এইপ্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের দৈহিক গঠন সম্পর্কে। প্রথমে আসি কি কি নিয়ে ব্যাক্টেরিয়ার দেহ গঠিত হয়। ব্যাক্টেরিয়া এককোষী প্রাণী,যে কোষটি কোষ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকে। কোষের ভেতরে থাকে কোষ পর্দা বা প্লাজমা মেমব্রেন, রাইবোজোম, ক্রোমোজোম, প্লাজমিড, নিউক্লিয়ার বস্তু ইত্যাদি। আর অপরদিকে ভাইরাসের কোন কোষই নেই,যা হলো অকোষীয় প্রাণী। ভাইরাসের দেহ কেবল মাত্র নিউক্লিক বস্তু হিসেবে হয়ত ডিএনএ অথবা আরএনএ থাকে, যার চার দিকে একটি আমিষের আবরন থাকে। আবার কিছু কিছু ভাইরাসের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার বস্তুর চার দিকে থাকা আবরনটি থাকে লিপিড, আমিষ ও শর্করার তৈরি যাকে বলা হয় এনভেলাপ।
ভাইরাস জীবিত কোষের কোষ অঙ্গাণুগুলোকে ব্যবহার করে জীবিত কোষের (যেমনঃ মানবকোষে) মধ্যেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ভাইরাস জীবিত কোষের মধ্যে তার সক্রিয়তা প্রকাশ করে আর জীবিত কোষের বাহিরে নিস্ক্রিয় বস্তুর ন্যায় আচরণ করে।এইবার আসি এন্টিবায়োটিক কিভাবে জীবাণুকে মেরে ফেলে। এন্টিবায়োটিক বিভিন্নভাবে যেমন জীবাণুর কোষপ্রাচীরকে বা কোষপর্দা কে নষ্ট করে বা জীবাণুর কোষপ্রাচীর বা কোষপর্দার গঠনে বাধা প্রদান করে অথবা জীবাণুর কোষের ভেতরের এনজাইম উৎপাদন বন্ধ করে বা জীবাণুর ডিএনএ বা আরএনএ এর প্রতিরুপ তৈরিতে বাধা প্রদান করে বা জীবাণুর আমিষ উৎপাদন বন্ধ করে জীবাণু কে মেরে ফেলে।এ থেকে বুঝা যায় যে এন্টিবায়োটিক কেবল মাত্র যে সকল জীবাণুর কোষ আছে তাদের কে মারতে পারে। যেহেতু ভাইরাসের কোন কোষই নেই সেহেতু এন্টিবায়োটিক ভাইরাসকে মারতে পারেনা।
তাহলে প্রশ্ন হল এন্টিবায়োটিক যদি ভাইরাস কে মারতে না পারে তবে কেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অনেকেই দেখা যায় ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন? করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগীর যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা কেবল মাত্র যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই হবেএমনটা নয়। অনেক ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ আছে যাদের কিনা একই লক্ষণ দেখা যায়। যখন ডাক্তাররা বুজতে পারেন রোগী ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত অথবা করোনাভাইরাস ছাড়াও রোগীর ব্যাক্টেরিয়ারকো-ইনফেকশান আছে অর্থাৎ এক সাথে ব্যাক্টেরিয়া ভাইরাস দুটি দ্বারাই আক্রান্ত তখন ব্যাক্টরিয়ার সংক্রমণকে দমন করার জন্য ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। তাছাড়া কখনও কখনও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে রোগীর শরীরের আগে থেকে থাকা যে সকল ব্যাক্টেরিয়া সাধারণত কোন রোগ সৃষ্টি করত না তারাও সক্রিয় হয়েতা কে সংক্রমিত করতে শুরু করে। আর তাদের কে বলা হয় সুবিধাবাদী অনুজীব। আর এই সুবিধাবাদী অনুজীবের সংক্রমণ কে দমন করার জন্যে ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। তাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ডাক্তাররের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক খাওয়া ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।
তাহলে করোনা ভাইরাসকে মারার জন্যে কি ঔষধ ব্যবহার করতে হবে? করোনা ভাইরাসকে মারার জন্যে এন্টিভাইরালঔষধ বা ভ্যাক্সিনই একমাত্র ভরসা হবে। ভাইরাস যখন মানবকোষের ভিতরে কোষের অঙ্গাণু ব্যবহার করে বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে এন্টিভাইরাল ঔষধকোষের ভিতরে ভাইরাসকে বংশবৃদ্ধি করতে না দিয়ে ভাইরাস থেকে মানব দেহকে রক্ষা করে। আর একটি নিদির্ষ্ট জীবাণুর ভ্যাক্সিন মানবদেহে টিকা আকারে দেয়া হলে মানবদেহ ঐ নিদির্ষ্ট জীবাণুটির বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে জীবাণু থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে। যদিও এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরি এমন এন্টিভাইরাল ঔষধ বা ভ্যাক্সিন আবিস্কৃত হয়নি। এন্টিবায়োটিক নয় এন্টিভাইরাল ঔষধ বা ভ্যাক্সিনই হবে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায়।
লেখক: সিনিয়র মাইক্রোবায়োলজিস্ট ,এসিআই হেলথ কেয়ার লিমিটেড।