মানসিক রোগ ‘ম্যানিয়া’-র আদ্যোপান্ত

ম্যানিয়া কি?

ম্যানিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় অনুভব করেন।  ম্যানিয়া বা উন্মত্ত মানসিকতার সময়কাল সাধারণত একসপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে। এটি একটি উপসর্গ যা সাধারণত বাইপোলার ডিসর্ডার, পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এবং এরকম অন্যান্য রোগে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে দেখা যায়, যেখানে মেজাজ চরম পর্যায়ে থাকে (হয় অত্যধিক উঁচুতে অথবা অত্যধিক নীচুতে অনুভব হয়)। এই সমস্ত মানুষের মধ্যে ম্যানিয়া প্রায়শই বিষণ্নতায় পরিবর্তিত হয়।
সাধারণত ৪০-৪৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে বাইপোলার রোগ সংক্রান্ত ঘটনারই সর্বাধিক তথ্য পাওয়া যায়।
অনেক সময় রোগীর মেজাজ এতটাই উচ্চে চড়ে যায় যে ব্যক্তি অতি অল্পে রেগে যায়, চেঁচিয়ে কথা বলে। অনেকে বড় বড় চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে দেয়। অনেকে তো নিজেকে রাজা, উজির, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ভাবতে শুরু করেন! প্রচুর খরচ করে, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে শুরু করে। তাদের ঘুম কমে যায়, কাজ করার শক্তি বেড়ে যায়। রোগীর এই অবস্থাকে ‘ম্যানিক’ অবস্থা বলা হয়। ম্যানিয়া হল ডিপ্রেশন বা হতাশারই একটা অবস্থা।
প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
প্রথমত, কথা বলার ধরণ :
ম্যানিয়া রোগে আক্রান্ত রোগী সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি কথা বলে, কথা বলতে বলতে এরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। তবু কথা বলা ছাড়ে না। ম্যানিয়ার কথা বলার এই ভাবকে বলে অতিকথন বা ওভার টকেটিভনেস। এরা ঘনঘন আলাপের বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে বা এক বিষয় থেকে হঠাৎ অন্য আরেক বিষয়ে চলে যায়। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে এরা নানা রকম উপদেশ বা পরামর্শ দিতে থাকে।
দ্বিতীয়ত, ওভার এ্যাক্টিভিটি:
অতিকর্মতৎপরতা দেখায় যেন কত কাজ তার বাকি পড়ে আছে, একে বলে ওভার অ্যাক্টিভিটি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে জমা করে রাখে। এভাবে তারা অনেক টাকা-পয়সা খরচ করতে থাকে। এরা আবার অন্যের ব্যাপারে অযথা হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে দেয়।
অন্যান্য উপসর্গগুলো হলো:-
১. খুশি, উদ্দীপনা ধরে রাখতে অক্ষম।
২.অত্যধিক সক্রিয় অবস্থা
৩.খুব দ্রুত কথা বলা বা চিন্তাভাবনা করা।
৪.ঘুমোতে অথবা খেতে অনিচ্ছুক।
৫.সহজেই বিভ্রান্ত হওয়া।
৬.সহজেই বিরক্ত হওয়া এবং রেগে যাওয়া।
৭.বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী মনে হওয়া।
৮.অমূলক চিন্তাভাবনা এবং ধারণা পোষণ।
৯.মনোযোগ দিতে না পারা।
১০.অস্থিরতা।
১১.অহংকার করা।
১২.পরামর্শ দেয়া।
১৩.যৌনতায় অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া।
১৪.মিথ্যা বলার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়া।
১৫.নিজেকে অনেক সুন্দর ভাবা।
১৬.অনেক জ্ঞানী ভাবা।
১৭.হঠাৎ হঠাৎ বড় প্ল্যান মাথায় আসা।
১৮.হঠাৎ হঠাৎ এখানে-ওখানে যাওয়ার কথা মনে আসতে থাকা।
প্রধান কারণগুলি কি কি?
২.মানসিক চাপ।
৩.জিনগত কারণ।
৪.ঋতুর পরিবর্তন।
৫.নির্দিষ্ট ওষুধ অথবা অ্যালকোহলের ব্যবহার।
৬.স্নায়ুর কার্যকারিতায় অস্বাভাবিকতা।
৭.নির্দিষ্ট কিছু রোগের অবস্থার শেষ পর্যায়ের প্রকাশ।
৮. গর্ভধারণ।
৯.প্রিয়জনকে হারানো।
১০. বিবাহবিচ্ছেদ, হিংসাত্মক, অবমাননাকর, বেকারত্ব, আর্থিক সমস্যার মতো ঘটনা।
কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?
ম্যানিয়ার চিকিৎসায় রোগীর চিকিৎসাগত ও ব্যক্তিগত ইতিহাস জিজ্ঞাসা করা হয়। ইতিহাস জেনে নিলে কোনও সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনা চিহ্নিত এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন করতে সহায়তা করবে।
ম্যানিয়ার ব্যবস্থাপনায় সাধারণত অ্যান্টি-সাইকোটিক্স দেওয়া হয়। বাইপোলার রোগ সম্পর্কিত মেনিয়ার ক্ষেত্রে, মুড স্টেবিলাইজার দেওয়া হয়। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত রক্ত ​​পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
ম্যানিয়ার চিকিৎসায় রোগীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়। ম্যানিয়ার রোগী যদি মুখে ওষুধ খেতে না চায় তবে ওষুধগুলো পিষে চা, কফি বা শরবত বা অন্যকিছুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
ওষুধের পাশাপাশি, সাইকোথেরাপি (যা ভালোভাবে বাঁচতে উৎসাহিত করে বা সমস্যার সমাধান করে) এবং পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে সমর্থন অনেকটা সহায়ক হতে পারে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *