হসপিটাল ফার্মাসিস্ট

তন্ময় ঘোষাল

ফার্মাসিস্ট কথাটা শুনলে আপাত দৃষ্টিতে মনে করি আমরা যে বা যারা ফার্মেসিতে বসে ঔষধ বিক্রয় করে থাকেন। কেউ কেউ মনে করেন ফার্মাসিস্ট মানে ঔষধ বিতরনকারী। কেউ কেউ আবার মনে করেন ঔষধ টেকনিশিয়ান। আসলে কি তাই?

আসুন আমরা ফার্মাসিস্টকে চিনি। ফার্মাসিস্ট এমন একটা প্রোফেশনের নাম যে প্রোফেশন ছাড়া কোন প্রকার চিকিৎসা অসম্ভব। কারণ ঔষধ ছাড়া প্রেসক্রিপসন কখনো সম্পূর্ণতা পাইনা। আপনার প্রেসক্রিপসনে যে ঔষধ উল্লেখ করা থাকে সেই ঔষধ নিয়ে যারা গবেষণা করে থাকেন,প্রস্তুত করে থাকেন, মান যাচাই করে থাকেন আবার যারা ঐ ঔষধের সঠিক ডিজাইন করে থাকেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উপাদান চিহ্নিত করে থাকেন  মান যাচাই করবার পর, উপাদান আমদানি করে থাকেন, যারা ডাক্তার এবং ফার্মেসি পরিদর্শন করেন তাদেরকে উপযুক্ত তথ্য প্রদান করে থাকেন ঔষধ বিষয়ে এবং কোন রোগের ক্ষেত্রে বা দেহের কোন অংশে কোন ঔষধ কাজ করবে ও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি সেই প্রোফেশনের নাম ফার্মাসিস্ট। একজন ফার্মাসিস্ট ফার্মেসি বিষয়ে ৪ বছর সম্মান ডিগ্রী (বি.ফার্ম.) লাভ করবার পর ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে এ-গ্রেড রেজিস্ট্রেষন সার্টিফিকেট অর্জন করেন। তারপর ১ বছর পড়া শেষ করে মাস্টার্স ডিগ্রী (এম. ফার্ম.) লাভ করেন। এম. ফিল. পি. এইচ.ডি. ডিগ্রী তো আছেই।

কোন ঔষধ তৈরী হয় সাধারণত কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করে যেমন

  • ঔষধটি কোন রোগের জন্য
  • রোগটি দেহের কোন জায়গাতে
  • ঔষধটা ঐ রোগের ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর
  • ঔষধটা ঐ রোগ ছাড়া আর কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে উপকারী
  • ঔষধটা ঐ রোগ নিরাময় ছাড়া কোন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে
  • ঔষধের ডোজ কি হবে
  • ওভারডোজ নিলে কি কি হতে পারে
  • ঔষধের রুট অফ এডমিনিস্ট্রেশন কি হবে
  • কোন রুটে দিলে দ্রুত কাজ করবে
  • ঔষধটা কখন খেতে হবে আগে পরে কি খেতে হবে

এই সব বিষয়ে বিবেচনা করে থাকেন ফার্মাসিস্ট।এই কাজগুলো করে থাকেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং করপোরেট ম্যানেজমেন্টে কর্মরত ফার্মাসিস্টগন। ফার্মাসিস্টদের মূল আর একটি কাজের স্থল হাসপাতালে।

কেন হসপিটালে ফার্মাসিস্ট কাজ করবেন?এদের হসপিটালে কি কাজ?

১৭৫২ সালে প্রথম হসপিটাল নির্মিত হয় পেনসিলভিনিয়াতে এবং জনাথন রবার্টস ছিলেন প্রথম হসপিটাল ফার্মাসিস্ট। তার সফলতার পরবর্তীতে জন মর্গ্যান ভবিষ্যতে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট বিষয়টি প্রভাবিত হতে থাকে।

হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হসপিটালে ব্যবহৃত সকল মেডিসিন এবং সরবরাহ পর্যালোচনা করে থাকেন এবং ফার্মেসি সহকারী ও টেকনিশিয়ানদের সহযোগিতায় ঔষধের স্টক, বিতরন, মান যাচাই সহ কোন কোন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঔষধ প্রস্তুত করেও থাকেন।

হসপিটাল ফার্মাসিস্ট রোগীদের সাথে ঔষধ বিষয়ে তথ্য প্রদান করে থাকেন। যদি কোন রোগীকে কম্বিনেশন ডোজ দেবার প্রয়োজন বোধ হয় তখন ফার্মাসিস্টকে ঐ ডোজ রোগীর ক্ষেত্রে পর্যালোচনা করতে হয়।ফার্মাসিস্ট তখন রোগীর চলমান ঔষধের সাথে বর্তমান ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ নানান বিষয় খুঁটিনাটি সকল তথ্য যাচাই বাছাই করে ঔষধ নির্বাচন করে থাকেন। ঔষধ সেবনের পর থেকে ঔষধের কার্যকারীতা পর্যন্ত রোগীকে মনিটরিং করে থাকেন ফার্মাসিস্ট।

