অ্যাকুয়াজেনিক আর্টিকারিয়া : পানিই যখন বিষ

সাজিদুর রহমান আকাশ

0
কবার আপনি চোখ বন্ধ করে চিন্তা করে দেখুন তো,যে পানি আপনি পান করছেন সেই পানি আপনার শরীরে বিষ হিসেবে প্রবেশ করছে!! কি শিউরে ওঠার মতো ব্যাপার নাহ ?

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি আমাদের মানব দেহে যতগুলা খুবই বিরল রোগগুলা পাওয়া যায় তার মধ্যে অ্যাকুয়াজেনিক আর্টিকারিয়া (Aquagenic Urticaria) নামে এক বিরল একটা রোগের সন্ধান পাওয়া যায়।এটা এমন এক ধরনের অ্যালার্জিঘটিত রোগ যার কারনে পানি পান করলে তা শরীরে অ্যালার্জি তৈরি করে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হয়।

ধারনা করা হয় বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে মাত্র একজন মানুষ এ রোগে আক্রান্ত এবং বর্তমান পৃথিবীতে ৩২ জনের মতো অ্যাকুয়াজেনিক আরর্টিকারিয়া নামে রোগে আক্রান্ত।১৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে বিবিসি “The woman who is allergic to water” শিরোনামে একটা আর্টিকেল প্রকাশ করে এই রোগ নিয়ে।সেখানে দেখানো হয়, ১২ বছর বয়সী র‍্যাচেল নামে এক মেয়ে সুইমিংপুলের পানিতে সাঁতার কেটে মাত্র উঠেছে, ওঠার সাথে সাথে তার গায়ে কেমন যেন লাল লাল দাগ দেখা গেলো।

পরবর্তীতে চিকিৎসকের কাছে গেলে জানা যায়, তার অ্যাকুয়াজেনিক আরটিকারিয়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে। খানিক পরীক্ষার পর চিকিৎসক নিশ্চিত হলেন, তার সন্দেহই সত্যি হয়।এই রোগ হলে সাধারনত শরীরের যেখানে চুলকানির তাপমাত্রা নির্বিশেষে পানির সাথে ত্বকের সংস্পর্শে আসার পরে চুলকানি ছত্রাকের (শিষ) দ্রুত বিকাশ লাভ করে। অ্যাকোয়াজনিক আরটিকারিয়ার সাথে যুক্ত ছত্রাকগুলোর এইচটিগুলি সাধারণত ছোট (প্রায় 1-3 মিমি), লাল- বা ত্বকের বর্ণযুক্ত ওয়েল্টস (চাকা বলা হয়) পরিষ্কারভাবে প্রান্তযুক্ত। ঘা, উপরের ট্রাঙ্ক এবং বাহুতে ফুসকুড়ি সবচেয়ে বেশি বিকাশ লাভ করে, যদিও এটি দেহের যে কোনও জায়গায় হতে পারে। কিছু লোকের চুলকানিও হয়। একবার পানির উৎস অপসারণ করা গেলে, ফুসকুড়ি সাধারণত 30 থেকে 60 মিনিটের মধ্যে ফিকে হয়ে যায়।তাহলে প্রশ্ন আসে রাচেল এবং যে ৩২ জন লোক এই রোগে আক্রান্ত তারা বেচেঁ থাকে কি করে? সাধারণত, মানুষের শরীরের শতকরা ৬০ শতাংশ পানি।

৭০ কেজি ওজনের একজন মানুষের শরীরে অন্তত ৪০ শতাংশ পানি থাকে। তাই মানুষ পানি না পান করলে শুরুতেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়বে এমন না। তবে ধীরে ধীরে একসময় মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে আপনাকে পানি না পান করার মতো ছোট্ট কাজটি। শুধু তা-ই নয়, মৃত্যুর চাইতেও বড় যে সমস্যা তৈরি করে অ্যাকুয়াজেনিক আরটিকারিয়া, সেটি হলো মানসিক অসুস্থতা। একটু একটু করে উদ্বিগ্নতা আর অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দেয় রোগটি মানুষকে, তৈরি হয় হতাশা। একবার অ্যালার্জির প্রভাব শেষ হতে না হতেই অপেক্ষা শুরু হয় পরের আঘাতের।

জার্মানিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর অ্যালার্জির প্রতিষ্ঠাতা মার্কাস মাউরের জানান, তার দেখা এমন অনেক মানুষ আছে, যারা ৪০ বছর ধরে এই অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া ত্বকের সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচাইতে বড় অসুখ মনে করেন তিনি অ্যাকুয়াজেনিক আরটিকারিয়াকে।অ্যাকোয়াজনিক আরটিকারিয়া (এইউ) বিরলতার কারণে এই স্বতন্ত্র চিকিৎসার কার্যকারিতা সম্পর্কিত খুব সীমাবদ্ধ তথ্য রয়েছে। আজ অবধি, বড় আকারের কোনও গবেষণা পরিচালিত হয়নি।চিকিৎসকেরা আজও পরীক্ষামূলকভাবে নিম্নলিখিত চিকিৎসা (একা বা বিভিন্ন সংমিশ্রণে) পরিবর্তনশীল ফলাফলগুলির সাথে ইউ কে পরিচালনা বা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

অ্যান্টিহিস্টামিনসঃ এগুলি সাধারণত সব ধরণের ছত্রাকের জন্য প্রথম-লাইনের চিকিত্সা থেরাপি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যারা এইচ 1 রিসেপ্টরগুলিকে (এইচ 1 অ্যান্টিহিস্টামাইনস) ব্লক করে এবং সেটিরিজিনের মতো নন-সিডেটিং তাদের পছন্দসই হয়। এইচ 1 অ্যান্টিহিস্টামাইন কার্যকর না হলে অন্যান্য এইচ 1 অ্যান্টিহিস্টামাইনস (যেমন হাইড্রোক্সিজাইন) বা এইচ 2 অ্যান্টিহিস্টামাইনস (যেমন সিমেটিডাইন) চেষ্টা করা যেতে পারে।

ক্রিম বা অন্যান্য সাময়িক এজেন্টগুলি যা পানি এবং ত্বকের মধ্যে যেমন বাধা হিসাবে কাজ করে যেমন পেট্রোলেটাম-ভিত্তিক পণ্য। এগুলি ত্বকে পানির অনুপ্রবেশ রোধ করতে স্নান করার আগে বা পানিতে অন্য এক্সপোজারের আগে ব্যবহার করা যেতে পারে।
আল্ট্রাভায়োলেট লাইট থেরাপিঃ (যাকে ফোটোথেরাপিও বলা হয়) যেমন পসোরলেনস আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন এ (পিইউভিএ) এবং অতিবেগুনী রেডিয়েশন বি এর কিছু ক্ষেত্রে এউ’র লক্ষণগুলি সমাধান করার জন্য রিপোর্ট করা হয়েছে।
ওমালিজুমাবঃ একটি ইনজেকশনযোগ্য ওষুধ সাধারণত গুরুতর হাঁপানির জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি কয়েকটি লোকের মধ্যে সফলভাবে চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশেষতঃ এই আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপরে উল্লিখিত চিকিৎসাগুলির সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে দৃঢ় প্রমাণের অভাবে, যাঁদের সাথে আক্রান্ত তাদের ব্যক্তিগত চিকিৎসার বিকল্পগুলির সাথে তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।মূলত এই রোগে অক্রান্ত ব্যাক্তি গোসলের সময় বা অন্যান্য কাজে পানির যতটা সম্ভব বহির্মুখী হ্রাস করার মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো এই বিরল রোগে আক্রান্ত মানুষের ভবিষ্যৎ তাহলে কি হবে?চিকিৎসকরাতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, বাকিটা সময় এবং পরম করুনাময়ের কাছে ছেড়ে দেওয়া যাক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ ,বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। 

মতামত দিন
Loading...