কভিড-১৯ ও আমাদের করণীয়

জনি মল্লিক

0

করোনা ভাইরাস মূলতঃএকটি আর.এন.এ ভাইরাস যার বাইরের আবরনে রয়েছে গ্লাইকো প্রোটিন নির্মিত অভিক্ষেপ।আমরা জানি সকল ভাইরাস রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে।করোনাভাইরাসও তাই করছে৷শুরুটা উহান থেকে হলেও এখন পর্যন্ত বিস্তার করেছে প্রায় অনেক দেশেই এবং অনেক মানুষ মারাও গিয়েছে৷ অতিসম্প্রতি আমাদেরদেশেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে এবং হচ্ছে।বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা, একে পেনডেমিক রোগ হিসেবে প্রকাশ করেছে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতার কথা উল্লেখ করেছে।

এখনপ্রশ্ন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত যেন না হই, তার জন্য করণীয়গুলো কি?  কেও আক্রান্ত যদি হয়েও যায়, তবে কি করণীয়?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর হল সতর্কতা ও সাবধানতা।যেহেতু এই ভাইরাসের কোনঔষধ নেই, তাই আমাদের সর্ব্বোচ্চ সতর্ক হওয়া অতি প্রয়োজন।ভাইরাস হোস্ট সেল ছাড়া সংখ্যায় বাড়তে পারেনা এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।আমাদের কোষই হলো করোনা ভাইরাসের আশ্রয়স্থল।তাই কোন ভাবে করোনা ভাইরাসকে কোষে পৌছুতে দেওয়া যাবেনা৷

যা করা প্রয়োজনঃ

  • হাত পরিস্কার রাখা- এলকোহল যুক্ত সেনিটাইজার, হ্যান্ড-ওয়াশ সলুশ্যান, যেকোন সাবান দিয়ে২০-৩০সেকেন্ড হ্যান্ড-ওয়াশ করতে হবে। (এই সকল প্রিপারেশনের উপাদান মুলত ক্ষার যা ভাইরাসের আবরন ভাঙ্গার জন্য যথেষ্ট।তবে হ্যান্ড-ওয়াশের সময়টা মাথায় রাখা  জরুরি)
  •  বাসার মেইন দরজার লক পরিস্কার রাখা।
  • অফিসের এনট্রানসও বহুল ব্যবহৃত দরজার লক সরাসরি হাতেনা খুলে, কনুই দিয়ে খোলা।
  • বাংলাদেশে যেহেতু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে, তাই জনসমাগম এড়িয়ে চলা।(পাবলিক বাস, বিয়ে অনুষ্ঠান, সিনেমা হল,পার্ক..)
  • দেশের বাইরে থেকে যারাএসেছেন তারা দুই-সপ্তাহ বাসায় থেকে নিজেকে আলাদা রাখা।(হোমকোয়ারেন্টাইন)
  • শুভেচ্ছা বিনিময়ে করমর্দন না করা।হাই-হ্যালো তে সীমাবদ্ধ রাখা।(WHO)

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হল ধৈর্য ধারণ করা।

যেহেতু এই রোগ নতুন,দ্রুতছড়ায়,আর কোনঔষধ নেই তাই কেও যদি লক্ষন( জ্বর, শুকনোকাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকব্যাথা) বুঝতে পারে তাহলে প্রথমেই নিজেকে আলাদা করে ফেলাটা উত্তম।কারণ আমরাজানি এইরোগের এখন পর্যন্ত কোন ঔষধনেই ও টেস্টফেসিলিটি পর্যাপ্ত নেই।তাই বাসা থেকে বের হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে ঔষধ না থাকার কারনে ডাক্তার কিছুই করতে পারবেন না(কলকরুন-১৬২৬৩)।উল্টো আপনার কারনে আরো অনেকেই ইনফেক্টেড হতে পারে।নিজেকে আলাদা রেখে ঠিক ভাইরাল ফিবারে যা করি তাই করা উত্তম। (ফলেররস, পরিমিতপানি, ভালখাবার)।

সারা বিশ্বে যারা আক্রান্ত হয়েছে সবাই কিন্তু মারা যায় নি।অনেকেই সুস্থ  হয়েছে।তার মানে তাদের শরীর এই ভাইরাসের বিপক্ষে যুদ্ধ করেই জয়ী হয়েছে। আমাদের শরীরের ইমিউনিটি কিন্তু বসে নেই।ভাইরাসের বিপক্ষে কাজ করার জন্য আমাদের শরীরে প্রতিরোধব্যবস্থা আছে।

ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, জিংকও পর্যাপ্ত পানি আমাদের এই প্রতিরোধব্যবস্থাকে অনেকটাই উন্নত করে।তাই তা করাই শ্রেয়।  আতঙ্কিত হলে আমাদের ইমিউনিটির কোষীয় কার্যক্রমে বাধা আসে।পরিশেষে বলবো, আতঙ্ক নয়, সাবধানতা ও সচেতনতাই সমাধান।আশা করি আমরা সবাই সুস্থ থাকবো, ভাল থাকবো এবং যারা আক্রান্ত, তারা অচিরেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

লেখক: ফার্মাসিস্ট,মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ,পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

মতামত দিন
Loading...