স্বাস্থ্য সেবায় অন্য মাত্রা যোগ করবে “হসপিটাল ফার্মেসি”

শাহরিয়ার মোহাম্মদ সোহান

0

সুস্থ্য-সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। বেঁচে থাকার তাগিদেই আধুনিকতর সমাজব্যবস্থায় নিত্যনতুন সংযোজন হচ্ছে অকল্পনীয় সব প্রযুক্তি, আবিষ্কার হচ্ছে জীবনকে সহজ করার বিভিন্ন মূলমন্ত্র। তারই হাত ধরে চিকিৎসা সেবায়ও যোগ হয়েছে অজস্র নতুন নতুন ধারা।

ড্রাগ কম্পাউন্ডিং ও  ডিসপেন্সিং করে থাকেন হসপিটাল ফার্মাসিস্ট ।ছবিঃ ফার্মাসিউটিক্যাল জার্নাল  

মৃত্যুর দারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন যেমন সুচিকিৎসার, তেমনি ভুল চিকিৎসাও নিয়ে যেতে পারে মৃত্যুর কাছাকাছি। জনবহুল এ দেশে প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া বর্তমানে প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মীর জন্যে একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। উপরন্তু ভয়াবহ জটিল সব মরণব্যাধির আগমন স্বাস্থ্যসেবাকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। এমতাবস্থায় প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবাকে ঢেলে সাজানো ও সংযোজন-অপসারণের মাধ্যমে নতুন ও কার্যকর মাত্রা প্রদান অত্যাবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবায় রোগ নির্ণয় ও ওষুধ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট বা ওষুধ বিশেষজ্ঞগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ হতে পারে একটি অভাবনীয় মাইলফলক। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রয়োজন অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে চিকিৎসকের পাশাপাশি নিয়োজিত রয়েছে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্টগণ। বাংলাদেশে উপযুক্ত জ্ঞান, প্রয়োজন উপলব্ধি ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের অভাবে ফার্মাসিস্টদের হাসপাতালে নিয়োগ একেবারে নেই বললেই চলে।

পেশেন্ট কাউন্সেলিং করছেন এক জন হসপিটাল ফার্মাসিস্ট । ছবিঃ ফার্মাসিউটিক্যাল জার্নাল

শতভাগ সুচিকিৎসা প্রদানে হাসপাতালের প্রতিটি সেক্টরে ওষুধবিশেষজ্ঞগণের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। প্রেসক্রিপশন বিহীন ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় রহিতকরন, এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের যাচ্ছেতাই অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনমত সৃষ্টিকরণ, অপরিমিত ও মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনে ওষুধের কার্যকারীতা হ্রাস/বিনষ্ট হওয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, সেবাগ্রাহককে ওষুধের যথাযথ ব্যবহার, ওষুধের কোর্স পূর্ণ করণ বিষয়ক তথ্য প্রদান সহ ওষুধ গ্রহণ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণে “হসপিটাল ফার্মাসিস্ট” এর ভূমিকা অভাবনীয়।

এছাড়াও হাসপাতালে অবস্থানকৃত রোগীর রোগের অবস্থা যাচাই করণ, পূর্ববর্তী রোগের ধরণ ও গৃহীত ওষুধ চিহ্নিতকরণ, ওষুধের প্রতি রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লিপিবদ্ধকরণ, একাধিক ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে “ড্রাগ-ড্রাগ ইন্টারেকশন” যাচাইকরণ, ধারাবাহিক ওষুধ সেবনে রোগের মাত্রা নিরীক্ষাকরণ, ভিন্ন ভিন্ন বয়স ও শারিরীক অবস্থা বিবেচনাকরণ সহ রোগীর আর্থিক ক্রয়ক্ষমতার দিকে লক্ষ্য রেখে সর্বোচ্চ গ্রহন উপযোগী ও কার্যকর ওষুধ নির্বাচনে “হসপিটাল ফার্মাসিস্ট” এর ভূমিকা অপরিমেয়।

তদুপরি হাসপাতালের নিজস্ব ফার্মেসি বিভাগে ওষুধ আমদানিকরণের ক্ষেত্রে ক্রয়খরচ ও ওষুধের মান যাচাই করণ অত্যাবশকীয়। পাশাপাশি আমদানিকৃত বিভিন্ন ধরণের ওষুধের জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা। সেই সাথে সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠানে রোগীর চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত ওষুধ সময়মত পৌঁছে দেওয়া এবং প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন মাত্রার ও পরিমাণের ওষুধ প্রস্তুত করাও উক্ত ফার্মেসি

বিভাগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সকল ক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে ও মান বজায় রেখে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট নিয়োগ একান্ত প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রতিনিয়ত জটিল থেকে জটিলতর রোগের আবির্ভাব ঘটছে যা অল্প সময়ের ব্যবধানেই পরিণত হচ্ছে মহামারিতে। অসচেতন জীবনাচরণ, অপরিকল্পিত স্বাস্থ্যসেবা ও অনুপযুক্ত ওষুধ ব্যবস্থাপনাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব মরণব্যাধির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন, ওষুধের সতর্ক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি সহ ফার্মাসিস্ট, চিকিৎসক এবং অন্যান্য সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ব্যতীত এ ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা অসম্ভব।

লেখকঃ  শিক্ষার্থী , ফার্মেসি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ।

মতামত দিন
Loading...