শিক্ষার্থীদের ভাবনায় বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস

চৈতি দেবনাথ দীপা

0

২৫শে সেপ্টেম্বর ফার্মাসিস্টদের জন্য বড়ই গৌরবের একটি দিন। কারণ প্রতিবছর এই দিনটিই ‘বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হয়। তবে করোনা মহামারীর কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর একটু ভিন্নভাবে উদযাপিত হচ্ছে। ২০২০ সালে দশম বারের মতো পালিত হচ্ছে এ দিবসটি। ফার্মাসিস্টরা দেশে বিদেশে ঔষধ তৈরির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর মতো দূর্যোগের সময়েও ফার্মাসিস্টরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্টদের অন্তর্ভুক্তি নেই। আর সমাজ তো এখনও ফার্মাসিস্ট নামক একটি পেশার সাথে পরিচিত হতেও ব্যর্থ। গুরত্ব দেওয়ার কথা না ই বা বললাম। তাই ফার্মাসিস্ট পেশায় কর্মরত ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান এবং সাধারণ মানুষকে এ মহান পেশা সম্পর্কে আরও সচেতন করতে ২০১০ সাল থেকে সারা বিশ্বে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে

বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কী অনুভূতি এ ব্যাপারে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থী  চৈতি দেবনাথ দীপা

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিয়া আফরিন বলেছেন, বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে সকলকে সঠিক ধারনা দেয়া এবং এ পেশায় নিয়োজিতদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষে প্রতিবছরের মতো এবছরেও পালিত হচ্ছে, ” বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস “। তবে করোনাকালীন কঠিন সময়ে পালিত হচ্ছে এবারের দিবসটি। ফার্মেসি বিভাগে অধ্যয়নরত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হিসাবে এবারই প্রথম দিবসটির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “Transforming Global Health “। বিশ্বস্বাস্থ্য রূপান্তর এর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করি। অনান্য দেশের ন্যায় শিল্পনির্ভর ফার্মেসি চর্চার পাশাপাশি কমিউনিটি ও হসপিটাল ফার্মেসি চালু করার মাধ্যমে ফার্মাসিস্টদের উপস্থিতিতে সমন্বিত সাস্থ্যসেবা শুরু করা গেলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স এর মত অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা উপেক্ষা করে ঔষধের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত সম্ভব। এ দিবসটি পালিত হওয়ার মাধ্যমে এ শিল্পের আরো প্রসার হবে এবং ফার্মাসিস্টরা পাবে যথাযথ সম্মান সেই কামনা করি।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনয় সরকার তার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন এভাবে, ফার্মাসী শব্দটার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ ছিলো এই সাব্জেক্টে ভর্তি হওয়া। ফলে একজন ফিউচার ফার্মাসিস্ট হিসেবে আমার কাছে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসের তাৎপর্য অনেক। আমাদের কাজের গুরুত্ব উল্লেখ করে এই দিনটি আমাদেরকে সকলের নিকট তুলে ধরতে সাহায্য করে। একজন ফার্মাসিস্টের হাতে সমগ্র জাতির স্বাস্থ্যভার অর্পিত থাকে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে এদেশের মানুষের প্রানের নিরাপত্তা স্বরুপ হসপিটাল ফার্মাসী বাস্তবায়নের ঘোষনা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আশা করছি।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষার্থী সানান রহমান অভিক হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়ন ও বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস সম্পর্কিত কিছু মতামত প্রকাশ করেন, কথায় আছে দশের লাঠি একের বোঝা; আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এই প্রবাদ এর অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাটাকে সহজ করার পরিবর্তে যেন দুর্বিষহ করে তুলেছে। রোগ নির্ণয় করবে ডাক্তার আর ওষুধ নির্ধারণ করবে ফার্মাসিস্ট; এ সাধারণ সত্যকে মেনে না নেওয়ায় prescription error এবং proper medication এর অভাবে মানুষ রয়েছে মৃত্যু ঝুঁকিতে।চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাক্তারের পাশাপাশি যেখানে ফার্মাসিস্টদের সমান গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকার কথা সেখানে দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়গুলো হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়নের ক্ষীণ সম্ভাবনাকে যেন আরো ক্ষীণ করে দেয়। বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস কে সামনে রেখে আমাদের সবাইকে আরো বেশি উদ্যোগী হয়ে দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ফার্মেসি পেশার গুরুত্ব অনুধাবনের মাধ্যমে হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।

 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন রায় বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উদযাপনের সাথে বাংলাদেশে হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়নের সংযুক্ততা সম্পর্কিত তার মতামত প্রকাশ করেন, ২৫ সেপ্টেম্বর “বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস “যা সকল ফার্মাসিস্ট দের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।প্রতিবছরের ন্যায় আবার ও এসেছে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমরা এই দিনটি শুধু পালনের মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকি কিন্তু বাস্তবে এই দিনটির আসল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতেই ভুলে যাই। ফার্মাসিস্টদের একটি বড় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্র হলো হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে রোগীর চিকিৎসার মানের উন্নয়ন করা এবং রোগিদের জন্য নিরাপদ ওষুধ সেবন নিশ্চিত করা । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে,২০১৮ সালে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট দের নিয়োগ ব্যাপারে গ্যাজেট প্রকাশিত হলেও তার আজোও বাস্তবায়ন ঘটেনি। হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়ন আমাদের করনীয় : (১).স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সকল শিক্ষা কেন্দ্রে হসপিটাল ফার্মেসি নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। (২).স্কুলের পাঠ্যবইয়ে অন্যান্য পেশার মতো ফার্মাসিস্টদের স্বস্থ্যখাতে ভূমিক, তাদের গুরুত্ব ইত্যাদি এসব বিষয় পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। (৩).দেশের মানুষের চিকিৎসার মান উন্নয়নের স্বার্থে “হসিপিটাল ফার্মেসি” বাস্তবায়নে আন্দোলনে নামতে হবে। (৪).বেশি বেশি করে টিভি চ্যানেল, সংবাদ মাধ্যমে এ হসপিটাল ফার্মেসি কি এবং তার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রতিবেদনে পেশ করতে হবে। (৫). টিভি চ্যানেলএ হসপিটাল ফার্মেসি বিষয়ক বেশি বেশি বিভিন্ন প্রোগ্রাম এর আয়োজন করতে হবে। (৬).আমদের সকলকে একতাব্ধ হয়ে হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়নে সকল প্রদক্ষেপ নেয়া দরকার। সবশেষে দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের জন্য হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবয়িত হওয়া আজ শুধু সময়ের দাবি। সমগ্র বিশ্বে এখনও পর্যন্ত করোনা মহামারী বিরাজমান।

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সঞ্জয় দেব করোনাকালীন ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা ও বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উদযাপন সম্পর্কিত তার মতামত প্রকাশ করেছেন, ফার্মাসিস্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির অন্যতম একজন সহায়ক। বর্তমানের কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য তাঁরাই দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের গ্লোব বায়োটেক নামক একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিও ভ্যাকসিন এর গবেষণায় সারা ফেলেছে। এই অজানা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সাহস যুগিয়ে এবং পৃথিবীকে সুস্থ করার এক কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাঁরা অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে। কিন্তু, আমাদের দেশে ফার্মাসিস্টদের কোনো যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয় না যা আমরা ইউরোপীয় মহাদেশে দেখতে পাই। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামোতে ফার্মাসিস্টদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো পদের ও ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো হসপিটাল ফার্মাসিস্ট। সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে এই সমস্যার সমাধান করাও কঠিন। প্রযুক্তির এই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে এবং উন্নত দেশের স্বাস্থ্য সেবার ধরন অনুসরণ করে আমাদের দেশেও ফার্মাসিস্টদের যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ‘বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস’ উদযাপন করা সার্থক হবে।
মতামত দিন
Loading...