বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ।সিডর-আইলা-আমপানের মত অনেক বড় বড় দুর্যোগ আমরা পেরিয়ে এসেছি। প্রতিটি দুর্যোগেই আমরা আগাম বিপদ সংকেত পাই।আর সেই অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহন করি।এই প্রস্তুতি আর আগাম বিপদ সংকেত না জানলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান হয়তো আরোও অনেক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো।আর প্রতিবারই তো পরিবারের একজন বাবা’র মত রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে প্রিয় সুন্দরবন।তিনি না থাকলে যে কি হত তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন।তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের প্রস্তুতি আর প্রকৃতিরসহায়তায় অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছি।
সংক্রমনের ০৩ মাসের উপর পেরিয়ে গেলেও পার হয়নি সংক্রমন কমার হার। দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে সংক্রমন আর মৃত্যুর হার।এর থেকে কবে নিস্তার হবে তা কারই জানা নাই।বাংলাদেশ সহ সারা দুনিয়াই করোনার ভাইরাসের মহামারী দুর্যোগ চলছে।এবার প্রস্তুতি একটু ভিন্ন। শুধুমাত্র সরকার কেন্দ্রিক প্রস্তুতি নয়, ব্যাক্তিগতকেন্দ্রিক সুরক্ষা প্রস্তুতিই এখানে বড় ব্যাপার।একমাত্র রক্ষাকবচ হিসেবে উপরওয়ালা ছাড়া আর কেউ এখানে দৃশ্যমান নয়।
এটা মোটামুটিভাবে সবাই আমরা মেনে নিয়েছি যে, করোনার সাথেই আমাদের বসবাস করতে হবে আরোও বেশ কিছুদিন।তবে কতদিন তা কেউ হয়তো এখন বলতে পারবে না। অনেক উন্নত দেশই স্বাভাবিক হওয়া মাত্র আবারোও নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।কাজেই খুব সহজেই যে আমরা নিস্তার পাচ্ছি না এটা নিশ্চিত। তাহলে এভাবে আর কতদিন!প্রশ্নটা সবার কিন্তু উত্তরটা কারই হয়তো জানা নেই।যেহেতু করোনার সাথেই বসবাস, তাকে মোকাবিলা করাই আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ।আমরা সাধারন নাগরিকদের বেশির ভাগ অংশই ‘লকডাউন চাই’‘লকডাউন চাই’ বলে দাবি জানিয়ে যাচ্ছি, ঠিক সেই মুহূর্তে অনেক বড় অংশ মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে, বার বার হাত ধোয়ার মত স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।এই মুহূর্তে লকডাউন হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঔষধ কিন্তু সেটা একদমই হবেআন্টিবায়োটিকের মত যা কিনা সারা বছর খাওয়া যাবে না, সাময়িক কিছু দিনের জন্য।রক্তচাপের ঔষধের মত সারা বছর লকডাউন তো আর চলবে না, এটা বাস্তবিক অর্থে সম্ভব না। তাহলে উপায় কি?
আমাদের স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে।স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মানতেই হবে।প্রশাসন হয়তো নিয়ম করে, আইন করে আমাদের মাস্ক পড়তে বাধ্য করছে-করবে কিন্তু সেটাই কি সব সমাধানের উপায়।নিজে না বুঝলে সুবকিছু আইন করে হয় না।আগেও বলেছি, করোনার দাপট একসময় থেমে যাবে, নতুন ভাবে আবারোও কোন জীবাণু তার স্বরূপে ফিরে আসবে।তাই সাময়িক নয়, দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা মাফিক স্বাস্থ্যবিধি মানার অভ্যাস গড়ে তুলতেই হবে। যেখানে আগে
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি…।।
জীবাণু শব্দটা খুব ছোট থেকেই শুনে আসছি। ছোট বেলায় জ্বর-ঠান্ডা কিংবা হলে যখন ডাক্তারের কাছে যেতাম, ডাক্তার বলতেন ভাইরাল ফিভার, এই ঔষধগুলো খেলে ঠিকহয়ে যাবে। প্রশ্ন করতাম, ভাইরাল বিষয়টা কি! ডাক্তার কাকু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন, ভাইরাস হচ্ছে ছোট্ট একটি জীবাণু যা কিনা দেখা যায়না, বুঝা যায় না কিন্তু আমাদের শরীরে জ্বর ঠান্ডা হলে এদের উপস্থিতি বাড়ে।আবার এদের দ্বারাই রোগের টিকা তৈরি করা হয়।ভাইরাসের মত আরো অনেক জীবাণু আছে, তাদের মধ্য ব্যাকটেরিয়া অন্যতম।
মুলত জীবাণু শব্দটা সেখান থেকেই হাতেখড়ি। জীবাণুর সাথে লড়াই করেনি, এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর।কারন জীবাণুই সব রোগ তৈরি করে আবার সেই জীবাণু দিয়েই তৈরি করা হয় তাদের প্রতিষেধক।১০০ভাগের মধ্য মাত্র ৫ ভাগ জীবাণু আমাদের রোগ তৈরি করে। তার মানে হচ্ছে ভাল জীবাণুর সংখ্যাই বেশি।
