দিন দিন করোনা ভাইরাস আরো ভয়ংকর হয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যতোদিন যাচ্ছে ততোই চিকিৎসা ব্যবস্থার আসল রূপ ফুটে উঠছে। সামনে আরো ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়া যেনো দুর্লভ বিষয় হয়ে উঠেছে। অদৃশ্য এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে নতুন নতুন ঔষধ প্রয়োগে নেই কোনো নিয়মনীতি। ভালো-মন্দ বিচার না করে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে এসব ওষুধ দিয়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিয়মিত চিকিৎসা পদ্ধতি প্রণয়ন করছে। একজন চিকিৎসক রোগীদের সেবা দিয়ে থাকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গাইড লাইনস অন ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট অব কোভিড-১৯ পদ্ধতি অবলম্বন করে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনা ও নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু সেই বাংলাদেশে তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন সেই নিয়ম চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে।
অদৃশ্য করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী সবসময় নিজ উদ্যোগে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করেন। কিন্তু তার এই পরিশ্রমকে পণ্ড করে দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বদানকারী লোকজন। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার জন্য এখনো পর্যন্ত কোনো ঔষধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই এই করোনা চিকিৎসায় বিদ্যমান বিভিন্ন ওষুধের ট্রায়াল চলছে বিশ্বের সকল দেশেই।
ট্রায়ালের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে কিছু ওষুধ রোগীদের উপর জরুরি ভিত্তিতে ও সাময়িক প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে সমষ্টিগত ট্রায়ালের ফলাফল বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হচ্ছে। ঔষধ প্রয়োগে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান ছাড়া আর কোনো গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নেই।
করোনা আক্রান্তের সামান্যতম উপসর্গ থাকলেই বিনা টেস্টে সন্দেহজনক ব্যাক্তিদের এই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যা মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয় বা সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতির আওতায়ই পড়ে না। যদি ঔষধ সত্যিকার অর্থে কার্যকর হয়, তবে সেটি দ্রুত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ব্যবহারের সাময়িক অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। আর যেহেতু আমাদের দেশে ফার্মেসিগুলোতে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট থাকে না, ফলে সহজে প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে কেউ এ ওষুধগুলো কিনে খেয়ে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে।
কিন্তু করোনা মোকাবিলায় পরীক্ষামূলকভাবে যেসব ওষুধ বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করার হচ্ছে। আর গুজব ও হুজুগপ্রবণ বাংলাদেশের মানুষ পড়িমরি করে ওইসব ওষুধ কিনে নিজেরাই খাওয়া শুরু করছে এবং মজুদ করছে। তাই ওষুধের আলোচনা মিডিয়াতে এমনভাবে প্রচার অথবা বলা যাবে না যাতে সাধারণ মানুষ নিজেকে চিকিৎসক ভাবেন যেটি আইনের পরিপন্থী।
বাংলাদেশের ফার্মেসিগুলোতে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের বিক্রয় চলছে অবাধে। নেই কোনো কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। যাতে করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরো অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এই ফার্মেসি দোকানদাররা সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলছে অগোচরে। একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ঔষধের সঠিক ব্যবহার করে চিকিৎসা সেবার মানকে নিশ্চিত করতে পারে।
উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের হাসপাতালগুলোতে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বারবার বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের কথা আলোচিত হলেও দেড় হাজারের বেশি হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ এখনো সম্ভব হয়নি। কর্মক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরির লক্ষ্যে এবং যথাযথ ওষুধের ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সকল হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের বিকল্প নেই।
বর্তমান সরকার যেখান সকল খাতে বিশ্বের দরবারে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্যখাতে ফার্মাসিস্টদের অন্তর্ভুক্তি করলে সেটা হবে এই সরকারের আরেকটি মাইলফলক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মেনে বাংলাদেশের মানুষের কথা ভেবে সরকার গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ করে মানুষের সেবার মান বৃদ্ধি করবে বলে বিশ্বাস করি।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম ।