জাতীয় রাজনীতি ও সংসদে ফার্মাসিস্ট চাই !

মোঃ আরমান হোসেন শুভ

0

মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর অফিসিয়াল পেজে ফরহাদ ভাইয়ের উপস্থাপনায় একটি লাইভ প্রোগ্রামে ফার্মাসিস্ট নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।

আপনি তাতে অখুশী হয়েছেন? অবাক হয়েছেন? কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি অবাক হই নি। হবো কেনো? এটাই হবার ছিলো! বাংলাদেশের যেকোনো একটি রিমোট এরিয়াতে গিয়ে বলুন তো আপনি ফার্মাসী সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করছেন। দেখুনতো প্রতিউত্তরে তাঁরা কি বলে? এই যে স্বাধীনতার এতোকাল পরেও ফার্মাসিস্ট মানে কি? তাদের রোল কি তা আমাদের জনগন না জানার দায়ভার তা কার? যেখানে আনুমানিক ১৯৬৫ সালের দিকে আমাদের দেশে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ফার্মেসি শিক্ষার চালু করা হয়। এর দায়ভার আমাদের। এর দায়ভার আমাদের অগ্রজদের। আমাদের দেশে সব পেশারই একটা সংগঠন আছে। সেসকল সংগঠন তাদের পেশাজীবীদের পক্ষে কথা বলে। তাদের জন্য কথা বলে। কিন্তু আমাদের কি আছে? এক “বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম” ছাড়া আর এক্টিভ কোনো সংগঠন কি আছে! আচ্ছা বাদ দিন সেসব কথা। মানুষের সেবা করতে হলে ভালো মন থাকলেই হবে। আপনার স্বদিচ্ছা থাকলেই হবে।

ফার্মাসিস্ট একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁর কাজও মানুষের সেবা করে যাওয়া। সেও সেবক। কিন্তু আপনি বৃহৎ পরিসরে জনগনের সেবা করতে হলে আপনাকে রাজনীতিতে অবশ্যই আসতে হবে। আমরা কি এই পর্যন্ত আমাদের জাতীয় সংসদে কোনো ফার্মাসিস্ট কে পাঠাতে পেরেছি, যিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ফার্মাসিস্টদের কল্যাণে কথা বলবে? মন্ত্রিসভা তো দূরের কথা। তাহলে আপনি কি করে আশা করেন এতো দ্রুত রাতারাতি ফার্মাসিস্টদের পুরো জাতি চিনবে? ছাত্ররাজনীতিতে অনেক মেধাবী ফার্মাসিস্ট ছাত্রনেতা আছেন।

কিন্তু আমরা কি তাদেরকে পরবর্তীতে আর সহায়তা করেছি? তাহলে তাঁরাও কিভাবে আমাদের কল্যানের কথা বলবেন। ফার্মাসিস্টদের জন্য জাতীর সবচেয়ে বড় উপহার ছিলো ,১৯৯৮ সালে আমাদের মানোনীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি, বাহাদুর বেপারী ভাই। এরপরে কি আমরা আর কেই সেভাবে লাইমলাইটে আসতে প্রেরেছি? এখনো আমার পরিচিত অনেক ফার্মাসিস্ট বন্ধু, সহযোদ্ধা আছেন যারা বিভিন্ন ইউনিট প্রধান হিসেবে আছেন। কিন্তু তারপরে কি আর আমরা তাদের সেই পরিচর্যা করতে পারছি? আপনি দেখুনতো সংসদে সবপেশার মানুষ ই আছেন নেই শুধু ফার্মাসিস্ট। আপনি একটু মন্ত্রীসভার দিকেই তাকান, অভিনেতা, অভিনেত্রী, ক্রিকেটার , ফুটবলার, হকিপ্লেয়ার, নায়ক, নায়িকা,  শ্রমিক, বায়সায়ী, কৃষিবিদ, ব্যাংকার, আইনবীদ, উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, গার্মেন্টস ব্যাবসায়ী, মহান চিকিৎসক আর শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা সবাই আছেন মহান জাতীয় সংসদে। মন্ত্রীসভায় ও তাঁরা আছেন। কুলিনেতা থেকে জননন্দিত মেয়রও হয়েছেন এমন দৃষ্টান্তও আছে। নেই কারা? -আমরা, ফার্মাসিস্ট রা। আজকে অভিনেতা বলতে, শ্রদ্ধেয় আসাদুজ্জাম্যান নূর সাহেব, অভিনেত্রী বলতে সুবর্ণা আপা, নায়িকা বলতে কবরী ম্যাডাম, নায়ক বলতে আমাদের “মিয়া ভাই” খ্যাত ফারুক স্যার, কৃষিবীদ বলতে জননেতা বাহাউদ্দিন নাসিম ভাই, দেবু ভট্টাচার্য দাদা, ক্রিকেটার বলতে মাশরাফি বা নাইমুর রহমান দুর্জয়। ফুটবলার বলতে আরিফ খান জয়, কাজী সালাউদ্দিন, হাফিজ উদ্দিন কিংবা হারুন-উর- রশিদ চাচা। শাহজান খান, মশিউর রহমান রাঙ্গা। উদ্যোগক্তা বা বায়বসায়ী বলতে সালম্যান এফ রহমান, আনিসুল হক, আতিকুল ইসলাম, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এদের বুঝি। ব্যাংকার বলতে ফরাসউদ্দিন স্যার, আতিয়ার রহম্যান এদেরকে চিনি। চিকিৎসক তো আমাদের ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন কাকা, ডাঃ এনামুর রহমান, ডাঃ আনোয়ার খান, ডাঃ রুহুল হক স্যার, ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, ডাঃ এহসানুল জগলু কাকা এদের কে চিনি। আরো অনেক উধাহরণ আছে সেসব বলে লেখা দীর্ঘায়িত করবো না।

তাহলে আমরা ফার্মাসিস্ট পিছিয়ে কেনো? প্রিয় অগ্রজ,ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা নিয়েই বলতে চাই, এখনই সময় এসেছে আমাদের কথা বলার। এখনই সময়ে হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হবার। আপনারা আমাদের কথা ভাবুন। আমরা পাশে আছি আপনাদের দেখানো পথে। অনেকে আবার বলছেন, হে ফার্মাসিস্ট এদেশ তোমার মুল্য দিবে না। তুমি দেশ ছেড়ে পালাও। অতি সম্মানের সহিত তাহাদের বলি, ধরুন, আপনার পরিবারে আপনারা ৫ ভাই-বোন আপনি সবার ছোট। এখনো কৈশোর কাল পার করছেন আপনি। পরিবারে আপনার কথার তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। তাই বলে কি আপনি অভিমান করে ঘরছেড়ে বনে গিয়ে সন্ন্যাস বেছে নিবেন!

নাকি নিজেকে পরিবারের কাছে গুরুত্ববহ করে তুলবেন? জাতীর পিতার সুযোগ্যকন্যা, মানোনীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা কিন্তু, পরিবারের সবাইকে হারিয়েও, শুধুমাত্র আমাদের জন্যই দেশে ফিরে এসেছেন এইদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। তাহলে সেই দেশ ছেড়ে আপনি একজন ফার্মাসিস্ট কেনো অন্যদেশে গিয়ে আমাদের আপামর জনসাধারণকে আপনার সেবা থেকে বঞ্চিত করবেন? বরং আসুন, সবাই মিলে একত্রে আমাদের দেশে “হসপিটাল বা ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি” র গুরুত্ব তুলে ধরি। আমাদের আস্থা ও ভরসার নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অবশ্যই আমাদের গুরুত্ব অনুধাবন করে অচীরেই আমাদের জনগনের সঠিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য বাস্তবায়িত করবেন। ইনশাআল্লাহ্‌ ।

লেখকঃ শিক্ষার্থী,  ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ; সহ-সভাপতি(সাবেক), লালবাগ থানা ছাত্রলীগ’; যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু গবেষণা ও স্মৃতি ছাত্র পরিষদ।

মতামত দিন
Loading...