হেলথ মেড সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কের আয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা

স্বপনীল আঁকাশ

0
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষক শিক্ষার্থীদের  অংশগ্রহনে ঢাকায় অনুষ্টিত হলো ০৭ দিন ব্যাপি কম্পিউটার এইডেড ড্রাগ ডিজাইন ও ডিসকাভারী কর্মশালা। বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত যুগউপযোগী আন্তর্জাতিক গবেষণা কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটির আয়োজক ছিলেন হেলথ মেড সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্ক।
মলিকুলার ডকিং,  ডাইনামিক্স, কম্পিউটার এইডেড ড্রাগ ডিজাইন ও বায়োইনফরমেটিক্স” শিরোনামে ৭ দিন ব্যাপি কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামটি ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু করে -২৪  নভেম্বর ২০২২ এর মধ্যে অনলাইন জুম প্ল্যাটফর্ম এবং  হ্যান্ড-অন-ট্রেনিং সেশন উভয় মাধ্যমে  পরিচালিত হয়।
গত ২৪ নভেম্বর  এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, লালমাটিয়া, ঢাকা এর সেমিনার হলে দিনব্যাপী হ্যান্ডস-অন-প্রশিক্ষণ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। কম্পিউটার-এইডেড ড্রাগ ডিজাইন, কম্পিউটেশনাল কেমিষ্ট্রি, ও বায়োইনফরমেটিক্স বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তিনজন বিজ্ঞানী ও প্রশিক্ষক- জনাব অজয় কুমার (সিনিয়র লেকচারার, রসায়ন বিভাগ, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ), ড. শাবানা বিবি (সহকারী অধ্যাপক, বায়োসায়েন্সেস বিভাগ, শিফা তামির-ই-মিল্লাত বিশ্ববিদ্যালয়, পাকিস্তান) এবং জিনাব আব্দুস সামাদ (প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র গবেষক, কম্পিউটেশনাল বায়োলজি ল্যাবরেটরি, বায়োসোল সেন্টার, বাংলাদেশ) কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
৭ দিনের দীর্ঘ কর্মশালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ড্রাগ ডিজাইনের ব্যাসিক লেভেল থেকে শুরু করে এডভান্সড লেভেল, এবং হ্যান্ডস অন ট্রেনিং।  যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কম্পিউটারের বায়োলজিক্যাল ডাটাবেইজ ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যাবহার করে   কিভাবে একটি নতুন ওষুধের অনু বাছাই করা  যায়, সম্ভাব্য ড্রাগ হিসেবে তাকে ডিজাইন করা যায়, শরীরের ভেতরে ওষুধটির সম্ভাব্য ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া,  প্রোটিন তথা রিসিপটরের সাথে নতুন ড্রাগটির সম্ভাব্য বাইন্ডিং এফিনিটি, শরীরের ভেতরে তার স্থায়ীত্ব, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়া,  শরীরের ভেতর থেকে কতক্ষন পর  সম্পুন্নভাবে বের হয়ে যাবে, এবং নতুন ওষুধ হিসেবে তার কার্যকারিতার মাত্রা – ইত্যাদি নানান বিষয়ে তাত্বিক  জ্ঞ্যান ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া
কীভাবে একটি নতুন ড্রাগ ডিজাইন করা যায়, ড্রাগ প্রোটিনের সম্ভাব্য  বাইন্ডিং এফিনিটি নির্নয়, ড্রাগের ফিজিউলজিক্যাল প্রোফাইন নির্নয় ইত্যাদি সহ নানান বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি, খুলনা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি, যশোর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ ব্যাবিলন (ইরাক), এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (পাকিস্তান) এর বেশ কয়েকজন গবেষক, ফ্যাকাল্টি মেম্বার এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।  প্রত্যেকটি অংশগ্রহণকারী ব্যাক্তিগত একটি করে ল্যাপটপ ব্যাবহার করে প্রশিক্ষকের সাথে অনুশীলন করেন। অংশগ্রহণকারীগন স্বতফুর্তভাবে যতেষ্ট আগ্রহ  কৌতুহল বিভিন্ন বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি অফ ব্যাবিলন (ইরাক) এর প্রফেসর.  ড. হোসাইন বলেন, মূল্যবান তথ্য ও নিরন্তর সহযোগিতার জন্য আমি কর্মশালার আয়োজক অধ্যাপক ড.মোঃ মোখলেসুর রহমান সরকার এবং প্রশিক্ষক জনাব. অজয় কুমার, ড. শাবানা বিবি. জনাব. আব্দুস সামাদ এবং জনাব. সপনীল আকাশকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আমি এই কর্মশালা থেকে যতেষ্ট উপকৃত হয়েছি   এবং  অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।
সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. জাকেরুল আবেদীন এবং বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. শাহ আমরান, চেয়ারম্যান, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 ড. জাকেরুল আবেদীন এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজনের জন্য হেলথ মেড সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে বর্তমান সরকার গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে সবসময়  উৎসাহিত করে।
 অধ্যাপক ড. শাহ আমরান তার বক্তৃতায় অংশগ্রহণকারীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জনের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টার জন্য অনুপ্রাণিত করেন ও আয়োজকদের তিনি ধন্যবাদ জানান।
 অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর ফার্মেসি বিভাগের হেড অব একাডেমিক এন্ড  রিসার্চ এফায়ার্স এবং  হেলথ মেড সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কের প্রতিষ্টাতা প্রফেসর  ড. মোঃ মোকলেছুর রহমান সরকার।  অধ্যাপক মোকলেসুর বলেন, ভারত, চীন, হংকং, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে পরিপূরক ও বিকল্প গবেশনালব্ধ ওষুধ যেমন নিউট্রাসিউটিক্যালস এবং হার্বাল ওষুধের অনুমোদনের নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং সুবিধাজনক। কিন্তু বাংলাদেশে, ডিজিডিএ এর রেগুলেটরি প্রক্রিয়া নতুন গবেষণা পণ্য (নিউট্রাসিউটিক্যালস বা হার্বাল  ফর্মুলেশন) অনুমোদনের অনুমতি দেয় না, যদি সেগুলো পুর্বে আমেরিকা, ইউরোপ সহ উন্নত দেশে ব্যাবহার না করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন,  ভারত ও চীন কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য গবেষণার ভিত্তিতে শত শত প্রাকৃতিক ওষুধ তৈরি ও অনুমোদন করেছে কিন্তু বাংলাদেশে এই ধরনের চিকিৎসার জন্য একটিও পণ্য অনুমোদন করা হয়নি। এটা গবেষকদের জন্য এবং জাতির জন্যও খুবই হতাশাজনক। তিনি আরও বলেন, ভারত ও চীনের নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশেও গবেষনালব্ধ নতুন বিকল্প ওষুধের অনুমোদনের নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করতে পারে। তিনি কর্মশালার রিসোর্স পার্সন, প্রধান ও বিশেষ অতিথি এবং কর্মশালা সফল করার জন্য সকল অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, এবং সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য  এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথকে ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করেন।
মতামত দিন
Loading...