“উগ্র” থেকে কোভিড-১৯ নিয়ে বিশ্বখ্যাত দ্য ল্যানসেট জার্নালে বাংলায় প্রবন্ধ প্রকাশ

কোভিড -১৯ জনিত হাসপাতাল বর্জ্যঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

0

ন্ডারগ্রাজুয়েট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (উগ্র) দেশের অন্যতম একটি নবীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে অগ্রগন্য প্রতিষ্ঠানটি। কোভিড-১৯ নিয়ে তাদের গবেষণা পত্রের সংখ্যা হিসেবেও তারা এদেশে তাদের শির্ষত্ব ধরে রেখেছে৷ বাংলাদেশে বিশ্বমানের গবেষক তৈরী করতে নিরন্তর কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি, বিশেষকরে আন্ডারগ্রেড লেভেলের ছাত্রদেরকে নিয়ে৷ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে বিখ্যাত সব পাবলিশারের জার্নালে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০২০ সালে গবেষণাপত্র প্রকাশের দিক দিয়ে দেশে ৪র্থ স্থানে আছে (স্কোপাস ডেটাবেজ, ১৬ই আগস্ট)।

Undergraduate Research Organization
Undergraduate Research Organization

গত বছর বাংলাদেশের ডেংগু মহামারী নিয়ে তাদের একটি প্রবন্ধ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব থেকে জনপ্রিয় ও সমাদ্রিত গবেষণা জার্নাল “দ্য ল্যানসেটে” প্রকাশিত হয়। করোনা-জনিত হাসপাতাল বর্জ্য নিয়ে গত ১৩ই আগস্ট তাদের আরেকটি প্রবন্ধ “দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথে” প্রকাশ হয়। এই প্রবন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক এবং গবেষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, এবং ব্র‍্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি গবেষক মোঃ বদরুদ্দোজা সহ-লেখক ছিলেন। তবে তাদের সাম্প্রতিক প্রবন্ধটি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় প্রকাশ করা হয়। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মোহাম্মদ মামুন বলেন, প্রথমে জার্নালের সম্পাদক বাংলায় লেখা প্রকাশ করতে চায়নি, আমি বাংলায় প্রকাশ করেই ছেড়েছি।  ভাবতেই ভালো লাগছে, মায়ের ভাষায় নিজের গবেষণাপত্র পড়ব!   নিচে ‘দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথে’ প্রকাশিত প্রবন্ধটি তুলে ধরা হলো৷

কোভিড -১৯ জনিত হাসপাতাল বর্জ্যঃ বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট

চিকিৎসা বর্জ্য বৈশ্বিক পরিবেশগত স্বাস্থ্যের জন্য একটা হুমকি , বিশেষত বাংলাদেশের মত নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশের জন্য । ধারণা করা হয় , সারাবিশ্বে কমপক্ষে ৫.২ মিলিয়ন মানুষ , যেখানে ৪ মিলিয়ন শিশু প্রতি বছর অপরিশােধিত চিকিৎসা / হাসপাতাল বর্জ্যজনিত বিভিন্ন রােগে মৃত্যুবরন করে । করােনা ভাইরাস -২ যা SARS- CoV – 2 সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত হাসপাতাল বর্জ্যসমূহ জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য অন্যতম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্যকর্মী ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মীদের মাঝে ভাইরাসটি প্রকোপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে ।

করােনা সংক্রামণের আগে থেকেই বাংলাদেশ হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছিল । করােনার কারণে হাসপাতাল বর্জের পরিমাণ হঠাৎ আরও বড়তে শুরু করে । বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৫৪ টি সরকারি এবং ৫০৫৫ টি বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ১৪২,৯০৩ টি রােগী – শয্যা আছে । পাশাপাশি প্রায় ৯,০৬১ টি রােগ নির্ণয় কেন্দ্র আছে । সবমিলে ব্যাপকহারে হাসপাতাল বর্জ্য তৈরি হচ্ছে । দেশের রাজধানী ঢাকার যেকোনাে একটি হাসপাতালের শয্যা থেকে দিনে গড়ে প্রায় ১.৬৩ থেকে ১.৯৯ কেজি চিকিৎসা বর্জ্য তৈরি হয় । ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে , করােনার কারণে সারাদেশে অন্তত ১৪,৫০০ টন হাসপাতাল বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে ,যা নিঃসন্দেহে সংক্রামণের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়ে যাচ্ছে । শুধুমাত্র ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০৬.২ টন করােনা – জনিত বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে । কিন্তু এই বর্জ্যের অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা পরিবেশের জন্য হুমকি , যা দীর্ঘমেয়াদী এবং অনাকাঙ্ক্ষিত জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াবে , এমনকি ভাইরাসটির পুনরুত্থানের উৎস হিসাবে কাজ করতে পারে ।

২০০৮ সালে বাংলাদেশে হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার নিয়ম প্রচলন করা হলেও সরকারি – বেসরকারি হাসপাতাল , এমনকি বসতবাড়িতেও নিরাপদ গ্রহণযােগ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি । প্রায়ই বাংলাদেশের হাসপাতালগুলাে থেকে উৎপাদিত বর্জ্য অনভিজ্ঞ , অরক্ষিত এবং অসচেতনভাবে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে । সেসব বর্জ্য অননুমােদিত জায়গায় কোনাে রকম ব্যবস্থাপনা নিয়ম ( যেমন , পৃথকীকরণ বা নিরাপদ ধ্বংসকরণ ) না মেনেই অপসারণ করা হয় । ফলে দেশের বর্জ – ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত প্রায় ৪০,০০০ পরিচ্ছন্নতা কর্মী , যারা পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যাতিত কাজ করেন তারা করােনাভাইরাস সংক্রামণের অত্যাধিক ঝুঁকিতে আছেন । মাস্ক , গ্লাভস ও অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের পর যদি নিয়ন্ত্রিতভাবে অপসারণ করা না হয় , তা থেকে ভাইরাস ছড়ানাের ঝুঁকি থেকে যায় । তাছাড়া বসতবাড়ির বর্জ্যও ( যেমন টিস্যু , মাস্ক , গ্লাভস ইত্যাদি ) বর্জ্য- ব্যবস্থাপনা কর্মীদেরকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দেয় । বাংলাদেশে হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রধানত সিটি করপােরেশন , ঠিকাদার বা বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় । কিন্তু , যথাযথ নিরাপদ এবং পরিবেশ – বান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে । তাই , বাংলাদেশের নীতি – নির্ধারক পর্যায় থেকে হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব প্রদান জরুরী হয়ে পড়ছে । অন্যথায় করােনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে ।

মতামত দিন
Loading...