হসপিটালে যে মেডিসিন চার্ট থাকে তা নিয়মিত মনিটরিং করে থাকেন ফার্মাসিস্ট যাতে তিনি রোগীদের জন্য সঠিক রোগের সঠিক ঔষধ নিশ্চিত করতে পারেন। সাথে কোন ডোজেজ ফর্ম কিভাবে কতটুকু করে কোন রুটে রোগী নিবেন সব বিষয়ে বুঝিয়ে দেন ফার্মাসিস্ট।

রোগীদের হসপিটাল থেকে ডিসচার্য করা একটা অন্যতম কাজ ফার্মাসিস্টদের। কোন রোগী রিলিজ হবে, রিলিজ সামারি পর্যালোচনা করা যাতে প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী সঠিক ঔষধ রোগীকে দেয়া হয়েছে কিনা, রোগীর কোন সাইড এফেক্ট আছে কিনা, ঔষধের কারণে কোন নতুন সাইড এফেক্ট দেখা দিয়েছে কিনা সব বিষয়ে পর্যালোচনা করার পর রোগীর রিলিজ নিশ্চিত করে থাকেন ফার্মাসিস্ট।

কোন কোন রোগীকে অনেক ঔষধ একসাথে খেতে হয় রোজ। তাদেরকে মনিটর করবার দায়িত্ব ফার্মাসিস্টের।হসপিটালে নিযুক্ত সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মী সকলকে বিভিন্ন সময়ে তথ্য প্রদান করে থাকেন ফার্মাসিস্ট।কোন রোগীর কম্প্লিকেশন দেখা দিলে ফার্মাসিস্ট ডাক্তার মিলে সেই জটিলতা দূর করেন।হসপিটাল স্টকে কোন নকল ভেজাল ঔষধ সরবরাহ হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি করা ফার্মাসিস্টের কাজ।

ফার্মাসিস্ট এমন একটা প্রোফেশনের নাম। তারা ঔষধ গবেষক এবং ঔষধের খুঁটিনাটি বিষয়ে তাদের ধারনা রাখতে হয়। ঔষধ আজ আমরা চাওয়া মাত্র পেয়ে যাই।এর কৃতিত্ব ফার্মাসিস্টদের। বাইরের দেশে আমাদের ঔষধের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সুনামের সাথে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে আমাদের দেশ যার কৃতিত্ব একমাত্র ফার্মাসিস্টদের।

হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ জরুরি দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে পরিপূর্ণ করতে। ফার্মাসিস্টদের একটা সামাজিক পরিচিতি রয়েছে। তারাও এই মহামারীতে একটানা ঔষধ নিয়ে কাজ করে গেছেন। অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন। তাদের মা বাবার চোখের জলের দাম নিশ্চয়ই কম নয়।

যারা দেশের মানুষের জন্য দিন রাত এক করে ঔষধ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন আবার মারা যাচ্ছেন সেই ফার্মাসিস্টের বাদ দিয়ে সবাইকে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা ঘোষনা করা হচ্ছে।

আজ করোনা মহামারী মোকাবিলা করতে বিদেশ থেকে রেমডিসিভির বা ফ্যাভিপিরাভির অনেক অনেক ডলার খরচ করে দেশে আনতে হচ্ছে না কারণ ফার্মাসিস্টরা ইতিমধ্যেই এই ঔষধ আমাদের দেশেই তৈরি করে দিয়েছেন। শুধু মাত্র দেশের মানুষের জন্য;দেশের জন্য।

ঔষধ বিষয়ে যাদের খুঁটিনাটি সকল জ্ঞান সেই এক্সপার্ট ফার্মাসিস্টদের আওতাধীন ঔষধ ম্যানেজমেন্ট থাকলে ঔষধের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত সম্ভব। তাই সকল ফার্মাসিস্টদের জন্য হসপিটাল ফার্মাসিস্ট দ্বার উন্মোচন করে দেশের ফার্মাসিস্টদেরকে হসপিটালে কাজ করার দৃঢ় আবেদন জানাচ্ছি। এতে দেশ জাতি উভয়েই উপকৃত হবে।

লেখক : ফার্মাসিস্ট ।

এম. ফার্ম.ঔষধফার্মাসিস্টফার্মেসিফ্যাভিপিরাভিরবাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলবি.ফার্ম.রেমডিসিভিরহসপিটাল ফার্মাসিস্ট
Comments (০)
Add Comment