কষ্ট পেলে গাছ কান্না করে

সাজিদুর রহমান আকাশ

0
গাছের যে প্রান আছে সেটা সারাবিশ্বের কাছে সর্বপ্রথম প্রমান করেছিলেন বাঙ্গালী বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। সেই ধারাবাহিকতায় গাছ নিয়ে নানাসময়ে নানা ধরনের পরীক্ষা চালিয়ে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রীতি ইসরায়েলের তেল-আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লিলাচি হ্যাডেনি ও তার দল আবিষ্কার করেছেন যে গাছেরা চাপে থাকলে কান্নাকাটি করে এবং এটা কিছু প্রাণীরা বুঝতে পারে।

সম্প্রীতি সেল নামক গবেষণা প্রকাশনিতে প্রকাশিত এক গবেষনায় দেখা গেছে গাছেরা তৃষ্ণান্ত বা চাপে থাকলে চুপচাপ থাকে না বরং বায়ুবাহিত শব্দ করে থাকে। বিজ্ঞানীরা খুজে পেয়েছেন যে তারা প্রায় ৩৫ ধরনের শব্দ করে থাকে এমন অবস্থায় গেলে। এটাও দেখেছেন যে  পানিথাকা এবং সুস্থ গাছ অন্যের তুলনায় ঘন্টায় মাত্র একটি করে শব্দ করে। সাধারণত গাছ এমন শব্দ করলে আমরা না শুনতে পাওয়ার প্রধান কারন হচ্ছে এই শব্দগুলো সব আল্টাসনিক যার শ্রাব্যতার সীমা প্রায় ২০-১০০ কিলোহার্টজ। যেখানে আমাদের স্বাভাবিক শ্রাব্যতার সীমা এর থেকে অনেক বেশী। তবুও, প্রকৃতিতে কিছু প্রানী যেমন ইদুর, বাদুড় গাছের তৈরি করা এমন শব্দ শুনতে পারে।

কিভাবে বিজ্ঞানীরা এটা শুনলে পেলেন?

গাছের এমন শব্দ শোনার জন্য বিজ্ঞানীরা তামাক ও টমেটো গাছ একটি ছোট বাক্সের মধ্যে নিয়ে সেই বাক্সের মধ্যে মাইক্রোফোন স্থাপন করলেন। যেহেতু গাছের তৈরি করা শব্দ অতন্ত্য ক্ষীণ বিধায় বিজ্ঞানীরা ঠিকমতোন শোনার জন্য এই মাইক্রোফোন গাছের পাশে রাখলেন এবং যে গাছগুলোতে পানি দেওয়া হয়নি এবং ডাল কেটে নেওয়া হয়েছে সেসব ধরনের গাছকেই তারা নির্বাচিত করলেন। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করলেন যে শব্দ গাছ তৈরি করছে সেই শব্দ একবার উপরে উঠছে একবার নিচে নামছে অনেকটা পপকর্ন ফোটার মতো। এখন প্রশ্ন তৈরি হয় গাছেরা কিভাবে এই শব্দ তৈরি করে?  যেহেতু গাছের কোনো ভোকাল কর্ড নেই। হ্যাডানি বলেন, তারা গবেষণা করে দেখেছেন এই শব্দের মূল উৎপত্তিস্থল হলো গাছের কান্ডে থাকা জাইলেম যেটা মূলত মূল থেকে পাতা পর্যন্ত উদ্ভিদের পানি ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন করে থাকে। পানি সার্ফেস টেনশনের কারনে জাইলেমের সাথে লেগে থাকে যা অনেকটা খাওয়ার স্ট্রতে লেগে থাকা পানির মতো। জাইলেম এ যখন বাবল তৈরি হয় তখন এটা ভাঙ্গার সময় বা তৈরি হওয়ার সময় একটা শব্দ তৈরি হয় এবং উদ্ভিদের যখন পানিশূন্যতায় ভোগে তখন মূলত এই বাবলা তৈরি হয়। হ্যাডানি আরও বলেন, আমরা এখনও পুরোপুরি কারন জানি না তবে আরও সামনের দিনে গবেষণা করলে এর উওর হয়তো খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

হ্যাডানি ও তার দল এই গবেষনাটি মেশিন লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রায় ৭০ শতাংশ সফলতা পেয়েছে। এই গবেষনা কৃষি গবেষনায় সামনের দিনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধউনিভেরসিত

রেকর্ড করা উদ্ভিদের শব্দটি:

এই গবেষণার সফলতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা শুরুতে এটা গ্রীনহাউজে চেষ্টা করে দেখেছিলেন সেখানে থাকা উদ্ভিদের শব্দ শুনতে। কম্পিউটার এর মাধ্যমে প্রোগ্রাম করার মাধ্যমে তারা এখানেও আশেপাশে থাকা বায়ু ও অন্যান্য শব্দ থেকে উদ্ভিদের শব্দ আলাদা করে শুনতে পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা শুরুতে টমেটো ও তামাক নিয়ে তাদের শব্দ শুনতে পেলেও বড় পরিসরে গবেষনার ক্ষেত্রে ভুট্টা ও আঙুরকে গবেষনায় কাজে ব্যবহার করা যাবে বলে ধারনা করছেন।

হ্যাডানি ও তার দল দীর্ঘদিন ধরেই উদ্ভিদ নিয়ে গবেষনা করে আসছিলেন তারা পূর্বেও উদ্ভিদের এমন আচরন আবিষ্কার করেছিলেন। পূর্ববর্তী গবেষনায় তারা দেখেছিলেন যে উদ্ভিদ শব্দ শুনতে পারে। এর প্রমান হিসেবে তারা প্রাইম রোজ নামে একধরনের উদ্ভিত উড়ন্ত মৌমাছির সংস্পর্শে এলে এক ধরনের তরল জাতীয় পদার্থ নির্গত করে। আমাদের এই বাস্তুসংস্থানের জন্য উদ্ভিদের এমন আচরন গুরুত্বপূর্ণ যা অন্য প্রানীর বা উদ্ভিদের আচরনকে প্রভাবিত করতে পারে। আমরা হয়তো এখনও এখনো এই পুরো বিষয়টা নিয়ে একদম স্পষ্ট না তবে আশা করা যায় সামনের দিনে এই যুগান্তকারী গবেষণা হয়তো কৃষিকাজে মানবকল্যানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।

লেখক- শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি।

মতামত দিন
Loading...