সোপিওয়াটার ,সস্তায় হাত ধোয়ার উপকরন

সাবান বা স্যানিটাইজারের বিকল্প হিসেবে সোপি ওয়াটারের কার্যকারিতা স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফের ।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে হাত ধোয়ার জন্য দামি সাবান বা স্যানিটাইজারের বিকল্প হিসেবে ডিটারজেন্ট দিয়ে তৈরি ‘সোপি ওয়াটার’ বা সাবান–পানি ব্যবহার করা যায়। মাত্র পাঁচ টাকা খরচে একটি পরিবারের এক সপ্তাহের বেশি সময়ের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা হবে।

সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিকল্প হিসেবে সোপি ওয়াটারের ব্যবহার বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই হয়ে আসছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষের জন্য এক ‘যুগান্তকারী’ বিষয় বলে মনে করেন পানি ও স্যানিটেশন খাতের বিশেষজ্ঞরা।
সোপিওয়াটারের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এ জন্যই যে এপর্যন্ত এর কার্যকারিতা নিয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে, এর সব গুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।

সোপি ওয়াটারকে সাবান–পানিও বলা হয়। বাজারে পাওয়া যেকোনো ডিটারজেন্ট পাউডার দিয়েই বানানো সম্ভব এই সোপি ওয়াটার। ২০০৮ সালে কেনিয়ার স্কুলে শিক্ষার্থীরা প্রথম এর ব্যবহার শুরু করে তবে কোনো দেশেই এর উপকারীতা নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি।

আইসিডিডিআরবির এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশনস ইউনিট ২০১০ সাল থেকে এ নিয়ে একের পর এক গবেষণা পরিচালনা করতে থাকে।  গবেষকরা জানিয়েছেন এই অতিসাশ্রয়ী সাবান–পানি তৈরির কৌশলও। দেড় লিটার পানির মধ্যে বাজারে পাওয়া কোনো ডিটারজেন্ট চার চা-চামচ মিলিয়ে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।

খুব সহজেই তৈরি হয়ে গেল। আর পুরো বিষয়টির জন্য সময় দরকার এক মিনিট আর খরচ বলতে মাত্র পাঁচ টাকা।
হাতের জীবাণু নাশ করার ক্ষেত্রে সোপি ওয়াটারের কার্যকারিতা নিয়ে ট্রায়াল করেছেন আইসিডিডিআরবির একজন বিজ্ঞানী। গবেষণাপত্রটি আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন, দেড় লিটার পানির মধ্যে চার চা-চামচ ডিটারজেন্টের মিশ্রণ সাবান বা তরল হ্যান্ড ওয়াশের মতোই কার্যকর।

চলুন আরো একটু বিস্তারিত ভাবে দেখে নিই কিভাবে তৈরী করা যায় সোপি ওয়াটার।
সোপি ওয়াটার বানানোর পদ্ধতি খুবই সহজ। ঘরে বসেই খুব কম সময় ও খুব কম খরচে অনায়াসেই বানিয়ে ফেলা যায় এই সোপি ওয়াটার। সোপি ওয়াটার তৈরি করার জন্য একটি ১.৫ লিটার (দেড় লিটার)-এর পানি ভর্তি বোতল লাগবে। বোতল সম্পূর্ণ ভর্তি না থাকলেও বোতলের গলা পর্যন্ত যেন ভর্তি থাকে। বাজারে পাওয়া যায় যেকোনো কোম্পানির বা ব্র্যান্ডের ডিটারজেন্ট। একটি ফানেল বা ফিল্টার পেপার লাগবে। এই ফানেল বা ফিল্টার পেপার যদি না পাওয়া যায় তাহলেও কোনো চিন্তা নেই, যেকোনো কাগজকে ফিল্টার পেপারের আকারে বানিয়ে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, একটি চায়ের চামচ লাগবে। বোতলের মুখের মাঝখানে আগে থেকে একটা ছিদ্র করে রাখতে হবে।

প্রথমে, বোতলের মুখে ফানেল বা ফিল্টার পেপারটি রাখতে হবে। এরপর ৪ চামচ( ৩০ গ্রাম বা পুরো চার চামচে ক্ষেত্রে, ৪০ গ্রাম নেওয়া যেতে পারে তবে বেশি নেওয়া ভালো) ডিটারজেন্ট নিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার ফিল্টারের জন্যে ব্যবহৃত ফানেল বা ফিল্টার পেপারটি সরিয়ে বোতলে মুখ আটকে দিতে হবে এবং মুখের (ছিপি) মাঝখানের ছিদ্রটিকে আঙুল দিয়ে চেপে, বোতলটিকে ধরে ভালোভাবে ঝাঁকাতে হবে।এভাবে, তৈরী হয়ে গেল সোপি ওয়াটার ।

প্রয়োজন অনুযায়ী কম বা বেশী পরিমাণে সোপি ওয়াটার বানাতে পারেন। আসলে দেড় লিটারের ক্ষেত্রে ধরে নিয়ে ইউনিটারি মেথড বা ঐকিক নিয়ম অনুযায়ী কত গ্রাম বা কত চামচ ডিটারজেন্ট নিতে হবে অর্থাৎ কত পরিমাণ লাগবে তা হিসেব করে বের করে নিয়ে তারপর ততটুকু ডিটারজেন্ট পানির সাথে মেশালেই হবে।

তবে এই করোনা মহামারীর সময় সাবধানতার অংশ হিসেবে একটু বেশি ডিটারজেন্ট নেওয়া ভালো।

চলুন এবার দেখি কিভাবে সহজে ডিসপেন্স করা যেতে পারে। বোতলের ছিপির মাঝে খুব সহজেই ছিদ্র করে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া, বাজার থেকে স্প্রে কিনে বোতলের মুখে লাগিয়ে খুব সহজেই সোপি ওয়াটার ব্যবহার করা যাবে। আর এই পদ্ধতিটি খুবই সুবিধাজনক আর এতে সোপি ওয়াটার নষ্ট হয় না এবং খুব ভালোমতনভাবে পুরো হাতের মধ্যে নেওয়া যায়। এছাড়া, ডিসপেন্সারের মাধ্যমেও প্রয়োজনমতো ডিসপেন্স করতে পারেন। ব্যবহারের আগে সোপি ওয়াটারের বোতলটিকে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে। তবে স্প্রে লাগালে ঝাঁকানোর কোনো দরকার নেই।

এভাবেই সস্তায় হাত ধোয়া উপকরন ” সোপি ওয়াটার ” তৈরী করা যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *