করোনা কি আর আছে ?

কোভিড

করোনা তো মোটামুটি এখন আর আমাদের মাঝে নেই বললেই চলে? বাস্তবে আমাদের চলার পথে এই প্রশ্নটাই বারবার উঁকি মারছে।চলুন কিছু ঘটনা দেখি

ঘটনা-১ঃ 

মুদির দোকানে গেছি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনতে। বরাবরের মতই দড়ির সামনে দাঁড়াব এই ভেবেই প্রস্তুতি নিয়ে আছি ,সাথে তো গোল মার্ক করা জায়গাতে তো দাঁড়াতেই হব। হঠাৎ মনে হল কি যেন একটা মিস করছি।আগে ছিল কিন্তু এখন নেই। তাই তো দোকানির সামনে সেই দড়ি কই! আর তালে তালে পাশের কাষ্টমারকে দেখে আমি যে কখন সেই মার্ক করা জায়গা থেকে সরে এসেছি বুঝতেই পারিনি।সংগদোষে স্বভাব নষ্ট আর কি।

আমিঃ ভাই, দড়ি কই?

দোকানদারঃ ভাই দড়ি দিয়া আর কি হবে, করোনা কি আর আছে ? দড়ি দেখলেই কাষ্টমার আরও কথা শুনায়।তাই আজ খুলে দিয়েছি।

আমিঃ তারপরেও ভাই আপনারা তো অনেকটা রিস্কে পড়ে গেলেন? কদিন পর খুললে হত না?

দোকানদারঃভাই, আপনি হয়তো ঠিক বলছেন কিন্তু দড়ি দিয়ে আর কজন কে বাঁধবেন, আমার এ দড়ি দিয়ে হয়তো আমার সেলসম্যানদের সেফ করার চেষ্টা করবো কিন্তু জাতীয়ভাবে দড়ির যে গিট্টু খুলে যাচ্ছে তা বাধবেন কিভাবে ভাই!

আমি অব্যক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আর বলার কিছু পেলাম না। বুঝলাম জীবাণু নিয়ে মানুষের গবেষনা হয়তো শেষ পর্যায়ে।  কিছু বললে হয়তো  জীবাণু নিয়ে আমাকেই দু চার কথা শুনিয়ে দিবে

ঘটনা-২ঃ

ঔষধের দোকানে গেছি হ্যান্ড স্যানিটাইজার  কিনতে। দোকানে প্রচুর হ্যান্ড স্যানিটাইজার  দেখে আমার তো চোখ ছানাবড়া।স্যাভ্লন-হেক্সিসল দেখে আমি তো অবাক! মাস্কবিহীন দোকানদারকে  দেখে মেজাজ আমার পুরোই চড়া।

আমিঃ ভাই, এতো হ্যান্ড স্যানিটাইজার  কিভাবে আসলো ?যেখানে আগে আপনার দোকানে দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনে নিতাম, আর এখন দেখি অনেক ভালো ভালো কোম্পানির প্রডাক্ট রয়েছে।ঘটনা কি ভাই?

দোকানদারঃ ভাই এখন লসে আছি। মাল আর চলে না।

আমিঃ সাবান দিয়েই তো জীবাণু মরে, খালি খালি দাম দিয়ে আপনার এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার  কেন কিনবে? তাই হয়তো চলছে কম।

দোকানদারঃ না ভাই, আমার দোকানে তো আমি সাবান ও বিক্রি করি। সাবানের ও সেল কম।মানুষ এখন আর তেমন ব্যবহার করে না।

আমিঃ কিছুই ব্যবহার না করলে তো বিপদ। শুধু পানি দিয়ে হাত ধুয়ে কি আর জীবাণু মরবে!কে কাকে বোঝাবে।

দোকানদারঃ হয়তো মরছে।নইলে হঠাত করে আমাদের করোনা নিয়ে ভয়-ভীতি কমে গেল কেন!আগের মত অবস্থা হলে ঠিকই সেল বাড়তো।আপনি কি নিবেন বলেন,কথা

আমি বলার মত কিছু খুজে পেলাম না।পাশের কাষ্টমারদের মাস্ক থুতনির নিচে পরতে দেখে তাকে আর বুঝানোর দুঃসাহস পেলাম না।কেমন যেন নিজেকেই অজ্ঞ মনে হল।

আর বাজারে আমার ডাবল মাস্ক দেখে অনেকেরই আড় চোখে তাকানো টা কেমন যেন নিজেকে অসহায় বোধ হল। ফুটবল-ক্রিকেট যেমন একা খেলে জেতা যায় না, তেমনি জাতিগত ভাবে আমরা সবাই এক রেখায় না দাঁড়ালে শুধুমাত্র সরকার বা জাতির  এক অংশ  ঠিক থাকলেই কি আমরা জিততে পারবো!

সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

লেখক: মাইক্রোবায়োলজিষ্ট , দেশিয় ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *