হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও এজিথ্রোমাইসিনের যথেচ্ছ ব্যবহার নয়!

জনি মল্লিক

0

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পৃথিবী যখন দিশেহারা প্রায়, তখন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ড্রাগের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের খবর শুনছি আমরা। সারাবিশ্বে এমন অনেক ড্রাগেরই ট্রায়াল চলছে। ট্রায়াল হওয়া মানেই কিন্তু ওই ড্রাগ আমরা খেতে পারবে এমনটা নয়। ট্রায়ালের ফলে সেই ড্রাগের ডোজ ও ডোসেজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও ড্রাগটি ওই ডোজে মানবশরীরের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর কিনা তাও জানা যায়।

করোনা নামক ভাইরাস গঠিত এমন এক সংকটে নতুন এক সংকট হতে পারে এন্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি একটি ড্রাগের ট্রায়ালের খবর। যার নাম হলো, “হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন”
এন্টিবায়োটিক সংশ্লিষ্ট একটি জার্নালে ক্লোরোকুইন নামক একটি ড্রাগের ব্যবহার সম্পর্কে প্রকাশনের পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ( জর্দান, চীন, ফ্রান্স, কোরিয়া, আমেরিকা) ট্রায়াল হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও এজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করে। যেখানে রোগীর সংখ্যা ছিল স্বল্প।

সেই গবেষণার নিরিখে বলা হয়েছিল যে, তাদের স্বল্প সংখ্যক কভিড-১৯ পেশেন্ট যাদের কিনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উপসর্গ আছে তাদের ক্ষেত্রে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আলাদা ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং এজিথ্রোমাইসিন একসাথে ভিন্নভাবে ট্রায়াল চালানো হয়। দেখা যায়, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এর সাথে এজিথ্রোমাইসিন এর সমন্বয় ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোকে কমিয়ে দেয়।
বলে রাখা ভাল যে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন হল একটি এন্টিম্যালারিয়াল ড্রাগ এবং এজিথ্রোমাইসিন একটি ম্যাকরোলাইড এন্টিব্যাকটেরিয়াল ড্রাগ।

এর মানে হলে কেও এই সমন্বয় ড্রাগ নিলে বুঝতে হবে তার শরীরে একসাথে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে কাজ হচ্ছে। বিষয়টা সামাল দেওয়া সকল রোগীর ক্ষেত্রে একই রকম হবে না। এজিথ্রোমাইসিন প্রকৃতপক্ষে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের মানবশরীর কতৃক শোষণের হারকে বাড়িয়ে দেয়। অর্থ হল সকল COVID রোগীর জন্য এই সমন্বয়ের ড্রাগ ভাল নাও হতে পারে।
বলা হচ্ছে যে, এই কম্বিনেশনের ড্রাগের জন্য ডোজিং ইন্টারভেল ও ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখাটা খুব জরুরি। কারন এদের বিপাক ও রেচনের একটা বড় অংশ হয় যথাক্রমে লিভার ও কিডনিতে। (অপরিবর্তিত অবস্থায়)
তাছাড়া এই ড্রাগ কম্বিনেশন তাদের জন্য নয় যারা তরুণ ও যাদের মৃদু উপসর্গ আছে। শুধু তাদের জন্য যারা বয়স্ক ও উল্লেখযোগ্য উপসর্গ আছে। যাদের বিদ্যমান কার্ডিয়াক, লিভার ও কিডনি সমস্যা আছে তাদের জন্য এই কম্বিনেশন নয়।
উল্লেখ্য, ড্রাগের এই কম্বিনেশন কিউ.টি (QT interval) এর সময় বাড়িয়ে দেয় যা নিঃসন্দেহে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এসকল ঔষধ কোনভাবেই কোন পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।

কোন ব্যক্তি যদি এই দুইটির কোনটির প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির জন্য এমন সমন্বয় বিপদ ডেকে আানবে নিশ্চয়ই। এন্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ রোগ হওয়ার পূর্বেই খেয়ে নেওয়া যায়না। অর্থাৎ এগুলো প্রোফাইল্যাকসিস হিসেবে দেওয়া উচিত নয়। এতে করে আপনার শরীরে বিদ্যমান প্রোবায়োটিকের চরম মাত্রার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনেকেই এজিথ্রোমাইসিন খেয়ে নিচ্ছেন কোন পরামর্শ ছাড়াই।  অনুরোধ, এভাবে পরামর্শ ছাড়া কেও এজিথ্রোমাইসিন খাবেন না। এজিথ্রোমাইসিন দিয়ে প্রোফাল্যাকটিক চিকিৎসা হয়না। দয়া করে এভাবে এজিথ্রোমাইসিন খাবেন না। নিজে নিজে ট্রায়াল করবেন না। দুঃখের বিষয় হলো এই সকল ড্রাগ আমাদের দেশে এখন হাতের নাগালে পাওয়া যায়। সামন্য সর্দি বা কাশিতে অবাধে ব্যবহার হয়। ঔষধের এমন অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের আমরা মারাত্মক এক বিপদের দিকে এগুচ্ছি। তাই কারো কাছে প্রেসক্রিপশন চেয়ে বা নিজে নিজে বুঝে এমন ঔষধ সেবন আর নয়।
বাসায় থাকুন, সুস্থ থাকুন। করোনা মোকাবেলায় নিজের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উপর জোর দিন।

লেখক: ফার্মাসিস্ট ।

মতামত দিন
Loading...