ফার্মায় অণুজীববিজ্ঞানী

মনোজিৎ কুমার রায়

0

জীবাণু শব্দটা খুব ছোট থেকেই শুনে আসছি। ছোটবেলায় জ্বর-ঠান্ডা কিংবা হলে যখন ডাক্তারের কাছে যেতাম, ডাক্তার বলতেন ভাইরাল ফিভার, এই ঔষধগুলো খেলে ঠিক হয়ে যাবে। প্রশ্ন করতাম, ভাইরাল বিষয়টা কি! ডাক্তার কাকু খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন, ভাইরাস হচ্ছে ছোট্ট একটি জীবাণু যা কিনা দেখা যায় না, বুঝা যায় না কিন্তু আমাদের শরীরে জ্বর-ঠান্ডা হলে এদের উপস্থিতি বাড়ে। আবার এদের দ্বারাই রোগের টিকা তৈরি করা হয়। ভাইরাসের মত আরো অনেক জীবাণু আছে, তাদের মধ্য ব্যাকটেরিয়া অন্যতম।

মুলত জীবাণু শব্দটা সেখান থেকেই হাতে খড়ি। জীবাণুর সাথে লড়াই করেনি, এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর।কারন জীবাণুই সব রোগ তৈরি করে আবার সেই জীবাণু দিয়েই তৈরি করা হয় তাদের প্রতিষেধক।১০০ ভাগের মধ্য মাত্র ০৫ ভাগ জীবাণু আমাদের রোগ তৈরি করে ।তার মানে হচ্ছে ভাল জীবাণুর সংখ্যাই বেশি। আর সেই সম্যাক জীবাণু নিয়েই মাইক্রোবায়োলজি সাবজেক্ট টা পরিবেষ্টিত। জীবাণুর বেসিক বিষয় থেকে শুরু করে জীবাণুর চালচলন, গতিপথ, পরিবর্তন ধারা, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর গতিপথ এবং  তাদের বিনাশকারী ক্ষমতার তথ্য-উপাত্ত এবং উপায় খুজে বের করা, রোগ সারাবার জন্য টিকা তৈরির পথ ইত্যাদি ইত্যাদি বহু জীবনভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে অণুজীববিজ্ঞানীগণ। 

জাতির সকল ক্রান্তিকালে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী,প্রশাসন,ব্যাংকার,সাংবাদিক, ঔষধ-খাদ্য সহ বিভিন্ন শিল্পের সাথে জড়িত উৎপাদন-বিপননে কর্মকর্তারা। দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন ফার্মাসিস্ট- মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট কেমিষ্ট সহ অনেক নিবেদিত প্রাণ।ঔষধ শিল্প সহ ফুড-বেভারেজ প্রতিষ্ঠানে ফার্মাসিস্ট- কেমিষ্টদের সাথে মাইক্রোবায়োলজিস্টরা গুনগত মান নির্ণয় এবং নিশিচতকরনে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া অন্যন্য গবেষনা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

দেশের এই ক্রান্তিকালে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের ভুমিকা অপরিসীম।করোনার এই মহামারী সময়ে সেচ্ছাসেবক হিসেবে জীবনকে বাজী রেখে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে শত শত অনুজীববিজ্ঞানী। দেশে করোনা ভাইরাস সনাক্তকরনে পিসিআর মেশিন চালনাসহ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে।

ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে মাইক্রোবায়োলজিস্ট এর ভুমিকা অপরিসীম। তারা কাজ করে যাচ্ছে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব, প্রোডাকশন, R & D,কিউএ, কিউসি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে।

কি কাজ করে মাইক্রোবায়োলজিস্টরা?

ওষুধ তৈরির মুল উপাদান হল পানি।সেই পানি আসলেই ওষুধ তৈরি করার উপযুক্ত কিনা তা পরিক্ষা করে দেখা হয় নিয়মিত।কতগুলি ব্যাক্টেরিয়া আছে, কোন প্যাথজেনিক জীবানু আছে কিনা সেটাও খুব ভালভাবে দেখা হয়।

ট্যাবলেট , ক্যাপ্সুল, সিরাপে কতগুলি ব্যাক্টেরিয়া- ছত্রাক আছে সেটা বাজারজাত করনের আগে প্রতিটা ব্যাচ পরিক্ষা করে দেখা হয়। ইঞ্জেকশন, চোখের ড্রপ, মলমে জীবানু আছে কিনা, এন্ডটক্সিন লিমিট এর মধ্য আছে কিনা সেটাও প্রতিটা ব্যাচ পরিক্ষা করে দেখা হয়।এছাড়া ওষুধ বানানোর এরিয়াতে ধুলিকনার লিমিট, অপারেটরদের স্বাস্থ্যবিধি , ট্রেইনিংসহ সকল ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।

সম্প্রতি DUMAA-NA (Dhaka University Microbiologist Alumni Association-North America)আয়োজিত একটি Webinar হয়ে গেল যেখানে ফার্মা ক্যারিয়ার নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স ,ট্রেইনিং, ক্যারিয়ার বিষয়ক আরও কিছু কর্মসূচি নেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর পূর্বেও GMS (Graduate Microbiologist Society) আয়োজিত  ০২ দিন ব্যাপি সার্টিফিকেট ট্রেইনিং কোর্স করা হয় , যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষাথীরা অংশগ্রহন করে।

পরিশেষে, সরকার-বেসরকারী ভাবে সবার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ফার্মা সেক্টরে অনুজীববিজ্ঞানীদের ভুমিকা আরোও বৃদ্ধি করতে হবে ।এজন্য দরকার অনুপ্রেরনা, উৎসাহ আর মনোবল।

লেখক: দেশীয় ঔষধপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাইক্রোবায়োলোজিষ্ট

মতামত দিন
Loading...