রোগ্রাম কিন্তু একই সময়ে শুরু হয়।

৫। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করলে এম্বেসীতে একটি লিখিত পরীক্ষা দেয়া লাগে যাতে মূলত ইংলিশ, জাপানিজ এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিষয়ভিত্তিক জিনিসগুলো থাকে। এই পরীক্ষার সম্পর্কে সাধারণত এম্বেসীই জানিয়ে দেয়।
ভার্সিটির মাধ্যমে আবেদন করলে সাধারণত লিখিত পরীক্ষার দরকার নেই কিন্তু ভার্সিটিতে আগে আপনাকে একজন সুপারভাইজার ঠিক করতে হবে।
অনেক সময় সুপারভাইজার স্কাইপে ছোট খাটো একটি ইন্টারভিউ নিতে পারেন। আবার উনি হয়তো আপনার গবেষণার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন।

এম্বাসি কিংবা মিনিস্ট্রির মাধ্যমে মেক্সট বৃত্তিতে আবেদন :
আমাদের দেশে মেক্সট এর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়া সাধারণত প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিলের দিকে শুরু হয়।
জাপান এম্বেসী বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে এবং বাংলাদেশের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে এবং কি করে আবেদন করতে হবে তার পূর্ণ বিবরণ দেয়া থাকে।
মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করার পর আবেদনগুলোকে শর্টলিস্ট করে এম্বেসীতে পাঠানো হয়। তারপর এম্বেসী লিখিত একটি পরীক্ষা নিয়ে থাকে।
মেক্সট এর মাধ্যমে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি এর জন্য আবেদন করতে হলে মূলত ইংলিশ এবং জাপানিজ এর উপর পরীক্ষা দিতে হবে।
তবে খুশির কথা হলো আপনি চাইলে ইংলিশ ভার্শনে পড়তে পারবেন। মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি তে জাপানি ভার্শনে পড়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
এবার আসি যারা যারা ব্যাচেলর পর্যায়ে আবেদন করবেন তাদের কথায়।
ব্যাচেলর প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের ইংরেজি, জাপানিজ, বিজ্ঞান এবং গণিতের উপর পরীক্ষা দিতে হবে।
তবে ব্যাচেলর কিংবা আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়াশোনা কেবল জাপানিজ মাধ্যমেই।
লিখিত পরীক্ষার যারা পাস করে তাদেরকে এম্বেসী থেকে একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। আর এই ইন্টারভিউতে আবার অনেকজন বাদ পরে যান।
যারা ইন্টারভিউতে পাস করেন যাদের আবার পছন্দের ভার্সিটিগুলোর থেকে একটি প্রভিশনাল এডমিশন লেটার আরো কিছু ডকুমেন্টসহ এম্বেসীতে জমা দিতে হয়। জমা দেয়ার পর মেক্সট একটি ফাইনাল স্ক্রীনিং করে এবং পরে আপনাকে ফলাফল জানিয়ে দিবে।

 জাপানে পড়াশোনার ধরণ :
জাপানে মূলত প্রায় সব মাস্টার্স প্রোগ্রামই রিসার্চ মাস্টার। আর পিএইচডি তো এমনিতেই ফুল রিসার্চ মোড প্রোগ্রাম।
ব্যাচেলর পর্যায়ের ক্ষেত্রে জাপানিজ ভার্শনে পড়ানো হয়। তাই এই বৃত্তি পেয়ে জাপানে আসার পর প্রথম ১ বছর ভাষা শিখে তারপর ব্যাচেলর ডিগ্রী করতে হয়।

প্রথম পর্বে আজ এ পর্যন্তই । ২য় পর্বে পরবর্তী অংশ আলোচনা করব

লেখকঃ মাস্টার অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, জাপান), 
ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষক (জাপান)

২য় পর্ব পড়ুন 
মতামত দিন
Loading...