করোনায় বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ!

মনোজিৎ কুমার রায়

0

বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ এই নিয়ে ছোট বেলা থেকেই অনেক কথা শুনতে হয়েছে।এ প্রসঙ্গে আর না যাই। তবে করোনা যে এখন অভিশাপ তা বলাই বাহুল্য।করোনাতে বিজ্ঞানের ভুমিকা নিয়ে একটু আসি।

জীবাণুমাত্রই  ভালো।কথাটি অস্বাভাবিক মনে হলেও এটাই সত্য। ১০০ ভাগের ৯৫ ভাগ জীবাণু ভালো আর মাত্র ০৫ ভাগ  জীবাণু খারাপ।আর এই ০৫ ভাগ নিয়েই আমাদের এতো যুদ্ধ।ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া বিজ্ঞানের কোন আবিস্কার নয় তবে বিজ্ঞানের মাধ্যমেই জীবাণুর গতিপথ আর তাদের পথের কাটা হওয়ার পথ আবিস্কার হয়েছে।করোনা ভাইরাস ল্যাবে তৈরি নাকি পশু-পাখি থেকে এসছে সেই প্রসঙ্গে আমরা না যাই। উৎপত্তি যাই হোক না কেন এর ধারক এবং  বাহক কিন্তু এখন আমরাই মানে মানুষ।কাজেই আমাদের গতিপথ বদলাতে হবে।

এবার আসি করোনায়  বিজ্ঞানের কিছু অবদান নিয়ে। হাত ধোয়া নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ,ইউনিসেফ সহ সরকারী-বেসরকারী ভাবে বার বার বললেই কজনই বা আমরা কর্ণপাত করতাম।করোনা এসে আমাদের হাত ধোয়া শিখিয়েছে।শুধুমাত্র পানি দিয়ে হাত ধুয়ে কখনোই জীবাণু রোধ সম্ভব নয় । দরকার জীবাণুনাশক।আর তাইতো হ্যান্ড স্যানিটাইজার /হ্যান্ড ওয়াশ বহুল্ভাবে প্রচলিত।সাধারন সাবান বা ডিটারজেন্ট পানিও কিন্তু সমানভাবে কার্যকর।

পিসিআর সম্পর্কে আমরা কজনই বা জানতাম।করোনা আমাদের চিনিয়েছে। বিজ্ঞান সমৃদ্ধ চেতনাকে জাগ্রত করতে করোনা কিছুটা পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে।অণুজীববিজ্ঞান বিষয়ে সম্যক ধারণা করোনার আগে কজনই বা জানতো। ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে কতই না হাসি ঠাট্টা।যা দেখা যায় না,বুঝা যায় না সেটা নিয়েই আবার পড়াশুনা।সেটা নিয়েই অনেকেরই অনার্স-মাস্টার্স- পিএইচডি। ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়া শুধুমাত্র ঠান্ডা-জ্বর করতে পারে এমটাইতো অনেকেরই ধারনা ছিল।এরা যে প্রানঘাতি হতে পারে সেটা কজনই বা বিশ্বাস করতো। ০৫ ভাগ খারাপ জীবাণুর সাথে যুদ্ধ আজ নতুন কিছু নয়,তবে আমাদের বিজ্ঞান চেতনায় অবিশ্বাস, অসচেতনা আর উৎকর্ষ সাধনের অভাবে জীবাণুগুলো আরোও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।এদের সাথে যুদ্ধে জয় লাভ করাটা খুব একটা সহজবোধ্য বিষয় ও নয়।জীবদেহে বসবাসের সাথে সাথে তারা যেমন বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছে ঠিক তেমনি পরিবেশের সাথে তারা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই জীবাণুর সাথে দীর্ঘমেয়াদী লড়তে শুধুমাত্র হ্যান্ড স্যানিটাইজার /হ্যান্ড ওয়াশ/সাবান ই যথেষ্ট নয়,দরকার স্বাস্থ্যবিধি মানার সদিচ্ছা আর জীবাণুরোধের নিয়মিত অভ্যাস।

কলেরা-যক্ষা-ডেঙ্গু-নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগ ছিল,আছে এবং থাকবেও।করোনা ভাইরাস ও একেবারে নির্মূল সম্ভব নয়।ইতিমধ্য তারা অনেকবার তাদের পরিবর্তন এনেছে।তাই বলে ঘরে বসে তো আর জীবন –জীবিকা নির্বাহ সম্ভব নয়।করোনা নিয়েই যেখানে বাঁচতে হবে সেখানে বাঁচার জন্য কিছু কৌশল তো বেছে নিতেই হবে।

‘করোনা চলে গেছে’, করোনা আর নেই’, ‘আমার আন্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে’,ভাক্সিন তো এসেই গেছে ‘ ‘এতোদিন যেহেতু হয়নি আর হবার চান্স নেই’ ইত্যাদি ইত্যাদি ভাবনা থেকে পুরো সরে আসতে হবে। আমি আগেও বলেছি,জীবাণুর সাথে যুদ্ধে জয় লাভ করতে হলে তার সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে হবে। সবল আর দুর্বল দিক জানতে হবে।তবেই তো যুদ্ধে জয়ী হোয়ার সুযোগ থাকে।এজন্য সবার প্রথমে দরকার বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন করা,বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধি করা। অণুজীববিজ্ঞান সম্পর্কে সবাইকে অনার্স-মাস্টার্স- পিএইচডি করতে হবে তা নয়, প্রাথমিক পর্যায় থেকে জীবাণু সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়ে সবাইকে বড় করতে পারলে এই স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে বার বার বলতে হবে না।

পরিশেষে বলা যায় যে, বিজ্ঞানের আলোকে দক্ষ জনশক্তি আর পরিচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করার কোন বিকল্প নেই।দেশে যারা জীবাণু নিয়ে কাজ করছে,জীবাণুর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে রাত-দিন গবেষনা করে যাচ্ছে,ভ্যাক্সিন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিজ্ঞান চর্চায় দেশকে সমৃদ্ধি করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,তাদের সাধুবাদ জানিয়ে আমাদের সকলের সঠিক স্বাস্থ্যবিধি চর্চায় মনোনিবেশ ছাড়া করোনা সহ সকল জীবাণুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।মনে রাখা দরকার,আমাদের মুখের বুলিতে নয়,শুধুমাত্র সচেতনতা এবং দীর্ঘমেয়াদী বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনায় আসবে আমাদের সুনিশ্চিত জয়।সেই আশায়-প্রত্যাশায় রইলাম।

লেখক: মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ঔষধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত

মতামত দিন
Loading...