আমরা প্রায়শই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই। অসুস্থ হয়ে নানারকম জটিলতা দেখা দেয় শরীরে। যখনি আমরা রোগে আক্রান্ত হই তখনি কেবল ডাক্তার , ফার্মাসিস্ট বা অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী র শরণাপন্ন হই । উন্নত বিশ্বে নাগরিকরা নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্য পরিক্ষা করে থাকেন । কিন্তু নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশ গুলতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিক্ষার বিষয়টি এখন খুব বেশি প্রচলিত হয়ে উঠেনি ।
উন্নতদেশ গুলোতে ডাক্তাররা রোগ নির্ণয় ও তার জন্য ওষুধ গুলোর সম্ভাব্য তালিকা দেন এবং ফার্মাসিস্টরা সংশ্লিষ্ট ওষুধগুলো ব্যাবহার বিধি, সংরক্ষন বিধি ,ডোজ , ডোজেস ফর্ম, পরিমান , ব্যবহারের সময় , পদ্ধতি ,ওষুধের সাইডইফেক্ট , ইন্টারেকশন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন । মুলত এই প্রক্রিয়ায় হসপিটাল ফার্মাসিস্ট বা কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট সরাসরি যুক্ত থাকেন। বাংলাদেশে হসপিটাল ফার্মেসী এখন পুরদমে চালু হয় নি তবে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে চালু আছে এছারা ভারতে হসপিটাল ফার্মেসী চালু আছে আশির দশক থেকে । একজন রোগীকে ওষুধ সম্পর্কিত সার্বিক বিষয় জানিয়ে থাকেন ফার্মাসিস্ট।
রোগীর ওষুধ গ্রহনের পূর্বে ওষুধ সম্পর্কিত নানা বিষয় জেনে নেয়া জরুরি , সে জন্য সম্ভাব্য প্রশ্নগুলি ফার্মাসিস্ট কে করা যেতে পারে ।যেমন
১. ওষুধের নাম কী এবং এটি কি কাজ করবে শরীরে ?
মুলত ব্রান্ড নেম অনুযায়ী ওষুধ প্রেস্ক্রিশনে লিখা হয় ।ব্রান্ড নেম কোম্পানি ভেদে ভিন্ন হয়। ওষুধের আরেক নাম থাকে যাকে জেনেরিক নেম বলা হয়। এই নামেই ওষুধটি সারা পৃথিবী ব্যাপি পরিচিত। সেটি জেনে নেয়া যেতে পারে । কেন এই ওষুধ লিখা হল বা ওষুধ দেহে কি কাজ (থেরাপিউটিক ইফেক্ট) করবে তা জেনে নেয়া যেতে পারে ।
২. আমার ওষুধের কত টুকু গ্রহণ করা উচিত ?
রোগীর বয়স ভেদে ওষুধ গ্রহনের পরিমান পরিবর্তিত হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুর ক্ষেত্রে ওষুধ গ্রহনের পরিমান ভিন্ন হবে । তাই এটা সঠিক ভাবে জেনে নিতে হবে ।
৩. ওষুধটি কিভাবে গ্রহন করা উচিৎ ?
বিভিন্ন ওষুধ বিভিন্ন ভাবে গ্রহন করতে হয় । এটা ফার্মাসিস্টদের কাছ থেকে জেনে নেয়া জরুরি । ট্যাবলেট , ক্যাপ্সুল সাধারনত মুখে পানি দিয়ে গিলে ফেলতে হয় , কিছু ট্যাবলেট চুষে খেতে বলা হয় , ড্রাই সিরাপ জীবাণুমুক্ত পানিতে মিশিয়ে সিরাপ তৈরি করার পর গ্রহন করতে হয় , সাপোজিটরি পায়ু পথে বা যোনি তে ব্যাবহার করতে বলা হয়, অইনমেন্ট গুলো সরাসরি স্ক্রিন এ ব্যাবহার করতে বলা হয় , এধরনের বিষয় গুলো ভাল ভাবে জেনে নিতে হবে ।
৪. ওষুধটি কখন গ্রহণ করা উচিত এবং কত দিন ?
কত দিন পর্যন্ত ওষুধ গ্রহন করতে হবে এবং দিনের কোন কোন সময় নিতে হবে তা প্রেসক্রিপশনে লিখা থাকে , তারপরও সময় সংক্রান্ত বিষয় গুলো সঠিক ভাবে জেনে নিতে হবে । প্রায়শই দেখা যায় পি পি আই ক্লাসের গ্যাসের ওষুধ গুলো ( অমিপ্রাজল , ইসমিপ্রাজল ) খাওয়ার আগে খেতে বলা হয়। কিন্তু রোগীরা সেটা ভাবেন খাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কিন্তু বিষয়টা ঠিক তেমন না এই ক্লাসের ওষুধ গুলো সঠিক ফলাফল পেতে কমপক্ষে আধাঘণ্টা আগে নেয়া উচিৎ ।
৫. কোন খাবার, পানীয় এবং অন্যান্য ওষুধ সেবন করার সময় আমার এড়ানো উচিত ?
সহজ কথায় বললে ড্রাগ ইন্টারেকশন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া উচিৎ। ওষুধটি গ্রহনের সময় কোন কোন খাবার, পানিয় এরিয়ে যেতে হবে তা জেনে নিতে হবে । তার কারন অনেক খাবার বা পানিয় আছে যা অন্যান্য ওষুধ গুলোর কার্যকারিতা কে প্রভাবিত করতে পারে । কিছু ওষুধও আছে এমন যা অন্যান্য ওষুধ গুলোর কার্যকারিতা কে প্রভাবিত করে
৬. সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কী কী হতে পারে ?
ওষুধ গ্রহনের পর প্রত্যাশিত ফলাফলের পাশাপাশি কিছু আরও অতিরিক্ত কিছু ফলাফল পেতে পারেন । সেগুলো রোগীর জন্য ভাল বা খারাপ হতে পারে । এগুলই মুলত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। যেমন দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ সেবনের ফলে আমাদের শরীরে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হতে পারে । যেমন :ফুসফুসের ক্রিয়া দুর্বল হয়ে যাওয়া ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে , মাথা ঘোরা, মাথা ব্যাথা, শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ।
৭. যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটে থাকে তবে আমার কী করা উচিত ?
যদি ওষুধ গ্রহনের পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে কি করনীয় তা জেনে নিতে হবে । প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
৮. ওষুধটি কিভাবে সংরক্ষন করতে হবে ?
ওষুধটি সাধারণভাবে সংরক্ষণ করলেই চলবে নাকি রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হবে-এটিও খুব লক্ষণীয় একটি বিষয়। এই ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ফার্মাসিস্ট এর কাছে থেকে জেনে নিতে হবে। সঠিক ভাবে ওষুধ সংরক্ষন না করা হলে তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা কমে যেতে পারে ।
যে কোন ওষুধ গ্রহনের আগে উপরোক্ত বিষয়গুলো সাধারন ভাবে জেনে নেয়া উচিৎ