ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কি এবং প্রতিরোধে করণীয়

আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার রিজভী

0

বর্তমানে বহুল আলোচিত রোগের নাম ডায়াবেটিস ।আমাদের চারপাশে অনেক লোক এই রোগে ভুগছেন। শরীরের প্রায় সব অঙ্গের ওপর ডায়াবেটিসের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়। নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্রও এর বাইরে নয়। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি তার মধ্যে অন্যতম। শরীরের প্রায় সব অঙ্গই ডায়াবেটিসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্রও ডায়াবেটিস এর কারণে ক্ষতিগ্রস্তহয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে ধীরে ধীরে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দেয়। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কিন্তু একদিনে বা একমাসে দেখা যাবেনা । দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে সেখান থেকে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দেয়।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কি?

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হল একটি স্নায়বিক ব্যাধি যা সাধারণত ডায়াবেটিসের জটিলতা হিসাবে দেখা যায়। প্রায় 50 শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীর নিউরোপ্যাথি আছে। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নিম্নলিখিত ধরনগুলির হতে পারে:
যেমন : একজন হয়তো বলল, ‘আমি রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় খড়কুটো/ পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটলাম।’ আবার কেউ কেউ বলে, ‘হাঁটার সময় আমার পা থেকে স্যান্ডেল পড়ে গেল, আমি টের পেলাম না।’ এই যে টের না পাওয়া, এ ব্যাপারটা হলো সেনসরি নিউরোপ্যাথি।

মটরের ক্ষেত্রে কী হয়? দুর্বলতা হয়। তবে প্যারালাইসিস হয় না। অনেকেই ভয় পায় এখানে, প্যারালাইসিস হতে হলে তো স্ট্রোক করতে হবে। দুটো পায়ের যদি স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে হাঁটায় সমস্যা হতে পারে।এখানে দুর্বলতা বেশি হয়।

অটোনমাস নিউরোপ্যাথি যা স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে আপনার শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে।আরেকটি হলো পায়ের স্নায়ুর সমস্যার জন্য পায়ে আলসার হয়, ঘা হয়। আরেকটি হলো যৌন সমস্যা। তবে এটা অনেকটা মানষিক।

প্রধান উপসর্গগুলি কি কি?

পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির ক্ষেত্রে:
১.পায়ের পাতার মধ্যে সংবেদন হারানো বা জ্বলন বা প্রচন্ড ব্যথা
২.ভারসাম্য বা সমন্বয় হারানো
৩.স্পর্শে সংবেদনশীলতা বর্ধিত হওয়া

অটোনমাস নিউরোপ্যাথির ক্ষেত্রে:
১.হজমে সমস্যা
২.রক্তচাপ কমা
৩.অজ্ঞান হওয়া এবং মাথা ঘোরা
৪.অতিরিক্ত ঘাম
৫.ব্যথার উপলব্ধি হ্রাস

অন্যান্য :
উরুর ব্যথা,পিঠের নিচে প্রচন্ড ব্যথা,বুকের ব্যথা,দৃষ্টির সমস্যা, বিশেষ করে চোখের ফোকাসে,শোনার সমস্যা।

প্রধান কারণগুলি কি কি?

যে কয়েকটি কারণ দায়ী সেগুলি হল:
১.রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ার ফলে স্নায়ুতে রাসায়নিক পরিবর্তন হয়, ক্ষতিকর স্নায়ু এবং রক্ত ধমনীগুলি যা এই স্নায়ুতে পুষ্টি বহন করে।
২.ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির জেনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়াও হতে পারে।

কি কি চিকিৎসা আছে?
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা হচ্ছে মূলত ৩ টা ইংরেজি ডি (D)
ক) ডায়েট (Diet)
খ) জীবন যাপন (Discipline)
গ) ওষুধ (Drug)
প্রতিরোধই হচ্ছে মূলত ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির মূল চিকিৎসা।
মনে রাখতে হবে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণযোগ্য ব্যাধি।
ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথির চিকিৎসা হলো:
১.কঠোরভাবে যথাযথ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
২.নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা।
৩.নিউরোপ্যাথির উপসর্গগুলোর চিকিৎসা। যেমন_ ব্যথার ওষুধ, নিউরো ভিটামিন ইত্যাদি।
৪.রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ব্যথা-উপশমক ওষুধগুলি দিয়ে রোগীর ব্যথা এবং অস্বস্তি সারানো হয়। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ, টপিকাল ক্রিম, বৈদ্যুতিক স্নায়ু উদ্দীপনা থেরাপি, রিলাক্সেশন থেরাপি, এবং আকুপাংচার স্নায়ুতে ক্ষতি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।

মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিক রোগী নিজেই নিজের প্রধান চিকিৎসক এবং মেন্টর।।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

মতামত দিন
Loading...