ভেষজ ঔষধবিজ্ঞান (ফার্মাকোগনোসি)

0

যুগ যুগ ধরে মানুষ রোগ মুক্তির অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে নানা প্রাকৃতিক উপাদান। বর্তমানেও তার ব্যতিক্রম নয়। শুধু পাথক্য হচ্ছে উপাদান গুলোকে আগের চেয়ে বেশী পরিশোধিত করে আরও বেশী নিরাপদ, কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। এ নিয়ে চলছে নিরন্তর গবেষণা।

গাছপালা, লতাপাতা থেকে ঔষধ সংগ্রহের সাথে বিজ্ঞানের তিনটি বৃহৎ বিশেষ শাখা জড়িত, বোটানী বা উদ্ভিদবিজ্ঞান, কেমিস্ট্রি বা রসায়ন এবং ফার্মাকোলজি । বোটানি বা উদ্ভিদবিজ্ঞানে মূলত গাছের শনাক্তকরণ (ট্যাক্সোনমি), বংশগতি (জেনেটিক্স) এবং তার চাষাবাদ, সংগ্রহ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কেমিস্ট্রি বা রসায়নে গাছপালা থেকে রাসায়নিক উপাদান পৃথকীকরণ,রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারন,শনাক্তকরন, গাঠনিক তথ্য সংগ্রহ নিয়ে আলোচনা করে থাকে এবং ফার্মাকোলজি তে জীবের উপর সংগ্রহকৃত রাসায়নিক উপাদানের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হয়।

ভেষজ ঔষধবিজ্ঞান বা জীবজ ঔষধবিজ্ঞান বলতে ভেষজ (ও প্রাণীজ) উৎস হতে চিকিৎসাগত গুনাগুণসম্পন্ন দ্রব্যাদি বা উপাদান সংগ্রহ , বিশোধন, পরিশোধন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ এবং এসব উৎস সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রকে বোঝায়। এর ইংরেজি পরিভাষা হল “ফার্মাকগ্‌নসি”; শব্দটি দুইটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ “Pharmakon” ও “Gnosis” থেকে এসেছে। ফার্মাকোগনোসি কে ” Mother of Pharmacy ” অর্থাৎ ফার্মেসির মা বলা হয়।

১৮১১ সালে অস্ট্রিয়ান ডাক্তার Schmidt এর হাতে লেখা একটি মেনুস্ক্রিপ্টে প্রথম প্রথমবার ফার্মাকোগনোসি শব্দটি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে জার্মান চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র সি. এ. সাইডলার (C. A. Seydler) ১৮১৫ সালে তার লেখা বইয়ে শব্দটি ব্যবহার করেন।

“Pharmakon” অর্থ “ঔষধ” এবং “Gnosis” অর্থ “জ্ঞান”, অর্থাৎ “ফার্মাকগনসি” বলতে বোঝায় ঔষধ বিষয়ক জ্ঞান। ভেষজ ঔষধবিজ্ঞান আধুনিক ঔষধ প্রস্তুতি ও ব্যবহারিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই শাস্ত্র বিস্তারলাভ শুরু করে। ভেষজ রসায়ন হিসেবেও একে বলা যায়; সেসময় ঔষধি গাছের উপর বিশেষ জ্ঞানের ক্ষেত্র যাতে স্থান পায় গাছটিকে শনাক্তকরণ এবং তার থেকে আহরিত ঔষধি উপাদানকে গুঁড়া (পাউডার) অবস্থায় সংরক্ষণের কৌশল সমূহ।এখন পর্যন্ত এর প্রয়োগ অত্যন্ত সফল এবং উচ্চপ্রযুক্তির দিকে প্রতিনিয়ত সম্প্রসারমান। ভেষজ ঔষধবিজ্ঞানের প্রধান শাখাগুলি নিম্নরূপ:

চিকিৎসামূলক নৃ-উদ্ভিদবিজ্ঞান (Medical Ethnobotany): চিকিৎসাক্ষেত্রে ঐতিহ্যগতভাবে প্রচলিত গাছপালার ব্যবহার.কোন নিদিষ্ট এলাকার লোকজন তাদের রোগ প্রতিরোধের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে যে গাছপালাগুলো ব্যবহার করে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, পর্যবেক্ষন ও গবেষণা করা হয় মেডিকেল ইথনোবোটানি তে।

নৃ-ঔষধবিজ্ঞান (Ethnopharmacology): ঐতিহ্যগতভাবে প্রচলিত গাছপালার ফার্মাকোলজিক গুনাগুন, তাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়।

উদ্ভিজ্জ চিকিৎসা (Phytotherapy): গাছপালা থেকে পাওয়া নির্যাসের চিকিৎসামূলক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়।

উদ্ভিজ্জ রসায়ন (Phytochemistry): বৃক্ষরাজি হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রাপ্ত রাসায়নিকের নামকরণ, সনাক্তকরণ, বাছাইকরণ, নতুন সম্ভাব্য ঔষধি রাসায়নিকবিশিষ্ট গাছ নিয়ে পর্যাক্রমিক গবেষণা করা হয় ফাইটোকেমিস্ট্রি তে

প্রাণিজ ভেষজ ঔষধবিজ্ঞান (Zoopharmacognosy): যে প্রক্রিয়ায় রোগগ্রস্থ জীবেরা নিজ রোগের নিরাময়কারি গাছ বেছে নেয় অথবা তার সাহায্যে রোগের প্রতিরোধ করে তা নিয়ে আলোচনা করা হয় ।

সামুদ্রিক ভেষজ ঔষধবিজ্ঞান (Marine pharmacognosy): সামুদ্রিক অণুজীব হতে প্রাপ্ত রাসায়নিক নিয়ে গবেষণা করা হয় মেরিন ফার্মাকোগনোসিতে।

আরও অনেক শাখা রয়েছে ।প্রচুর গবেষণা হচ্ছে বিভিন্ন শাখায় , নতুন নতুন  সব আবিস্কারে সমৃদ্ধ হচ্ছে পৃথিবী ।

মতামত দিন
Loading...