ফার্মেসী পেশা ও বাংলাদেশ

মোঃ রাব্বী হাসান রফিক
ধরুন,আপনি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হলেন।একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো আপনাকে।শুরুতেই আপনাকে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হলো যিনি কিনা রোগ ও তার প্রতিকার বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী, এরপরেই আপনাকে মেডিক্যাল চেক-আপ করানোর জন্য ডাক্তারের তত্বাবধানে কাজ করা একজন বিজ্ঞ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হলো,এদিকে সার্বক্ষণিক সেবার জন্য একজন সেবিকা বা নার্স লাগবেই।আমাদের দেশে এই তিনটি স্টেপ পর্যন্ত সবকিছুই মোটামুটিভাবে এভেইলেবল।
কিন্তু আমেরিকা বা ইউরোপের উন্নত দেশ তথা স্বাস্থ্যসচেতন দেশগুলির হেলথ প্রোফেশন এর দিকে যদি নজর দেন,তাহলে সেখানে মোটা দাগে আরেকটা প্রফেশন এর উপস্থিতিও দেখতে পারবেন,যা আমাদের দেশে প্রায়ই অনুপস্থিত। সেটা কি? উত্তরটা হলো,ফার্মাসিস্ট।
স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্টের ভূমিকা কি? আসুন জেনে নেওয়া যাক-
১.রোগ নির্ণয় বা শল্যচিকিৎসা একটি রোগ নিরাময়ের অর্ধেকমাত্র,বাকি অর্ধেক হলো সঠিক ডোজ ও ডোজিং ইন্টারভ্যাল মেইনটেইনপূর্বক সঠিক ঔষধ সেবন।
২.এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর মতো ভয়াবহ মহামারীগুলি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো,পারদর্শী কারো তত্বাবধানে ঔষধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩.একটি ঔষধের একশনের উপর অন্য ঔষধের প্রভাব, অতিরিক্ত ডোজের ক্ষতিকর প্রভাব,ফিজিক্যাল কন্ডিশন অনুযায়ী সঠিক ঔষধ নির্বাচন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মেইনটেইন করা।
৪.মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ঔষধ ব্যবহারবিষয়ক সমস্যাগুলি সুপারভিশন করা।
৫.ঔষধবিষয়ক যাবতীয় সঠিক তথ্যপ্রদানকারী হিসেবে একজন কমিউনিটি প্রফেশনাল এর প্রয়োজন।
উপরের সবগুলি প্রয়োজনেরই মোটামুটি কমপ্লিট সল্যুশন হলেন,একজন এ গ্রেড ফার্মাসিস্ট। ঔষধ বিষয়ক সকল বিষয়ের সঠিক পরিচালনা শুধুমাত্র ফার্মাসিস্টদের দ্বারাই সম্ভব।
হসপিটাল,ক্লিনিক্যাল ও কমিউনিটি ফার্মাসিস্টরা সরাসরি পাবলিক হেলথের সাথে জড়িত।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটি দেশের প্রতি ২০০০ জনের জন্য একজন হসপিটাল ফার্মাসিস্ট এর প্রয়োজন।
দুঃখজনক হলেও সত্য এটাই যে,আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রি বাদ দিলে ফার্মাসিস্টদের সুযোগসম্বলিত আর কোনো সেক্টর নাই।অথচ, চিকিৎসাসেবা মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম।আর চিকিৎসাসেবার একটা বড় অংশই পরিচালিত হওয়া উচিৎ ফার্মাসিস্টদের তত্বাবধানে।
একজন ডাক্তার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও একজন নার্স মিলেই কমপ্লিট হেলথ কেয়ার।এইরকম পরিপূর্ণ চিকিৎসাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবী রাখি দেশের দায়িত্বশীলদের প্রতি।
এবারে বাংলাদেশে ফার্মেসী শিক্ষা প্রসারের আউটপুট দেখে নেওয়া যাক…….
পোশাকশিল্পের পরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হলো,ঔষধশিল্প।দেশের ৯৮%চাহিদা মিটিয়ে সারাবিশ্বের প্রায় ১৮২ টি দেশে বাংলাদেশী ঔষধ সুনামের সাথে রপ্তানি হচ্ছে।দেশের অভ্যন্তরীণ বাৎসরিক ঔষধশিল্পের বাজার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশ থেকে আয় প্রায় ১ হাজার কোটি।প্রায় ৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে দেশে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ২৭০টি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির বদৌলতে।এগুলি পুরো বাংলাদেশের জন্যই গর্বের।এই গৌরব ও সুনামের সবচেয়ে বড় নেপথ্য নায়ক এদেশের হাজারো ফার্মাসিস্ট।
এছাড়াও, দেশে-বিদেশে গবেষণা করছেন অসংখ্য ফার্মাসিস্ট। প্রবাসী পেশাজীবীদের একটা বড় অংশই ফার্মাসিস্ট।
খুব শীঘ্রই ডেভেলপড কান্ট্রিগুলিতে এরকম  রব উঠবে,ইনশাআল্লাহ
“If you want to seek a quality medicine,just have a look on the writing of the packet as ‘Made in Bangladesh’.”
Happy “World Pharmacists Day-2019”.

 

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ(২৮ ব্যাচ),রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
ফার্মেসী পেশা
Comments (০)
Add Comment