জাতির এই ক্রান্তিকালে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী,প্রশাসন,ব্যাংকার,সাংবাদিক, ঔষধ-খাদ্যসহ বিভিন্ন শিল্পের সাথে জড়িত উৎপাদন-বিপননে নিয়োজিত কর্মকর্তারা।দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট- মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট কেমিষ্টসহ অনেক নিবেদিত প্রাণ।ঔষধশিল্পসহ ফুড-বেভারেজ প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্ট- কেমিষ্টদের সাথে মাইক্রোবায়োলজিস্টরা গুনগতমাননির্ণয় এবং নিশ্চিতকরনে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।এছাড়া অন্যন্য গবেষনা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি‘সহকারী জীবাণুবিদ’হিসেবে সরকারী কর্মকমিশন সচিবালয় থেকে যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখলাম- যোগ্যতা হিসেবে অন্যন্য বিষয়ের সাথে মাইক্রোবায়োলজি সাবজেক্টটা না দেখে বিস্মিত হয়েছি।জীবাণুর সাথেই যাদের বসবাস, অনার্সের ৪টি বছর জীবাণু নিয়েই যাদের ধ্যান-জ্ঞান ,তাদের অনুপস্থিতিমোটেও কোন প্রেরনাদায়ক কিছু হবে না।সম্যাক জীবাণু নিয়েই মাইক্রোবায়োলজি সাবজেক্টটা পরিবেষ্টিত।জীবাণুর বেসিক বিষয় থেকে শুরু করে জীবাণুর চালচলন, গতিপথ, পরিবর্তনধারা, রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর গতিপথ এবং তাদের বিনাশকারী ক্ষমতার তথ্য-উপাত্ত এবং উপায় খুজে বের করা, রোগ সারাবার জন্য টিকা তৈরির পথ ইত্যাদি ইত্যাদি বহু জীবন ভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে অণুজীববিজ্ঞানীগণ। এই মহামারী সময়ে সেচ্ছাসেবক হিসেবে জীবনকে বাজী রেখে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে শত শত অনুজীব বিজ্ঞানী। দেশে করোনা ভাইরাস সনাক্ত করনে পিসিআর মেশিন চালনা সহ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে।জানি না কি কারনে তাদের এই অনুপস্থিতি!বিষয়টি পুনর্বিবেচনা কাম্য।
দেশের এই ক্রান্তিকালে বিজ্ঞান ভিত্তিক বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত টেকনিক্যাল মানুষ খুব দরকার। দেশের এই অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রশাসন যা করছে তা কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। অসাধারন সহযোগিতা তারা করে যাচ্ছেন জীবনকে বাজী রেখে।
হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ খুবই জরুরি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।প্রতিটি মডেল ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্টদের ভুমিকা আরও বেগবান করা দরকার, তাহলে সাধারন মানুষদের অহেতুক্ ঔষধ ষ্টক করা এবং অপব্যবহার অনেক কমে যাবে।ডেক্সামিথাসোন এর মত ষ্টেরয়েড ঔষধ এ্র প্রয়োগ বিধি নিয়েও তাদের ভ্রান্তি কাটবে।
এখনও উপেক্ষিত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার এবং বায়োটেকনোলজিষ্টগণ।এমনিতেই দেশে কাজ করা মাইক্রোবায়োলজিস্ট /ফার্মাসিস্ট /জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার/ বায়োটেকনোলজিষ্ট/ বায়োকেমিষ্ট এরসংখ্যাদিনেরপরদিনকমেযাচ্ছে।উচ্চশিক্ষাএবংচাকুরির সুবাদে অনেকেই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন।দেশের মেধাবীদের দেশেই রাখতে হবে। আর দেশে যারা রয়েছেন,তাদেরও গবেষনালব্ধ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে কাজ করার সুযোগদানে আরোও বেশি আন্তরিক হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
পরিশেষে, সকল করোনা যোদ্ধাদের (ডাক্তার, নার্স,প্রশাসন সাংবাদিক, ব্যাংকার,ফার্মাসিস্ট-মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট-কেমিষ্টসহ উৎপাদন-বিপননে জড়িত সকলেই) অতুলনীয় অবদানের কথা কৃতজ্ঞ ভরে স্মরন করে আমরা না হয় একটু চেষ্টা করি স্বাস্থ্যবিধি মানতে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব জীবানুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমরা অবশ্যই সক্ষম হব।
লেখকঃ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার , মাইক্রোবায়োলজি , জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ।