ভয়ংকর মানসিক অন্তঃসংঘাতের সাতকাহন : বাইপোলার ডিসঅর্ডার

বাইপলার ডিজঅর্ডার

বাইপোলার ডিসঅর্ডার কী? 

বাইপোলার ডিসঅর্ডার (BPD) একটি মানসিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয়/ আবেগজনিত মানসিক সমস্যা। বাইপোলার অর্থ হচ্ছে দুটি পোল বা মেরু।বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি  অবস্থা, যেখানে কোনও ব্যক্তির মেজাজের পরিবর্তন ঘটে চরম আনন্দ এবং বিষন্নতা যেকোন একটিতে।এক মেরুতে থাকে ডিপ্রেশন। অন্য মেরুতে অতি উৎফুল্লতা বা ম্যানিয়া। কখনো ম্যানিয়া আবার কখনো বিষণ্নতা দেখা যায়। আর মাঝখানের সময়টায় সাধারণত সম্পূর্ণ ভালো থাকে।

বাংলাদেশে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক যৌথ জরিপের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রতি ১০০০ জন মানুষের মধ্যে ৪ জন বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।

বাইপোলার ডিসঅর্ডারের প্রধান কারণগুলি কি কি?

মস্তিষ্কের গঠনগত কারণকে এই অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয়।যদি রোগীর বংশে নিকটজনের কারো  বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকে, তাদের সন্তানদেরও এই রোগ হবার  উচ্চ-সম্ভাবনা থেকে যায়।

অন্যান্য যে কারণগুলি দায়ী সেগুলি হল-

১. খুব বেশি মানসিক চাপ বা মানসিক আঘাত অথবা শারীরিক কোনও অসুস্থতা।

২. মস্তিষ্কে নরঅ্যাড্রেনালিন, সেরোটনিন, ডোপামিন জাতীয় বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতা।

৩. তীব্র মনঃসামাজিক চাপ।

৪. স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা।

৫. নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণ।

এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি? এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা কখনো বিষণ্ন থাকবে আবার কখনো অতি উৎফুল্ল থাকবে।
বিষণ্নতার প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে:

১. হতাশা, মন খারাপ, বিনা কারণে কান্নাকাটি করা।

২. আত্মবিশ্বাস কমে আওয়া, নিজেকে হীন, তুচ্ছ অকর্মণ্য মনে করা।

৩. নিজেকে দোষী ভাবা।

৪. সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি।

৫. ক্ষিদে কমে যাওয়া বা কখনো অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ।

৬. যৌনস্পৃহা কমে যাওয়া।

৭. অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ।

৮. নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সমস্যা।

ম্যানিয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে:

১.অতি উৎফুল্লতা।

২. অতিরিক্ত, দ্রুত ও উচ্চস্বরে বেশি বেশি কথা বলা।

৩. নিজেকে বড়, ক্ষমতাশালী, বিশেষ শক্তির অধিকারী মনে করা।

৪. এক চিন্তা থেকে আরেক চিন্তায় দ্রুত চলে যাওয়া।

৫. হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, উত্তেজিত হয়ে অন্যকে আঘাত করা, ভাঙচুর করা।

৬. যৌনস্পৃহা বেড়ে যাওয়া।

৭. মাদক গ্রহণ করা।

এর চিকিৎসা কি কি?

সাধারণত চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল সাইকোথেরাপি, এছাড়াও মুড স্টেবিলাইজার ও অ্যান্টিসাইকোটিক এর মতো ওষুধগুলি রোগীকে দেয়া হয়।থেরাপি হিসেবে আন্তঃব্যক্তিগত থেরাপি যেখানে প্রাত্যহিক কাজকর্মগুলি যেমন ঘুমানো, খাওয়া প্রভৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করা হয়।জ্ঞান সম্বন্ধীয় থেরাপিতে রোগীকে তার আচরণ নিয়ন্ত্রনের জন্য তার চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনতে বলা হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *