লকডাউনে করোনা
করোনা আমাদের এক সময়ে অনেক ঘরমুখী করেছিল।ঘরে থাকায় আমরা হয়তো অনেকেই অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম।তবে বুঝতে পারি নি এর মাঝে কত কিছু শিক্ষা আমাদের হয়ে গেছে।জীবিকার সন্ধানে আমরা যারা প্রতিনিয়ত কর্মের তাগিদে বাহিরে থাকতাম,বুঝতেই পারিনি ঘরে থাকা মানুষদের লকডাউনের কোন প্রভাবই নেই।টিভি আর সোশাল মিডিয়া্তেই শুধু তাদের লকডাউন।কতটুকু খোজ নিয়েছি আর কতটুকুই বা সাহায্য করতে পেরেছি! প্রশ্ন রেখে গেলাম।
মনে যখন করোনা
করোনা আমাদের মানসিক বিপর্যয়ের লেভেল আঙ্গুল দিয়েদেখিয়েছে।আমরা আমাদের বাবা-মা কে ঘর থেকে বের করেদিয়েছি, রাতের আঁধারে রাস্তায় ফেলেএসেছি এমনকি মৃত্যুর পরেও শেষ দেখাটাও দেখতে যাই নি।আপনি বাঁচলে বাপের নাম!! ব্যপারটা কি সেই রকম!অথচ জীবনেরকত বছর বাবা- মা রাত জেগেছে আমাদের বিভিন্ন সময়ের অসুস্থতায়।কত ভয় আর বিপদে তাদের স্মরণ করেছি তার কি কোন হিসেব আছে।হিসেবের খাতা খুললে আমাদের অনেক বাকী রয়েছে যা কি না শোধ হবার নয়।কয়েকমাসেরকরোনা ঝড়ে সব হিসেব যেন পালটে দিল।বলা যায়, আমাদের মুখোশ খুলে দিল।
করোনা যখনমূল্য বোধে
ডাক্তার-নার্স সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মী যখন জীবন বাজী রেখে দেশের মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনি আমরা আমাদের নিজেদের করোনা উপসর্গ গোপন করে তাদের জীবনকেই বিপন্ন করে ফেললাম।তাদের প্রতি কি আমরা অবিচারকরে ফেললাম না! তবুও তারা অবিচল তাদের সেবাদানের প্রতি।তারা ছিল, আছে আর থাকবে। আর তারা থাকলেই থাকবো আমরা।
করোনা যখন ভ্যাক্সিনের গভীরে
ভ্যাক্সিন নিয়ে আমাদেরঅপেক্ষার অন্ত নেই।জীবনের প্রদীপ যেখানে নিভু নিভু করছে, সেখানে আশার আলোনিয়ে আসছে ভ্যাক্সিন।প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করছি আমেরিকা, চীনা, রাশিয়া,জাপান, ভারতের দিকে।আর যখনি দেশের সোনার ছেলেরা ভ্যাক্সিন নিয়ে তাদেরউদ্যোগের কথা জানালো,সেই থেকে শুরু হলএকশ্রেনীর সমোলোচনা রঝড়।ভালো-মন্দ যাই হোক, সমালোচনা করতেই হবে এটাই বড় কথা।এযেন আমাদের মজ্জাগত স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে।কোন কিছু না করলেও বলবো বাংলাদেশের মানুষ কিছুই করতে পারেনা, আবার কিছু করতে গেলেওসমালোচনার ঝড় বইয়ে দিব।কি চমৎকার দেখা গেল!পজিটিভ মনো ভাবনা দেখালে পারলে উদ্ভাবনের জোয়ার পুরোই ফুলষ্টপ হয়ে যাবে।
করোনা যখন পজিটিভ-নেগেটিভ
করোনার ফলাফল পজিটিভ-নেগেটিভনিয়ে আমাদের চিন্তার অন্তনেই।এমনিতেই দক্ষজনবলের অভাবে অনেক ল্যাবেই ফলস-পজিটিভএবং ফলস-নেগেটিভ নিয়ে অনেক সংশয় রয়েছেই।তার উপর একশ্রেনীর দক্ষ কারিগর আমাদের সব সংশয়কাটিয়ে ঘরে বসেই দিন-রাতপজিটিভ-নেগেটিভ ফলাফল দিয়ে গেছে।করোনা সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছেবাজার দরে।যেখানে দিন-রাত বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষক এবং এক্সপার্টগণ পিসিআর এর উপর মাইক্রোবায়োলজিস্ট এবং বায়োকেমিস্টদের প্রশিক্ষন দিয়ে যাচ্ছেনসঠিক ভাবে করোনা সনাক্তের জন্য।জোর দিয়ে যাচ্ছেনস্যাম্পল কালেকশন আর সংরক্ষনের বিষয়ে আরসেখানে সব কিছু ভুলন্ঠিত করেদিন-রাত ভুয়া রিপোর্ট এর প্রশিক্ষনচলেছে।কি চমৎকার দেখা গেল!
করোনা মহামারীআছে, হয়তো এক সময় অনেক কমে যাবে।ভ্যাক্সিন এখনও আসে নাই,আসবে অবশ্যই একদিন।কিন্তু আমাদের মানসিকতায় যে করোনা রোগ ধরে গেছে, সেটার ভ্যাক্সিন কিভাবেআসবে!আদৌ কি আসবেনা কি সেখানেও পজিটিভ-নেগেটিভএর মত কোন কারিগরি সহায়তা থাকবে!
লেখক: মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট (দেশীয় ঔষধ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত)