বর্তমানে দেশের চাহিদার ৯৮ ভাগ মিটিয়ে বিদেশে রফতানী হচ্ছে।অথচ স্বাধীনতার পরে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দেয়। আর বাংলাদেশের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ায় হাঙ্গেরি নামক দেশটি। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হতো পাট ও অন্যান্য কাঁচা পণ্য বিনিময়ে হাঙ্গেরী পাঠাতো ঔষধ। ১৯৮২ সালে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি হয়। এর ফলে বিদেশি ঔষধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া বাণিজ্য থেকে দেশি শিল্প মুক্তি পায়। এত সব বাধার পাহাড় পেরিয়ে আজকের ঔষধ শিল্পের অগ্রযাত্রা গল্পের মতোই মনে হয়।আমেরিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৪৫ টি দেশে বাংলাদেশ থেকে ঔষধ রপ্তানি হচ্ছে।
২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৮৩২ কোটি টাকার ওষুধ ও কাঁচামাল রফতানি করেছে। যেখানে এক বছরেই এই রফতানির পরিমান তিনগুন বেড়ে ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ২শ’৪৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৬ মাস পার না হতেই ১৫শ’ কোটি টাকা ওষুধ রফতানি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামীতে ওষুধ রফতানি করে বাংলাদেশ বিপুল পরিমান বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করবে; যা গার্মেন্টস রফতানি রেমিটেন্সকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মনে বলেছিলেন, ২০২১ সাল নাগাদ ওষুধ রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় প্রায় একশ গুণ বেড়ে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে।(তথ্য সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব ৩ জুলাই ২০১৭)
মহামারী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার মাঝেও থেমে নেই গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিষ্টরা। সকল ভয় উপেক্ষা করে সকাল বেলায় ঔষধের ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। এই মহামারির মধ্যেও ফার্মাসিষ্টরা তাদের জীবন বাজী রেখে মানুষের কল্যানে সকাল থেকে সন্ধ্যা ফ্যাক্টরিতে ওষুধ উৎপাদন করেন। হাতের নাগালে যে ওষুধ চাইলেই পাচ্ছি এর পেছনে কাদের এতো অবদান। বাঙ্গালী জাতির বুঝতে অনেক কষ্ট হয়। কিছুদিন পুর্বে আমার ডিপার্টমেন্ট এর সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে কোম্পানিতে চাকুরী নেওয়া এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিলো।যিনি তার মা বাবাকে ছেড়ে এক মুহুর্ত বাইরে থাকতেন না।অথচ আজ তিনি ভোরের সুর্যের আলো উঠার পূর্বেই প্রবেশ করেন ফার্মাসিউটিক্যাল ফ্যাক্টরির চার-দেয়ালের মধ্যে এবং সূর্যের আলো ডুবে গেলে আবার বের হয়ে আসেন সেই ফ্যাক্টরির চার-দেয়ালের মধ্যে থেকে।কথা। বলে জানতে পারলাম গত রমজান ইদেও তিনি ছুটিতে বাড়িতে যেতে পারেন নি।কোম্পানিতেই ওষুধ উৎপাদনে কাজে নিয়োজিত ছিলেন।করোনা মহামারীতে ছেলে বাবা মা কে,বউ স্বামীকে, ডাক্তার রোগীকে দুরে ঠেলে দিচ্ছে , কিন্তুু এককাত্র ফার্মাসিষ্টরা নিজের জীবন বাজি রেখে ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে।
একবার ভেবে দেখুন তো? ফার্মাসিষ্টরা যদি ঔষধ উৎপাদন বন্ধ করে দেয় আমাদের কি অবস্থা হবে।এগুলো ভাবার সময় আমাদের নেই কারন ফার্মাসিষ্টরা তো টেকনিশিয়ান !!
ঔষধ শিল্পের এই উন্নতির জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের আজ এতো সুনাম?এই ঔষধ উৎপাদনে যারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে, যাদের এতো অবদান।যাদের জন্য আমাদের বিশ্ব দরবারে সবার কাছে পরিচিত্ম তাদের খোঝ রাখেন ক’জন।যাদের অবদানে আমাদের ঔষধ শিল্প আজ এতো উন্নত সেই ফার্মাসিষ্টগণ ই এখন সব দিক থেকে বেশী অবহেলিত।আমাদের দেশে নেই কোন কমিউনিটি ফার্মাসি।সরকারি চাকুরীতে ফার্মাসিস্টদের জন্য নেই তেমন কোন সরকারি চাকুরীর ব্যবস্থা।ভাবতে অবাক লাগছে যে, এ জাতিকে দেখার কেউ নাই যদি থাকতো তাহলে সব কিছু থেকে কেন বঞ্চিত হতোনা।
সবশেষে বলবো ওষুধ শিল্পের এই বিপ্লবের পেছনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এই দেশের মেধাবী ও পরিশ্রমী ফার্মাসিষ্টরা। কোম্পানির মালিক, কর্ণধার, এমডি, জেনারেল ম্যানেজার, ম্যানেজার থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী সব পদে আমাদের ফার্মাসিস্টরা কাজ করে যাচ্ছেন সাফল্যের সাথে। নীরবে- নিভৃতে ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের দুর্যোগের সময়ও ফার্মাসিষ্টরা যেভাবে মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন, তার জন্য আমি গর্বিত ও আনন্দিত। কারন আমিও একজন ফার্মাসিষ্ট।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি এখনি সময় ফার্মাসিষ্টদের কাজে লাগানোর।
লেখক: শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।