করোনা ভাইরাস ও ভ্যাক্সিন

স্বপ্নীল আকাশ

0

রোনা ভাইরাস, একটি অণুবীক্ষণিক জীব যা সময়ের সাথে সাথে বিশ্বজুড়ে মহামারী হয়ে উঠেছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সসহ ইতিমধ্যে পুরো বিশ্ব  এই প্রানঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এই মারাত্মক রোগের কোনও নিরাময় বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার  করা যায়নি। বিভিন্ন দেশের  বিজ্ঞানীরা ভ্যাক্সিন  তৈরি করার জন্য কঠোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন । এখনও কোনো ভ্যাক্সিন পুরোপুরি কার্যকর সাফল্য পাওয়া যায়নি।

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে  বিশ্বের প্রতিটি দেশ লক-ডাউন দেওয়া হচ্ছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শত শত শিল্প/মিলস/ফ্যাক্টরি এমনি কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ছে শত শত মানুষ।     ইতোমধ্যে প্রায় সাত লাখ মানুষ মারা গেছেন। অনেকের মনেই এখন একটিই প্রশ্ন  ভ্যাক্সিন তৈরি করা হলেই কি এই মারাত্মক ভাইরাস পৃথিবী থেকে অদৃশ্য   হয়ে যাবে? এটা এখনো নিশ্চিত করে কেও বলতে পারবে না।   তবে আরও একটি খারাপ সংবাদ রয়েছে,  সেটি হলো যদি কার্যকর ভ্যাক্সিন দ্রুত আবিষ্কার না যায়, তাহলে    ভাইরাস প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিখবে।

বিজ্ঞানীরা করোনভাইরাসের ভ্যাক্সিন আবিস্কারের  জন্য দিনরাত কাজ করছেন। এই প্রচেষ্টা কয়েকটি দেশে পৃথকভাবে করা হচ্ছে, তবে সুসংবাদটি এখনও পাওয়া  যায়নি। বেশিরভাগ বিজ্ঞানীদের মতামত , ভ্যাক্সিন কার্যকর  প্রমাণিত হলেও মানুষের কাছে পৌঁছাতে কমপক্ষে  এক বছর বা আরো বেশি সময় লাগতে পারে।

কিন্তু যদি ভ্যাক্সিনটি কখনও আবিষ্কার না হয় কী হবে তখন? পৃথিবী কি ধ্বংস হয়ে যাবে?
বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের সোজা উত্তর দিয়েছেন উত্তরটি  হলো- যদি ভ্যাক্সিন আবিষ্কার না  হয় তবে মানুষ  এই ভাইরাসের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবে। শরীর প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে, যার মাধ্যমে লোকেরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পাররে এবং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবে। এখন আরেকটি প্রশ্ন আপনাদের মনে আসতে পারে, তাহলে কী   ভবিষ্যতে কোনো একদিন  ভ্যাক্সিন ছাড়াই ভাইরাসটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে? বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অবশ্যই না; সম্পূর্ণ নির্মূল শুধুমাত্র টিকা দিয়েই সম্ভব অন্যথায়, করোনাভাইরাসের শক্তি অনেক হ্রাস হতে পারে। তবে কম বেশি লোক সর্বদা আক্রান্ত হবে, অনেকেরই মৃত্যু অব্যাহত থাকবে।

করোনা ভাইরাসের  বিস্তার রোধ করা কি সম্ভব?
সাধারণভাবে, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীব  দ্বারা  সংক্রামক রোগগুলির ক্ষেত্রে দুটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ, একটি হ’ল অণুজীবের সংক্রমণ এবং অন্যটি হ’ল হত্যা করার ক্ষমতা।নোভেল  করোনার ভাইরাসটি নতুন, তাই বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের কাছে এই ভাইরাস সম্পর্কে খুব বেশি  তথ্য নেই। আবার দেখা যাচ্ছে যে মিউটেশনের কারণে করোনার ভাইরাস সময়ে সময়ে তার চরিত্র পরিবর্তন করে চলেছে।বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই নোবেল  করোনা ভাইরাস পৃথিবীর একেক দেশে একেক রকম চরিত্র নিয়ে আবির্ভাব হচ্ছে এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ও হত্যা করার ক্ষমতাও আলাদা।

তাহলে  করোনার ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা আর কখনো কি সম্ভব নয়?

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বখ্যাত ভাইরাসবিদ গাইডো ভ্যানহাম (Guido Vanham)বলেছিলেন:ভ্যাক্সিন না আসা পর্যন্ত “ভাইরাসটির বিস্তার  বন্ধ করা সম্ভব নয়। যতক্ষণ না আমরা এই ভাইরাসের জন্য প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে না পারি ততক্ষন , ভাইরাসটি ছড়িয়ে যেতে থাকবে। “তাই করোনা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য ভ্যাক্সিন অনেক জরুরি।

এখনো  করোনার ভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে অনেক দেশে লকডাউন চলছে । ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল,ইতালি, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশগুলো রীতিমত মৃত্যুপুরিতে পরিনত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।এর অন্যতম কারণ  এই রোগের কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাকসিন না থাকা।বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা কীভাবে দ্রুত কার্যকর এবং নিরাপদ টীকা বা ভ্যাকসিন তৈরি করা যায়  তার জন্য  চেষ্টা করছেন।

অনেক ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা বা  ক্লিনিকাল ট্রায়াল মানবদেহে সমাপ্তির কাছাকাছি, তাই সম্ভবত আগামী কয়েক  মাসের মধ্যে আমরা কার্যকর ওষুধ পেয়ে যাব।  শুধুমাত্র ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হলেই  কেবল বিশ্বজুড়ে কয়েক মিলিয়ন মানুষ বাঁচবে।
তবে আমি  ফার্মেসী বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলতে পারি; যদিও ওষুধের মাধ্যমে রোগীকে নিরাময় করা যায়, তবুও, এটি রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। তাই আক্রান্ত রোগীকে ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় করা গেলেও বিশ্ব থেকে   সংক্রামক ভাইরাস নির্মূল করার জন্য কার্যকর এবং নিরাপদ ভ্যাকসিন প্রয়োজন  । শুধুমাত্র টিকা বা ভ্যাক্সিন ই বিশ্বব্যাপী 700 বিলিয়ন মানুষকে বাঁচাতে এবং পৃথিবীতে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে।

করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন কীভাবে তৈরি করা হচ্ছে ?

করোনার ভাইরাস নির্মূলে ভ্যাকসিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য, তাই এখনই বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি  কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার দিকে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে অর্ধশতাধিক দল বা সংস্থা এই ভ্যাকসিনটি আবিষ্কার করতে কাজ করছে। বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা এবং সুরক্ষা পরীক্ষা করার জন্য মানবদেহে ক্লিনিকাল ট্রায়ালও শুরু হয়েছে।

ভ্যাক্সিনেশন  এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে মানব দেহ অ্যান্টিবডি তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে  এবং অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে  যখন ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পরে প্রবেশকৃত ভাইরাসকে  ধ্বংস করে দিবে। বিজ্ঞানীরা বর্তমানে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। (উপরোক্ত তথ্যগুলো গুগল + অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত)
পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপ:

৩) নিষ্ক্রিয় করোনার ভাইরাস বা করোনার ভাইরাসের অংশ
ভ্যাক্সিন তৈরির  জন্য একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস বা এর কিছু অংশ একটি মানবদেহে প্রবেশ করানো  হবে। এবং এই নিস্ক্রিয় ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে  এন্টিবডি তৈরি করবে। এটি বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকর উপায় যা বর্তমানে ব্যবহৃত বেশিরভাগ ভ্যাকসিনগুলি এই ধরণের। তবে   উৎপাদন ও পরিশোধনের জন্য দক্ষ লোকবল  এবং উন্নত প্রযুক্তির  প্রয়োজন হয়।

২) ডিএনএ ভিত্তিক  ভ্যাকসিন
মাইক্রোবের জিনের  অ্যান্টিজেন যখন শরীরে প্রবেশ করানো হয়।  এই জিনের  অ্যান্টিজেনগুলোকে  শরীরে থাকা ডিএনএ গুলো  গ্রহণ করে। ডিএনএ তখন সেই কোষকে অ্যান্টিজেন তৈরি করতে নির্দেশ দেয়.।পরবর্তীতে কোষটি অ্যান্টিজেনকে তৈরি  করে এবং তাদের পৃষ্ঠে প্রদর্শন করে. যদিও টিকা একটি জটিল এবং কঠিন প্রক্রিয়া, এটি তুলনামূলকভাবে সহজ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের।

৩) আরএনএ ভিত্তিক করোনার ভাইরাস ভ্যাকসিন,

ভাইরাসটির আরএনএ একটি নির্দিষ্ট মাধ্যমের  কোষে প্রবেশ করানো হয়। পরবর্তীতে  প্রোটিন অনু সংশ্লেষ করে নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন তৈরি করে, যা তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অ্যান্টিবডি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটিও তুলনামূলক সহজ প্রক্রিয়া।

ভ্যাকসিন কখন আসতে পারে?
বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই কোটি   মানুষ করোনার ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে এবং সাত লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে তবুও ভাইরাস সংক্রমণের গতির সাথে মৃত্যু কোথায় শেষ হবে তা কেউ বলতে পারে না। বিজ্ঞানীরা আরও আশঙ্কা করেছেন যে সঠিক ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কার না করা গেলে ভাইরাসটি পৃথিবীতেই থেকে যাবে। সেজন্য , এখন সবার মুখে একটি প্রশ্ন, ভ্যাকসিন কখন আসবে?

অনেক দেশ এবং সংস্থা  কোভিড -১৯ এর জন্য একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে চেষ্টা করছে। কিছু  ভ্যাক্সিন  মানবদেহের পরীক্ষাও শুরু করেছে তবে এখনও অনেক সময় প্রয়োজন মানবদেহে পরীক্ষার পরে, প্রথমে দেখতে হবে এটি  নিরাপদ কিনা।তারপর আপনার দেখতে হবে যে শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করছে কিনা এবং এটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা।

লেখক: ফার্মেসী বিভাগ, ড্যাফোডিল  ইন্টারন্যাশনাল  ইউনিভার্সিটি

মতামত দিন
Loading...