ইমিউনিটি কি?

0

আমরা প্রায়শই একটি শব্দ শুনে থাকি তা হল ইমিউনিটি। বাংলায় সহজ ভাষায় যাকে বলা হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আমাদের দেহের যে সিস্টেম এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে তাকে বলা হয় ইমিউন সিস্টেম।

ইমিউন সিস্টেম কি?

ইমিউন সিস্টেম হ’ল দেহের একটি কাঠামো ও প্রক্রিয়াগত একটি জটিল ব্যবস্থা যা আমাদের রোগ থেকে রক্ষা করে। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের আণবিক এবং কোষীয় উপাদান জড়িত।

ইমিউনোলজি কি?
সহজ ভাবে বললে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে শাখায় রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা তাকে ইমিউনলজি বলে। আরো সহজে বললে ইমিউন সিস্টেম নিয়ে অধ্যয়ন সংক্রান্ত বিদ্যাকে ইমিউনোলজি বলা হয় , উদাহরণস্বরূপ, যা মানুষের মধ্যে সহজাত এবং অর্জিত ইমিউন সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করে ।

ইমিউনোলজির জনক কে?

এডওয়ার্ড অ্যান্টনি জেনার, ইমিউনোলজির জনক হিসাবে পরিচিত। প্রথম সফলভাবে ভ্যাকসিন তৈরির কৃতিত্ব তারই। এজন্য তাকে এই উপাধি দেয়া হয়।

ইমিউনোলজি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আঠারো শতকে এডওয়ার্ড জেনারের অগ্রণী আবিস্কার ছিল ভ্যাক্সিন। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যপক ভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল। সেই থেকে ইমিউনোলজি আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার চেহারা বদলে দিয়েছে। ইমিউনোলজিক্যাল গবেষণা ইমিউনোথেরাপি, অটোইমিউন ডিজিজ এবং নতুন রোগজীবাণুগুলির ভ্যাকসিন তৈরীতে চলমান গবেষণা সহ, কীভাবে সহজে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে দিগন্তকে প্রসারিত করে চলেছে। এটি বিভিন্ন রোগের নতুন শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে। এগুলোর পাশাপাশি, নতুন সব প্রযুক্তি যেমন ফ্লো সাইটোমেট্রি এবং অ্যান্টিবডি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মোচিত করেছে।

ইমিউন সিস্টেম কিভাবে কাজ করে? কিভাবে আমরা রোগ মুক্ত থাকি?

ইমিউন সিস্টেম খুব দ্রুত গতিতে প্রায় সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণু কে সনাক্ত এবং ধ্বংস করে দিতে পারে। কোনো কারণে যখন এটা ব্যর্থ হয় কেবলমাত্র তখনই শরীর জীবাণু দ্বারা রোগাক্রান্ত হতে পারে। শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমের কারণেই আমরা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন এবং তারও অধিক জীবাণু পরিবেষ্টিত থাকা সত্ত্বেও খুব কম সময়েই সংক্রমণের এর কবলে পড়ি।

চলুন আরেকটু বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করি

রোগের জন্য দায়ী জীবাণু, রোগ প্রতিরোধ করতে হলে আগে জীবানুকে শনাক্ত করতে হবে।
এই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া দুই ধরণের হতে পারে, স্থূল-শনাক্তকরণ (None specific) প্রক্রিয়ায় শ্বেতকণারা জীবানুদেরকে শুধু “নিজ” কিংবা “বহিরাগত” এই দুইভাগে ভাগ করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি বহিরাগতকে ( ভালো বা মন্দ) সমান দৃষ্টিতে দেখে । হতে পারে সেটা কোন জীবানু বা দেহের জন্য ভালো কোন উপাদান। কোনটা জীবানু আর কোনটা ভালো সেটা নিদিষ্ট করতে পারে না।

শুধুই স্থূল-শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বলে সহজাত বা ইনেট-ইমিউনিটি (Innate immunity)।

এটা আমাদের শরীরের একটি তাৎক্ষণিক ও সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা। আমাদের শরীরে কোনো ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ঢুকলে শরীরের কিছু নিরাপত্তারক্ষী শ্বেতকণিকা রয়েছে, এরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয় এদের মেরে ফেলার জন্য।

আর সূক্ষ্ম-শনাক্তকরণ (Specific) প্রক্রিয়ায় শ্বেতকণারা ভিন্ন ভিন্ন বহিরাগত প্যাথোজেনদের আলাদা আলাদাভাবে নিদিষ্ট করে চিনতে পারে।

আর সূক্ষ্ম-শনাক্তকরণ ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বলে অর্জিত বা অ্যাকোয়ার্ড-ইমিউনিটি (Acquired immunity)।

অ্যাকোয়ার্ড-ইমিউনিটির দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, বিভিন্ন প্যাথোজেনদের আলাদা আলাদাভাবে শনাক্ত করা হয়। ফলে, ভিন্ন ভিন্ন প্যাথোজেনদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন  প্রতিক্রিয়া বা ইমিউনিটি-রেসপন্স তৈরি হয়। এবং কোনো জীবানু প্রথমবার শনাক্ত করা হলে এই শনাক্তকরণ তথ্য সংরক্ষণ করা হয়, তাই  ওই জীবানু যদি আবার ফিরে আসে তবে সহজে তাদের শনাক্তকরণ সম্ভব হয় ও তাদের বিরুদ্ধে  ইমিউনিটি-রেসপন্স বা প্রতিক্রিয়া হয় অতিদ্রুত।

এটাকে আমরা বলি অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডি তৈরি করার সেল বা কোষগুলোকে আমরা বলি বি-সেল। একই ধরনের জীবানু আবার আক্রমণ করলে অ্যান্টিবডি ঔ জীবানুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একে ছড়াতে দেয় না এবং আরেকটি নিরাপত্তারক্ষী শ্বেতকণিকা যাকে আমরা বলি টি-সেল তা ভাইরাসকে মেরে ফেলে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন নামের বি-সেল ও টি-সেল রয়েছে।

মতামত দিন
Loading...